সীতাকুণ্ডে সমুদ্রসৈকতের নামে মরণফাঁদ, নিখোঁজ ২ ছাত্র

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়ায় গড়ে তোলা অবৈধ পর্যটন কেন্দ্রের আওতাধীন সমুদ্রসৈকত যেন এক মৃত্যুকূপ। দর্শনার্থীরা সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গেলে চরম নিরাপত্তাহীনতা তাদের তাড়া করে ফেরে। ইতোমধ্যে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটলেও হয়নি কোনো প্রতিকার। সর্বশেষ গতকালও সাগরে বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন দুজন। তারা হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শানারপাড়া এলাকার শানারপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র নাজমুল হাসান ইমন (১৯) এবং একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র রাজ (১৬)। তারা পরস্পর খালাতো ভাই। দুই বছর আগেও এই সৈকতে নিখোঁজের ঘটনা ঘটে।

এছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে আহাদ হোসেন (১৯), রবিন (১৯), সজীব ইসলাম (১৮), টুটুল (১৯), পিয়াল (১৬), হোসেন (১৭) ও আরিফুর রহমানকে (১৬)।  

এদিকে নিখোঁজের পর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন অবৈধ পর্যটন কেন্দ্রটি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়ায় বঙ্গোপসাগরের তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে এসে সাগরে ডুবে নিখোঁজ হন আপন দুই খালাতো ভাইসহ নয়জন। পরে সাতজনের খোঁজ পেলেও দুজনের খোঁজ মেলেনি। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ও চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের ডুবুরি দল যৌথ উদ্যোগে অনুসন্ধান করেও তাদের খোঁজ পায়নি। উদ্ধার ব্যক্তিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রাণে বেঁচে যাওয়া কলেজছাত্র সজীব ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা ঢাকায় বসবাস করি। ফেসবুকে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন পর্যটন স্পট সম্পর্কে জানতে পারি। বিকেলে বাঁশবাড়িয়া বিচে আমরা ৯ বন্ধু গোসল করতে নামি। কিন্তু সাগরের কতটুকু দূরত্বে গভীরতা তা আমরা জানতাম না। এখানে কোনো লাল পতাকা ছিল না গভীরতার। বিচ আছে কিন্তু লাল পতাকা না থাকায় আমি আমার দুই বন্ধুকে হারালাম। সেখানে নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো স্পিডবোট, নেই কোনো বয়া। ’ 

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম বলেন, ‘সমুদ্রসৈকতটি অবৈধ। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা এটি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছি। আজ থেকে সেখানে কোনো পর্যটক প্রবেশ করতে পারবে না। কেউ যদি অবৈধভাবে এটি পরিচালনা করতে চায় তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। ’

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. ওয়াশি আজাদ বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা ঘটনাস্থলে আসি। কিন্তু সাগরের গভীরতা দেখে আগ্রাবাদ ডুবুরি দলকে খবর দেওয়া হয়। তারাসহ আমরা প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ওই দুই খালাতো ভাইকে সাগর থেকে উদ্ধার করতে পারিনি। ’

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিচটি অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে, যার কারণে একটি পর্যটন কেন্দ্রে যেসব সুবিধা এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দরকার তা দেওয়া হয়নি। ’

অভিযোগ আছে, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকতটি সরকারি কোনো অনুমোদন ছাড়াই পরিচালনা করে আসছেন স্থানীয় রাজা কাসেম নামে একজন। এখানে ঘুরতে আসা প্রতিজনের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৩০ টাকা করে। এই পর্যটন কেন্দ্রে নেই নিরাপত্তপ্রহরী, নেই বাঁশি দিয়ে সতর্কতার ব্যবস্থা। এই কাসেম রাজা রহস্যজনকভাবে একসময় চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ রুটের মানুষ পারাপারের সাতটি ঘাটের ইজারাদার ছিলেন। পরে নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে। এর পর আদালতের রায় নিয়ে তিনি আবারও একটি ঘাটের ইজারা নেন।