ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তুলছে লোডশেডিং

সংগৃহীত ছবি

ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তুলছে লোডশেডিং

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে যান। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে রাত ১১টা থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে ১১টায় ঘুম ভেঙে যায়।

১২টা পর্যন্ত বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত গরমে ঘুমাতে পারেন না। শুধু মিরপুর নয় রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎবিভ্রাট চরমে পৌঁছেছে; ফলে রবিউল ইসলামের মতো অনেকেই রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ভোগান্তি হচ্ছে বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে দিনরাত মিলিয়ে ৫-৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না।

ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি আরও খারাপ। কোনো কোনো জেলা ও গ্রামাঞ্চলে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছে না মানুষ।

কথা হয় যশোরের চৌগাছা উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা নাসরিন খানমের সঙ্গে। নিউজ-টোয়েন্টি ফোরকে তিনি জানান, ‘সোমবার সকালে বিদ্যুৎ গেছে। সারাদিন বিদ্যুৎ ছিল না। সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ আসে। প্রতিদিন একই অবস্থা। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। ’

এই পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কেউ। সোমবার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নভেম্বরের আগে লোড শেডিং পরিস্থিতির উন্নতির আশা নেই। ’ 

এদিকে সোমবার বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পূর্বাঞ্চল গ্রিডে এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকছে। ঘোড়াশাল উপকেন্দ্রের যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে আগামীকালের (মঙ্গলবার) মধ্যে তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। ’

রাজধানীর মিরপুর-১-এর কলওয়ালাপাড়া বহুবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘গত মঙ্গলবার গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনার পর থেকেই লোড শেডিং বেড়ে গেছে। প্রতিদিন সকাল ১০টার দিকে, দুপুর ২টার দিকে, সন্ধ্যার দিকে, মধ্যরাত ১২টা-১টার দিকে আবার ভোর ৩টা-৪টার দিকে নিয়মিত লোড শেডিং হচ্ছে। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। মধ্যরাতে একাধিকবার লোড শেডিংয়ের কারণে প্রায় নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। ’

প্রায় একই অভিজ্ঞতা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সেলিনা রহমানের। তিনি বলেন, ‘গত রাত (রোববার দিবাগত রাত) ২টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। গরমে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুমাতে পারিনি। ঘুম না হওয়ায় সকালে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এরপর সকালে আবার ১১টার দিকে এক ঘণ্টার লোড শেডিং হয়। পরে আবার দুপুর ২টায় বিদ্যুৎ চলে যায়। ভোগান্তির যেন শেষ নেই। ’

ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী দুই প্রতিষ্ঠানের একটি ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সংবাদ মাধ্যমেকে বলেন, ‘জ্বালানিসংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় আমরা এখন বরাদ্দের চেয়ে কম পাচ্ছি। যার কারণে লোড শেডিং বেশি দিতে হচ্ছে। ’ 

দেশে সোমবার বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি ছিল এক হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, সোমবার দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৬৮৬ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল এক হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। তিনি আরো বলেন, ‘বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে, যার কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি বাড়ছে। ’

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে উৎপাদন বন্ধ ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের। ফলে চাহিদার বিপরীতে দেড় হাজারের বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদিত হচ্ছে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে না সরকার।

news24bd.tv/ইস্রাফিল

এই রকম আরও টপিক