বাংলার মাটি থেকে মহাকাশে যাবে রকেট!

প্রথমবারের মত বাংলাদেশ থেকেই মানুষ নিয়ে মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে রকেট! অথবা নিজস্ব প্রযুক্তিতে মহাকাশে থাকবে ন্যানো স্যাটেলাইট। যা দিয়ে সম্প্রচার, যোগাযোগ, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরবির্তনসহ নানা তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি প্রকৃতি সুরক্ষা ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের বড় মাধ্যম হিসাবেও কাজ করবে ধুমকেতু।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এমন খবর হয়তো বিশ্ব দরবারে অচিরেই পৌঁছাবে। কারন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের নাগপাশ ছিন্ন করা রকেট যান তৈরি করেছে ময়মনসিংহের একদল তরুন বিজ্ঞানী। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘ধুমকেতু’। আর এই ধুমকেতু তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৮ বছরের যুবা নাহিয়ান আল রহমান অলি। অলির এই মস্তিষ্ক গুন দেশকে নিয়ে যেতে পারে মহাকাশ প্রযুক্তি নির্ভরতায়, এমনটাই মনে করছেন প্রযুক্তি বিশারদরা।

নাহিয়ান জানায়, ২০১৯ সাল থেকে ধুমকেতু-০১ নাম দিয়ে চলা এই রকেট প্রজেক্টের শুরু। টানা তিন বছর ধরে চলতে থাকা গবেষণা আলোর মুখ দেখে ২০২২-এ। এখন শুধু উড়ার অপেক্ষায়। সরকার অনুমতি দিলেই উৎক্ষেপন করা হবে।

অবশ্য নাহিয়ানের সাফল্যে ঝুঁড়িতে আরও গৌরব রয়েছে। ২০১৯ এর নভেম্বরে অনুষ্ঠিত টেকফেস্ট নির্বাচনী পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয় সে। তারই ধারাবাহিকতায় ভারতের বিখ্যাত আইআইটি'তে অনুষ্ঠিত টেকফেস্টে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্বও করে। সেখানে শীর্ষ-৫’এ অবস্থান করে সেমিফাইনালিস্ট হয়।   নাহিয়ান জানায়, ধুমকেতু প্রজেক্টটি শুরু হয় ২০১২ সালে। কিন্তু অর্থায়নের অভাবে থেমে যায় স্বপ্ন। তবে দমে যায়নি। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ২০১৭ সালে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের উপর স্নাতক ডিগ্রি নেন। পরে নাছোড়বান্দা নাহিয়ান আবার উদ্ভাবনের নেশায় বুদ হন। তাই সুযোগ থাকলেও দেশের বাহিরে যায়নি সে।  

যৎসামান্য নিজস্ব অর্থায়ন আর ব্যাংক ঋণ এই প্রজেক্টের অর্থের উৎস জানিয়ে এই তরুণ বলেন, আমার এই কাজে সরাসরি সহযোগীতা করে সাইদুর, নাদিম, লিয়ান, আবরার, রিজু, বিন্দু, নাইম, আশরাফসহ অনেকেই।  

কিভাবে শুরু এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিয়ান জানায়, প্রাথমিকভাবে তরল জ্বালানির ইঞ্জিন ডিজাইন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থাভাবে ও করোনা মহামারী সংকটে তরল অক্সিজেনের দাম বৃদ্ধিতে প্রজেক্ট চালানো কষ্টকর হয়ে পরে। ফলে বিকল্প হিসেবে সলিড ফুয়েলের ৪০০ নিউটন ও ১৫০ নিউটন থ্রাস্টের দুইটি ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করে এবং রকেটের আকৃতি কমানো হয়। বর্তমানে ৬ ফুটের দুইটি ও ১০ ফুট উচ্চতার আরও দুইটি প্রোটোটাইপ রকেট লঞ্চ করার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।  

নাহিয়ান যে ল্যাবে টানা তিন বছর গবেষণায় লিপ্ত ছিল সে ল্যাবটির নাম আলফা সায়েন্স ল্যাব। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সংলগ্ন ওই ল্যাবে যাতায়ত ছিল ময়মনিসংহ সিটি করপোরেশনের কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর এম এ ওয়ারেছ বাবু। তিনি জানান, রকেটটি উৎক্ষেপণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সরকারী সহায়তা কামনা করে সহযোগীতার কথা জানিয়েছেন মেয়র ইকরামুল হক টিটু।

এদিকে নাহিয়ানের এই উদ্ভাবনের খবর এখন ছড়িয়ে পড়েছে সাইবার দুনিয়ায়। নাহিয়ানকে নিয়ে নেটিজেনদের ফেসবুক স্ট্যাটাস প্রশংসায় ভাসছে। মন্তব্য, শেয়ার আর ইমোজি বাড়ছে গুণিতিক হারে।  

হাফিজুল ইসলাম অনিক নামের একজন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে তৈরি প্রথম রকেট! আমি গর্বিত আমি ময়মনসিংহের সন্তান। ’ স্ট্যাটাসটির সাথে পোস্ট করা হয়েছে তিনটি ছবি।

news24bd.tv/আলী