৩৫০ বিঘা জমিতে গড়ে উঠছে ‘বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স’

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স

৩৫০ বিঘা জমিতে গড়ে উঠছে ‘বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স’

অনলাইন ডেস্ক

বসুন্ধরা কিংস বনাম শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের খেলা চলছে। পেশাদার ফুটবল লিগের খেলায় গ্যালারি উপচে পড়ছে দর্শকে। মুহুর্মুহু করতালি, হুল্লোড়ে সরব বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনা। শুধু এই ম্যাচেই নয়, কিংস অ্যারিনায় খেলা হলেই দর্শকের এমন উন্মাদনা চোখে পড়ে।

ফুটবল খেলায় দর্শক ফিরছেন। এ মন্তব্য লুফে নিয়ে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, শুধু ফুটবল নয়, দেশি-বিদেশি সব ধরনের খেলাধুলার স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলতে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স। আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম, হকি স্টেডিয়াম, গলফ কোর্স, ডাইভিং সুবিধাসহ সুইমিং কমপ্লেক্স, ব্যাডমিন্টন থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রচলিত খেলার ব্যবস্থা থাকছে এখানে।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রায় ৩৫০ বিঘা জমিতে গড়ে উঠছে স্বপ্নের বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স।

সুপ্রশস্ত রাস্তা, আলাদা পার্কিং সুবিধা থেকে শুরু করে খেলোয়াড় এবং দর্শকদের জন্য থাকছে নিন্ডিদ্র নিরাপত্তা। বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের শুরুর গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাত-আট বছর আগের কথা। দেশের ফুটবলের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হচ্ছিল। তখন দেশের ফুটবলের মান এবং দর্শকের সংখ্যা একেবারে কমে গিয়েছিল। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এ বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন। সেদিনের আলোচনা থেকে বসুন্ধরা কিংস তৈরির ভাবনা জন্ম নেয়। নানা বাধা উতরে জয়ের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে বসুন্ধরা কিংস।

ফুটবলের পাশাপাশি অন্যান্য খেলাকে এগিয়ে নিতে নতুন এক স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দেশকে এগিয়ে নিতে প্রেরণার বাতিঘর হয়ে উঠবে এই স্পোর্টস কমপ্লেক্স- এমনটাই প্রত্যাশা প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের। সরেজমিন বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে চলছে নির্মাণযজ্ঞ। কোথাও ঢালাই চলছে, কোথাও গ্লাস লাগানো হচ্ছে। সুইমিং কমপ্লেক্সের পাশের ছাদে দাঁড়িয়ে দেখা যায় বিস্তৃত এই কাজের কিছু খন্ডচিত্র। ধূসর প্রান্তর সেজে উঠছে অনন্য স্থাপত্য, সবুজ গাছ আর ঘাসে। দেশের মাটিতে অত্যাধুনিক সব সুবিধার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এখানে। ক্রিকেট ও হকি স্টেডিয়াম, গলফ কমপ্লেক্সের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান একজন হকি খেলোয়াড় ছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যুব দলের অধিনায়কও ছিলেন তিনি। ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি তাঁর ভালোবাসা কারও অজানা নেই। তাঁর বড় ভাই আবদুস সাদেক ছিলেন হকি ও ফুটবলের বড় তারকা। দুই খেলায় ঢাকা আবাহনীর অভিষেক হয়েছিল তাঁরই নেতৃত্বে। হকির জাতীয় দলেরও প্রথম অধিনায়ক সাদেক।  

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের দুই ছেলে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর দেশের স্বনামধন্য ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যান। ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি। খেলাধুলার প্রতি তাঁদের ভালোবাসার স্মারক হতে চলেছে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স।  ইমরুল হাসান আরও বলেন, দেশের প্রচলিত সব ধরনের খেলার ব্যবস্থা থাকছে এই স্পোর্টস কমপ্লেক্সে।  

