ছোঁয়ার স্বপ্ন ডানায় বসুন্ধরার পালক
ছোঁয়ার স্বপ্ন ডানায় বসুন্ধরার পালক

সানজিদা ইসলাম ছোঁয়াকে সম্মাননা তুলে দেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন ও উপসম্পাদক হায়দার আলী

শুভসংঘের সদস্য ছোঁয়াকে সংবর্ধনা

ছোঁয়ার স্বপ্ন ডানায় বসুন্ধরার পালক

অনলাইন ডেস্ক

সানজিদা ইসলাম ছোঁয়াকে সম্মাননা তুলে দিলেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক, কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন ও পত্রিকাটির উপসম্পাদক হায়দার আলী।  বাল্যবিবাহ রোধে অনবদ্য ভূমিকা রাখায় এ বছর বিবিসির প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পাওয়ায় তাকে সংবর্ধনা ও আর্থিক সম্মাননা দিয়েছে কালের কণ্ঠ ‘শুভসংঘ’। আজ মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) কালের কণ্ঠ’র সভাকক্ষে শুভসংঘের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট এবং আর্থিক সম্মাননা তুলে দেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন।  

এ সময় তিনি চিরদিন ছোঁয়ার পাশে থাকার ঘোষণা দেন।

এক মাসের মধ্যে ছোঁয়াকে একটি সেলাই মেশিন ও একটি ল্যাপটপ দেওয়ার পাশাপাশি শুভসংঘের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে পড়ালেখার খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলেও জানান ইমদাদুল হক মিলন।

তিনি বলেন, ছোঁয়া ঘাসফড়িংয়ের সঙ্গে কাজ করেছে। শুভসংঘের সদস্য। ছোঁয়া বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছে।

আমি আসলে ভুলে গিয়েছিলাম যে ছোঁয়া আমাদের শুভসংঘের সদস্য। পরে আমাদের একটা সংবাদে বিষয়টি জানতে পেরে খুব আন্দোলিত ও প্রভাবিত হয়েছি। আমাদের একটা মেয়ে এত বড় অর্জন করেছে অথচ তার সঙ্গে সেভাবে পরিচয় নেই!

ইমদাদুল হক মিলন বলেন, তাকে কোনো সম্মাননা সংবর্ধনা দিচ্ছি না! এই ভেবে সংর্বধনার আয়োজন করা। ছোঁয়ার ভবিষ্যৎ চিন্তা-ভাবনা অসাধারণ। তার পাশে আমি আছি, শুভসংঘ আছে আর আমরা থাকা মানেই বসুন্ধরা গ্রুপ পাশে আছে। তার জীবন যাতে সুন্দরভাবে কাটে, সে যে কাজটা করছে তা যেন কোনো বাধাবিঘ্ন ছাড়া করে যেতে পারে এই দায়িত্ব আমাদের।  

ছোঁয়ার উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, তুমি কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সদস্য হওয়াতে আমরা গর্বিত। তুমি যে মেয়েদের বিয়ে বন্ধ করেছ তাদের কোনো আর্থিক সহায়তা লাগলেও শুভসংঘ থেকে ব্যবস্থা করা হবে।  

ছোঁয়ার উদ্দেশে কালের কণ্ঠ’র উপসম্পাদক হায়দার আলী বলেন, যে কাজ করে তুমি সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছ সেটি বন্ধ করা যাবে না। মনে রাখবা, বিবিসির যে প্রভাবশালী নারীর তালিকায় তোমার নাম এসেছে সেখানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামও আছে। কাজেই সেটা মাথায় রাখতে হবে। সেভাবেই সামনের সময়টাকে গড়তে হবে।  

এ সময় উপস্থিত ছিলেন শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শরীফ মাহদী আশরাফ জীবন, প্রচার সম্পাদক শাহ হাসিবুর রহমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক লতা সরকার। এ ছাড়া ছোঁয়ার সঙ্গে ছিলেন তার মা-বাবা ও ছোট ভাই।

সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া বলেন, আমার মায়ের বাল্যবিয়ে হয়েছিল। যার কারণে মা বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকতেন। মায়ের কষ্ট আর প্রতিবন্ধকতা দেখেছি। তাই আমি চাই না আমার মায়ের মতো কষ্ট অন্য কোনো মেয়ের হোক। মায়ের কষ্ট দেখেই মূলত বাল্যবিয়ে বন্ধের কাজ শুরু করি। এই কাজে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সহযোগিতা পাওয়াতে আমি আরো সাহস পেয়েছি।  

ছোঁয়া বলেন, ২০১৬ সালে প্রথম আমি বাল্যবিয়ে রুখতে কাজ শুরু করি। কিন্তু প্রথমে আমার শুরুটা হয় ব্যর্থতা দিয়ে। এতে থেমে থাকিনি। চেষ্টা চালিয়ে যাই। পরে ২০১৭ সালে প্রথম একটি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হই। তখন আমরা কয়েকজন মিলে ‘ঘাঁসফড়িং’ নামে কাজ শুরু করি। নামটি দিয়েছিলেন কালের কণ্ঠ’র আঞ্চলিক প্রতিনিধি আলম ফরাজী। তিনি এই নাম দেওয়ার পাশাপাশি শুভসংঘের একটি কমিটি গঠন করে দেন। আমি সেই কমিটির সভাপতি ছিলাম। তখন আমরা একত্র হয়ে কাজ শুরু করি। এখন পর্যন্ত কাজ করে চলেছি।

তিনি আরো বলেন, শুভসংঘের পক্ষ থেকে ইমদাদুল হক মিলন স্যার যে সংবর্ধনা জানিয়েছেন এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এমন একটি আয়োজনের জন্য স্যারকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আজকের এই সংবর্ধনা সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হবে এবং নতুন কাজের শক্তি জোগাবে। মিলন স্যার আমার সাথে আছেন মানে পুরো দেশের সমর্থন আছে আমার সাথে। আমি আর কোনো কিছুতেই ভয় পাই না।  কলেজে ক্লাস শুরু হওয়ার পর আমার কাছে স্যাররা জানতে চেয়েছিলেন তুমি কলেজে প্রথম কাজ কী করতে চাও? তখন আমি বলি, শুভসংঘের একটি কমিটি করতে চাই। কারণ শুভসংঘের সঙ্গে থাকলে কাজ করাটা সহজ হয়ে যায়।  

ছোঁয়ার মা লিজা আক্তার বলেন, সন্তানের সফলতা বাবা-মায়ের কাছে অনেক বড় পাওয়া। ছোঁয়ার অর্জন যে কতটা আনন্দের সেটা বলে বোঝানোর ভাষা নেই। আমার অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে। যার কারণে আমি এর কষ্টটা ভালোভাবে বুঝি। পড়াশোনা করতে পারিনি বলে প্রতিষ্ঠিতও হতে পারিনি। ছোঁয়া আমার কষ্ট আর হতাশা দেখে দেখে বড় হয়েছে। তাই সে ছোটবেলা থেকেই সাহসী হয়ে ওঠে।

ছোঁয়ার বাবা আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া সোহেল বলেন, একটা সময় খুব খারাপ লাগত। আমার স্ত্রীর ওপর রাগ ছিল। ছোঁয়ার এসব কাজের কারণে রাগ করে দুই মাস বাড়িতে খরচের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আর সেই রাগ নেই। বরং অনেক ভালো লাগছে।  

উল্লেখ্য, চলতি বছর বিবিসির প্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় জায়গা করে নেন বাংলাদেশের সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। পড়ালেখা করা অবস্থায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তার ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে আন্দোলনকর্মী ও প্রচারণা ক্যাটাগরিতে তাকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি বর্তমানে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।