মুদ্রাস্ফীতিতে বিশ্ব

মুদ্রাস্ফীতিতে বিশ্ব

অনলাইন ডেস্ক

প্রথমে মহামারি করোনা ভাইরাস, পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতেই টালমাটাল বিশ্বের অর্থনীতি। বলা চলে মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে গোটিা বিশ্বজুড়ে। হু হু করে দাম বাড়ছে সকল পণ্যের।

ব্যয় বাড়ছে সাধারণ জনগণের।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে জেনেভা ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ওয়াল্ড ইকোনোমিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ) ৪৪টি দেশে একটি গবেষণা চালায়। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশগুলোর মুদ্রাস্ফীতি কেমন তা নিয়ে এ গবেষণা করা হয়। যেখানে দেখা যায়, জরিপ চালানো সবকটি দেশেই মুদ্রস্ফীতি হচ্ছে।

প্রথম ছয় মাসে সর্বোচ্চ মুদ্রস্ফীতি হয়েছে তুর্কিয়েতে। দেশটিতে ৫৪ দশমিক আট শতাংশ পর্যন্ত মুদ্রস্ফীতি হয়েছে। আর সবচেয়ে দ্রুত মুদ্রস্ফীতি হয়েছে ইহুদি দেশ ইসরায়েলে।

রিপোর্টে ডাব্লিউইএফ জানায়, ৩৭টি দেশেরই প্রথম ছয় মাসের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি দ্বিগুণ বেড়েছে। যা ২০২০ সালে মহামারি শুরুর বছরের প্রথমার্ধের থেকে বেশি। ১৬টি দেশে মুদ্রাস্ফীতি দুই বছর আগের চেয়ে চারগুণেরও বেশি।

অন্যদিকে ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংস্থা পিউ রিচার্স সেন্টারের তথ্য মতে, গত দুবছরে ওইসিডিভুক্ত ৪৪টির মধ্যে ৩৭টি দেশেই মুদ্রাস্ফীতি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মহামারি ও যুদ্ধের জন্যই মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে বলে ধারণা অর্থনীতিবিদদের।

যুক্তরাষ্ট্র
মহামারির জন্য গত দুবছর আগে কর্মহীন হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মার্কিন নাগরিক। এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য দেশটির রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদরা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটির মুদ্রাস্ফীতি ১৯৮০ দশককেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। ব্যুরো অফ লেবার স্টাটাকিসের তথ্য মতে, গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রর মুদ্রাস্ফীতি ৮ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছেছে যা ১৯৮১ এর পর সর্বোচ্চ। আর এতে ব্যয় বাড়ছে সাধারণ নাগরিকদের।

দেশটির এমন অবস্থাকে ‘ন্যাশনস টপ প্রবলেম’বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আর এ সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে পিউ রিচার্স সেন্টার বলছে, মহামারির পর থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। তা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

তুর্কিয়ে
চলতি বছরের প্রথমার্ধে সবচেয়ে বেশি মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে তুর্কিয়েতে। নিজেদের রিপোর্টে ডাব্লিউইএফ জানায়, বছরের পর বছর ধরে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়েছে তুর্কিয়ে। কিন্তু ২০২১ সালের শেষের দিকে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। এর মূলে ছিল অপ্রচলিত অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ। তারা সুদের হার বাড়ানোর পরিবর্তে কমিয়ে দিয়েছিল।

ইসরায়েল
ডাব্লিউইএফর রিপোর্ট অনুযায়ী গত দুই বছরে মুদ্রাস্ফীতি সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে ইসরায়েলে। তবে বর্তমানে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি মাত্র দুই শতাংশে রয়েছে। ২০২০ সালে করোনার শুরুর সময় দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি ছিল মাত্র শুন্য দশমিক ১৩ শতাংশ।

এ দিকে মুদ্রাস্ফীতি হওয়ায় দেশটির জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে তড়িৎ গতিতে। দেশটির ভোক্তা মূল্য সূচকের তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে গড়ে তিন দশমিক ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। যা ২০২০ সালের একই সময়ের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি।

ইসরায়েলের পরে দ্রুত মুদ্রাস্ফীতির তালিকায় রয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। ২০২০ থেকে ২২ সাল পর্যন্ত ইহুদি দেশটির পরে তাদের মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে মহামারির শুরুর বছরের প্রথমার্ধের চেয়ে মুদ্রাস্ফীতি ২০ গুণ বেশি। এরপরেই রয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ সুইজারল্যান্ড। ২০২০ সালের একই সময়ে দেশটির মুদ্রস্ফীতি ছিল শুন্য দশমিক ১৩ শতাংশে। আর ২০২২ সালের একই সময়ে মুদ্রস্ফীতি দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক শুন্য ছয় শতাংশে।

সুইজারল্যান্ডের পর রয়েছে অর্থনৈতিক অশান্তি খ্যাত দেশ গ্রিস। ২০১০ সাল থেকে মুদ্রাস্ফীতি দেখছে দেশটির জনগণ। তবে মহামারির সময়ে দেশটিতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে পড়ে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে সাত দশমিক ৪৪ শতাংশে।

এ দিকে ব্যাতিক্রম দেখা যাচ্ছে  রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশে। মহামারি ও ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছিল। তবে সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছে পুতিনের দেশটি।

news24bd.tv/মামুন

এই রকম আরও টপিক