ব্যাডমিন্টন, হকি, স্কোয়াশ, শুটিং, ফুটবল, ক্রিকেট সব ধরনের খেলার ব্যবস্থা থাকছে। এ ছাড়া আলাদাভাবে গলফ কমপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে। ফুটবল মাঠের পাশাপাশি এখানে আমাদের যে ক্রিকেট মাঠ আছে সেখানে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট হয়ে থাকে। বিপিএলের দল রংপুর রাইডার্স এ মাঠে প্র্যাকটিস করেছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাজ চলছে। সেখানে দর্শক ধারণক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার। আমাদের দুটি ক্রিকেট মাঠ হচ্ছে। একটি অনুশীলনের আর একটি পরিপূর্ণ স্টেডিয়াম। অনুশীলনের মাঠ প্রস্তুত। বাংলাদেশ গেমসের আবাসন থেকে শুরু করে ইভেন্টগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় অনেক অসুবিধা হয়। এই স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি হলে গেমসের সময় এটিকে তাদের ভেন্যু হিসেবে বেছে নিতে পারবে। স্পোর্টস কমপ্লেক্সের সঙ্গে ক্যাফেটেরিয়া, শিশুদের জন্য গ্রিন পার্ক থাকবে। সব বয়সী মানুষের সুস্থ পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠবে এই কমপ্লেক্স। এখানে আন্তর্জাতিক মানের সুইমিং পুলের পাশাপাশি শিশু ও বড়দের সাঁতার শেখার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। তিনটি বাস্কেটবল কোর্ট রয়েছে। এটি পরিবর্তনযোগ্য হওয়ায় অন্য খেলাধুলার আয়োজনও এখানে সম্ভব।  

অনুশীলনের জন্য আলাদা ক্রিকেট, ফুটবল মাঠ থাকছে। খেলোয়াড়দের জন্য থাকছে নেট প্র্যাকটিসের সুবিধাও।  খেলাধুলা চলাকালীন আলো এবং অন্যান্য সুবিধা বজায় রাখতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকবে। ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার স্টেশন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সম্পূর্ণ ব্যাকআপের ব্যবস্থা থাকছে। জেনারেটর এবং ডেসকোর সংযোগ থাকবে ভেন্যুগুলোতে। ফলে ১ মিনিটের বিদ্যুৎ বিভ্রাটেও খেলা সম্প্রচারে কোনো সমস্যা হবে না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের খেলাধুলাকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স।

বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনা
বাংলাদেশের সেরা ফুটবল মাঠ তৈরি করা হয়েছে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে। এই মাঠের নাম বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনা। দেশের ফুটবলে টানা তিনবারের লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের হোম ভেন্যু হিসেবে গত বছর থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে এই মাঠ। সবুজ এই মাঠের দিকে চোখ পড়লে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সেরা মাঠগুলোর ছবিই ভেসে ওঠে। ফিফা এবং এএফসির মানদন্ড মেনে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনা।

বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনা মাঠের পাশেই গড়ে উঠেছে গ্যালারি। ১২ হাজার দর্শক এই গ্যালারিতে বসে ফুটবল খেলা উপভোগ করতে পারবেন। থাকছে আন্তর্জাতিক মানের ফ্লাডলাইট সিস্টেম। আন্তর্জাতিক মানদন্ড মেনে তৈরি করা হয়েছে ড্রেসিংরুম। দর্শকদের জন্য থাকছে আলাদা ফুড জোন। ভিআইপি বক্স, প্রেস কনফারেন্স রুমসহ সব ধরনের সম্প্রচার সুবিধা থাকছে মাঠে। বাংলাদেশে বেশকটি ফুটবল স্টেডিয়াম আছে। তবে বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনা বিশ্বমানের করে গড়ে তোলা হয়েছে। এই মাঠ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। বর্তমান জাতীয় দলের কোচ হাবিয়ের কাবরেরা কিংস অ্যারিনায় এসেই বলেছিলেন, অসাধারণ এক মাঠ।  আরও অনেকেই কিংস অ্যারিনার প্রশংসা করেছেন। মাঠটা তৈরি করার সময় বিভিন্ন লেয়ারে কাজ করা হয়েছে। প্রচন্ড বৃষ্টির পরও মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে সব পানি বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে মাঠে। বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের সাউথ জোনেও থাকবে একটি ফুটবল মাঠ। নর্থ ও সাউথ জোনে থাকছে ফুটসাল মাঠও।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন