চীনের বাণিজ্যিক জোট আরসেপে যোগদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের

সংগৃহীত ছবি

চীনের বাণিজ্যিক জোট আরসেপে যোগদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ এখন যেসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করার বিষয়ে আলোচনা করছে, তার মধ্যে ছয়টি দেশ চীনের নেতৃত্বে বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্লক আরসেপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই ব্লকে যোগ দিলে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ পাঁচ বিলিয়ন ডলার বাড়ার সম্ভাবনার চিত্র সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় উঠে এসেছে। তাই এসব নানা দিক বিবেচনা করে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপে (আরসেপ) বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা।  

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত এখন মন্ত্রিপরিষদ সভায় উপস্থাপন করা হবে। সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র আসিয়ানসহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো, যারা আরসেপের অন্তর্ভুক্ত। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সংযুক্ত থাকা যৌক্তিক হবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় কিছু পূর্ব সতর্কতাসহ আরসেপে বাংলাদেশের যোগদানের পক্ষে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কবে নাগাদ আবেদন করা হবে, তা ওই চুক্তিতে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই।  

গত বছরের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু করেছে ১৫ দেশের বাণিজ্যিক জোট আরসেপ। এই ১৫ দেশের মোট জনসংখ্যা ২.৩ বিলিয়ন (বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ), বাজারের আকার ২৬.৩ ট্রিলিয়ন ডলার।

নিয়মানুযায়ী, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে অন্য দেশও আরসেপে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করতে পারছে। ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কা ও হংকং ব্লকটিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ও সমপর্যায়ের দেশ ভিয়েতনাম কোন ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরসেপে যোগদান করেছে, সেগুলোও পর্যালোচনা করা হয়েছে সভায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, আরসেপকে চীনের নেতৃত্বাধীন বাণিজ্যিক ব্লক বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়াও এই জোটের সদস্য। তাছাড়া ভারত যেকোনো সময় প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে আরসেপের সদস্য হতে পারবে।

আরসেপভুক্ত দেশগুলো নিজেদের শুল্ক কমানোর জন্য ১০ বছর থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত সময় নিয়েছে। বাংলাদেশ আরসেপে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করলে আরসেপভুক্ত ১৫ দেশ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটা দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পৃবে দরকষাকষি করতে হবে। ফলে একেক দেশের সঙ্গে একেক রকম দরকষাকষি করতে হবে।

সভায় উপস্থিত বেশিরভাগই আরসেপে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে মতামত দিয়েছে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, আরসেপে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে আঞ্চলিক ভ্যালু চেইনে সংযুক্ত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের রপ্তানি কতটুকু বাড়তে পারে, সে সম্ভাবনা নিয়েও মতামত উঠে এসেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে কম্প্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ চুক্তি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারতও আরসেপে যোগদানের বিষয়ে আলোচনা করে রেখেছে, চূড়ান্তভাবে যোগ দেয়নি। যেকোনো সময় দেশটি চাইলে আরসেপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে যোগ দিতে পারবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে আবার আঞ্চলিক ভ্যালু চেইনে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি অন্যতম ইস্যু হিসেবে সভায় আলোচিত হয়েছে।

মঙ্গলবারের সভাটি ছিল আরসেপ নিয়ে বাংলাদেশের চতুর্থ সভা। এর আগে আরসেপ সম্পর্কে বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে প্রতিবেদন সংগ্রহ করে তা নিয়ে প্রথম সভাটি করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সভায় আরসেপে যোগদানের বিষয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

এদিকে ট্যারিফ কমিশন তাদের সমীক্ষায় আরসেপে যোগদানের সুবিধা-অসুবিধাগুলো খতিয়ে দেখেছে। তাদের প্রতিবেদনে মূলত এ জোটে যোগ দেওয়ার পক্ষেই মত দেওয়া হয়েছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আরসেপে যোগ দিলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ১৭.৩৭ শতাংশ বাড়বে, যার পরিমাণ পাঁচ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক