পৃথিবীর গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ নিয়ে বিস্ময়কর ৫ তথ্য

পৃথিবীর গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ নিয়ে বিস্ময়কর ৫ তথ্য

পৃথিবীর স্থলভাগের থেকেও অনেক অনেক বেশি বৈচিত্রপূর্ণ জলভাগ। জলের ওপরে যেমন হাজার হাজার সুউচ্চ পর্বত রয়েছে, তেমনি জলের নিচে রয়েছে গভীর সমুদ্র খাত। এরমধ্যে সবথেকে বিস্ময়কর হচ্ছে মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এই খাত দৈর্ঘ্যে ২ হাজার ৫৪০ কিলোমিটার।

এই খাতের গভীরতম বিন্দু ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৬ হাজার মিটার বা ১১ কিলোমিটার গভীরে! এই গভীরতা আটলান্টিকের তিন গুণ। এমনকি পৃথিবীর উচ্চতম পর্বত মাউন্ট এভারেস্টকেও এই খাতে ডুবানো যাবে। এই খাতের গভীরতম বিন্দুতে যে চাপ অনুভূত হয়, তা ৫০টি জাম্বো জেটের সমান। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনে মারিয়ানা ট্রেঞ্চ নিয়ে আকর্ষণীয় কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
 

টাইটানিক  পরিচালক জেমস ক্যামেরন মারিয়ানা ট্রেঞ্চ ভ্রমণ করেছিলেন। খুব কম মানুষই মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে গিয়েছে। প্রথম অভিযান হয় ১৯৬০ সালে। ট্রিয়েস্ট বাথিস্ক্যাফ নামের একটি সাবমার্সিবল দিয়ে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে গিয়ে ইতিহাসে নাম লেখান জ্যাক পিকার্ড এবং ডন ওয়ালশ।

তাদের ওই অভিযানের আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল সমুদ্রের অত গভীরে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। কিন্তু তারা অতল গভীরে গিয়েও জীবন্ত প্রাণী দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তারা জানান, সমুদ্র সম্পর্কে মানুষের সমস্ত পূর্ব ধারণা এক নিমিশে উধাও হয়ে গিয়েছিল। এরপর ২০১২ সালে বিখ্যাত চলচ্চিত্র টাইটানিকের পরিচালক জেমস ক্যামেরন মারিয়ানা ট্রেঞ্চে নেমেছিলেন। তিনিও ব্যক্তিগতভাবে ডিজাইন করা একটি সাবমার্সিবলে করে ওই খাতে নামেন। সেখানে পাওয়া গিয়েছিল প্লাস্টিকের ব্যাগ!

প্লাস্টিকের ব্যাগ!
এরকম আরেকজন অনুসন্ধানকারী ভিক্টর ভেসকোভো। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের একজন বিনিয়োগকারী। ২০১৯ সালে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের ১০ হাজার ৯২৭ মিটার গভীরে নেমে বিশ্ব রেকর্ড করেছিলেন তিনি। ভিক্টর ট্রেঞ্চের একদম গভীরে ভূমিতে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং কিছু ক্যান্ডির মোড়ক পেয়েছিলেন। সেসময় সমুদ্র দূষণের এই করুণ বাস্তবতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা হয়েছিল।

সমুদ্রের হাডাল জোনে অবস্থিত
বায়ুমণ্ডলের মতো সমুদ্রেরও রয়েছে নানা স্তর। এরমধ্যে সবথেকে উপরের স্তরকে বলা হয় এপিপেলাজিক জোন কিংবা সানলাইট জোন। এই অঞ্চলের গভীরতা হয় সর্বোচ্চ ২০০ মিটার পর্যন্ত। এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায়। এরপরই আসে মেসোপেলাজিক জোন। জলের এক হাজার মিটার বা এক কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত এই জোন বিস্তৃত। এখানেও সামান্য কিছু সূর্যের আলো পাওয়া যায়।  

আর তারপর আসে বাথিপেলাজিক জোন বা মিডনাইট জোন। এই অঞ্চল একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সূর্যের আলো কখনই পৌঁছায় না এখানে। তাপমাত্রাও থাকে শূন্যের কাছাকাছি। সমুদ্রের নিচে চার হাজার মিটার গভীর পর্যন্ত এই জোন বিস্তৃত। এর নিচে রয়েছে আবিসোপেলাজিক জোন। এই জোন ছয় হাজার মিটার গভীর হয়।

এই অঞ্চলে জীবিত প্রাণীর সংখ্যা একেবারে কমে যায়। এত গভীরে বেঁচে থাকার মতো প্রাণী খুব বেশি পাওয়া যায়নি এখনও। কিন্তু মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতা এরও দ্বিগুণ! এই খাত সমুদ্রের যে অঞ্চলে অবস্থিত তাকে বলা হয় হ্যাডালপেলাজিক জোন বা হ্যাডাল জোন। এই জোনের নাম করা হয়েছে গ্রিক দেবতা হেডসের নামানুসারে। দেবতা হেডস সমুদ্রের গভীর শাসন করেন এবং তিনি মৃতদের রাজা।

জীবনের অস্তিত্ব!
হ্যাডাল জোনে খুব কম অভিযানই চালিয়েছে মানুষ। সমুদ্রের ওই অঞ্চলে কি আছে তার সামান্য জ্ঞান রয়েছে আমাদের। দীর্ঘ সময় ধরে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, এত গভীরে যেখানে কখনও সূর্যের আলো পৌঁছায়নি এবং তাপমাত্রা সবসময় শূন্যের নিচে থাকে সেখানে কোনো প্রাণীর বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সেখানে জলের চাপ এত বেশি যে মানুষের হাড় গুঁড়িয়ে যাবে একা একাই। কিন্তু সেই গভীরতায়ও শেষ পর্যন্ত প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে! ২০০৫ সালে এক গবেষণায় মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে এক ধরণের প্ল্যাংটন খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা।  

সমুদ্র আসলে কত গভীর হতে পারে
সমুদ্র আসলে কত গভীর তা নিশ্চিতভাবে বলা এখনও অসম্ভব। কারণ সমুদ্রের মাত্র ২০ শতাংশ এলাকার ম্যাপ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে মানুষের পক্ষে। যদিও সমুদ্রের ওপর দিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে চলাচল করছে মানুষ। কিন্তু এর গভীরে কি আছে তার বেশিরভাগ এখনও আমাদের অজানা। চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহের যে ম্যাপ মানুষ তৈরি করেছে, পৃথিবীরও এত দারুণ ম্যাপ তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

News24bd.tv/aa