দক্ষিণ চট্টগ্রামের আড়াই লাখ গ্রাহক এখনো অন্ধকারে

সংগৃহীত ছবি

দক্ষিণ চট্টগ্রামের আড়াই লাখ গ্রাহক এখনো অন্ধকারে

এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

সাতদিনের টানা অতি ভারী বর্ষনে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক। সপ্তাহজুড়ে বিদ্যুৎ না থাকায় জনজীবনেও দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়।  

বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ঝড়ো হাওয়ায় খুঁটি ভেঙে পড়া, হেলে পড়া, ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়া, ক্রস আর্ম নষ্ট, ইনস্যুলেটর নষ্ট, তার ছিঁড়ে যাওয়া ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এই ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের আটটি উপজেলায় পটিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতায় ৬ লাখ ৩৪ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে।

টানা বর্ষণে এসব উপজেলা গুলোর অন্তত ২ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক গত ছয়দিন ধরে বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে ভয়াবহ বন্যার পানির সঙ্গে মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্বাভাবিকভাবে ১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন এই উপজেলাগুলোতে। কিন্তু এর অর্ধেক বিদ্যুