বিএনপি ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেবে: শেখ পরশ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেবে: শেখ পরশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর চড়াও হওয়ার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের কারামুক্ত করে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।

বুধবার (২২ মার্চ) বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ওসমানী হল মাঠে আয়োজিত ঢাকা মহানগর যুবলীগের ২৪, ২৫ (পূর্ব), ২৫ (পশ্চিম), ২৬, ২৭, ৩৫, ৩৬ ও ৯৯নং ওয়ার্ডের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে এসব বলেন পরশ।

সম্মেলন উদ্বোধন করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান পরশ। প্রধান অতিথির হিসেবে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন-আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল। এতে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, রাজনীতিতে পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নাই।

আমাদের পরিশ্রমী কর্মীবাহিনী দরকার। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পদ সর্বস্ব রাজনীতির দিন শেষ। এখন জেগে ওঠার সময়। জনবিচ্ছিন্ন এবং নিষ্প্রভ কর্মীবাহিনী আমাদের কাম্য না। আমাদের কাম্য সেই কর্মীবাহিনী যারা নদীর মোহনা থেকে সাগর ডেকে এনে জনসমুদ্রতে রূপান্তরিত করবে। আমি বিশ্বাস করি, আজকের কর্মীরাই আমাদের আগামীর নেতৃত্ব। কাজেই, নেতৃত্বের গুণাবলীসম্পন্ন কর্মীবাহিনী আমাদের আজকের প্রত্যাশা।

তিনি বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ধিক্কার জানাই বিএনপি নামক ঐ তথাকথিত বিরোধী দলকে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের সাথে আঁতাত ও আপোষ করে তাদের হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চরম অপমান করেছিল। এই তাদের আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়া। বিএনপি যদি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসে ওরা এবার যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেবে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর চড়াও হওয়ার জন্য।

পরশ বলেন, আজকে অনেকে গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলে। আমার প্রশ্ন- ১৯৭১ সালে যখন রাজাকার, আলবদর, আল-শামস্ বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে, ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্বিচারে হত্যা ও অগ্নিসন্ত্রাস করেছে তখন এই সকল সমালোচকদের ভূমিকা কী ছিল, তখন কি তারা গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্ন তুলেছিল? বা প্রতিবাদ করেছিল? আমি সেটা জানতে চাই। এমনকি ২০০১ সালেও ঐ জামাত-বিএনপি সরকার যখন সেই পাকিস্তানী কায়দায় যখন আমাদের হিন্দু ভোটারদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে তাদেরকে উৎখাত করেছিল, তখনো কি এই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধারক এবং বাহকের প্রশ্ন তুলেছিলেন?

যুবলীগ চেয়ারম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রায় এক যুগের বেশি সময় যে অগণতান্ত্রিক মিলিটারি শাসকদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছিল, সে ব্যাপারে এবং সেই সময়ও কী তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রক্ষক হিসাবে সরব ছিল? ১৫ই আগস্টে যখন নারী-শিশু হত্যা করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল কিনা, আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে। পরিষ্কারভাবে এখানে একটা পক্ষপাতিত্ব লক্ষণীয় এবং একটা দ্বিচারিতা বিরাজমান সেটা বোঝা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এটা শেখ হাসিনার উপর অন্যায় এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্যও খুবই দুর্ভাগ্যজনক অবিচার, যে এত প্রগতি এবং উন্নয়নের পরেও এই সকল সমাজের তথাকথিত বিবেকদের প্রত্যয়ন আমাদের শুনতে হয়? দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধুকন্যার! দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের জনগণের! তবে এই প্রত্যয়ন তাদের অত্যাচারী এবং পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাবই ব্যক্ত করেছে বলে আমি মনে করি।

আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, এই সকল বঞ্চনা এবং অন্যায়ের মাঝে এই অগ্নিঝরা মার্চ মাসে, স্বাধীনতার মাসে দাঁড়িয়ে চলেন আমরা ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ দ্বারা আবারও অনুপ্রাণিত হই। কারণ আমি বিশ্বাস করি, ৭ই মার্চের ভাষণ যুগে যুগে বিশ্বের সকল অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগায়। সেকারণেই বঙ্গবন্ধুকে বলা হয়, “সকল যুগেই প্রাসঙ্গিক ও সমকালীন। ” তরুণ প্রজন্মের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হবে এবং তাঁর উদার গণতান্ত্রিক, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে। তা না হলে আমরা একটা উন্নয়নশীল, মর্যাদাশীল জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারব না। আমাদের লক্ষ্য একটা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যুবলীগ আজ অনেক পরিশুদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সম্মেলন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা এমন নেতৃত্ব চাই, যাদের বিরুদ্ধে কোনো মাদকের অভিযোগ নেই। যারা ডাক দিলে নেতা-কর্মীতে ভরে যাবে। তেমন দক্ষ নেতৃত্ব আশা করছি। তেজগাঁও অঞ্চল আওয়ামী লীগের দুর্গ। বিএনপির ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘নির্বাচনে যাবেন না, আবার নির্বাচন করতেও দিবেন না। ’ তাহলে কীভাবে ক্ষমতায় যেতে চান? আপনারা কী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চান? এ ধরণের কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।

ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা সংবিধান মানবেন না, জনগণ মানবেন না, এভাবে আজগুবি কথা বলবেন না। এই দেশকে আলোকিত রাখতে হলে, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শেখ হাসিনার বিকল্প নাই। এদেশের জনগণ আর কোনো দিন ভুল করবে না। তারা আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে জয় যুক্ত করবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘যদি আফ্রিকাকে উন্নত করতে চাও তাহলে বাংলাদেশকে অনুসরণ করো, শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করো। ’ এটাই জননেত্রী শেখ হাসিনা, তিনি শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি সারা বিশ্বের নেতা।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ছিল বিএনপির সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য। তারা আমাদের যুবলীগের অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। যারা শীর্ষ সন্ত্রাসী লালন করে, যারা মানুষের ওপর জুলুম করে, সেই সন্ত্রাসীদের মুখে এখন মানবতার কথা শোনা যায়। এটা হাস্যকর ব্যাপার। মানবতা যদি থেকে থাকে সেটা আওয়ামী লীগের আছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার আছে।

তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন, যারা দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে, দেশের মানুষকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে সেই জামাত-বিএনপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তারা যদি আন্দোলন সংগ্রামের নামে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন আর জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে তাদেরকে কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ, উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, উপ-ধর্ম সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্যসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।