খানজাহানের বসতভিটা খননে মিলেছে ৬০০ বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ

খানজাহানের বসতভিটা খননে মিলেছে ৬০০ বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত স্থাপনা হযরত খানজাহানের (রহ) বসতভিটায় ১৩তম প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া গেছে ৬০০ বছর আগের প্রাচীন আমলের টাইলস, চীনা উপকরণ, লোহা গলিয়ে ধাতব বস্তুসহ প্রত্নতাত্ত্বিক  সম্পদ।

এই প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ নিয়ে মঙ্গলবার দিনব্যাপি বাগেরহাট শহরতলীর সুন্দরঘোনা গ্রামে হযরত খানজাহানের বসতভিটার ডিবিতে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের আয়োজনে করে প্রদর্শনী। এই প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ প্রদর্শনী খবরে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা খানজাহানের (রহ) বসতভিটায় ভীড় জমায়।

সকালে প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে প্রত্নতাত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন, বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া তাসনিম, প্রত্নতাত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ফেরদৌস, ষাটগম্বুজ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আখতারুজ্জামান বাচ্চু, বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মোহাম্মাদ যায়েদ বক্তব্য দেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক লাভভি ইয়াসমিন জানান, হযরত খানজাহানের বসতভিটা হিসেবে সংরক্ষিত এই প্রত্নস্থলটিতে আগে ১২ বার খনন করা হয়েছে। এবারে ১০জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ৪০ দিনেন খননে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

পাওয়া গেছে, প্রাচীন আমলের টাইলস, চীনা উপকরণ, লোহা গলিয়ে ধাতব বস্তুসহ দেয়াল, মেঝে, পয়ঃনিষ্কাশন নালা, পোড়ামাটির তৈরি পাইপ, প্রদীপদানি, পোড়ামাটির পুঁতি, লাল, কালো ও ধূসর বর্ণের মৃৎমাত্র, প্লেট, গ্লাস, পিরিচ, নল, জালের গুটি, টাইলস, অলঙ্কৃত ইটসহ বিভিন্ন প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে।

এই প্রদর্শনী শেষে প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদগুলো বাগেরহাট যাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। পরে এই গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হবে বলে জানান এই বিভাগীয় এই কর্মকর্তা।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে খানজাহান আলী (রহ) এর নির্মিত ষাটগম্বুজ মসজিদসহ ১৭টি স্থাপনাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলার সুন্দরঘোনা এলাকায় অবস্থিত খানজাহানের (রহ) বসতভিটা অন্যতম। ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে মাত্র ৩০০ মিটার উত্তরে এই বসতভিটাটি রয়েছে। ২০০১ সালে এখানে প্রথমবার প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।  

এরপর ২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৩ বারের খননে ঢিবিটিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৬০০ বছর আগের উলুঘ খানজাহান (হজরত খানজাহান (রহ.) আমলের নানা স্থাপনা ও ইট বিছানো সড়ক ছাড়াও আগে ও পরের বিভিন্ন যুগের স্থাপনা এবং বসতির নিদর্শন রয়েছে। এখানে পাওয়া স্থাপত্য, মৃৎপাত্র, নানা তৈজস ও উপকরণ থেকে ধারণা করা যায়, সেই সময়ে এখানে বসবাসকারীদের একটি উন্নত রুচিবোধ ছিল। নির্মাণশৈলী ও শৈল্পিকতায় তার প্রকাশ পেয়েছে।

খানজাহানের বসতভিটা  বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম এক নিদর্শন। এর পাশে এখন টিকে আছে ৬০০ বছর আগে নির্মিত ইটের তৈরি প্রাচীন সড়ক। খানজাহানের বসতভিটা ছাড়াও স্থানটি মধ্যযুগের অন্যতম খলিফাতাবাদ নগরীর অংশ।

news24bd.tv/তৌহিদ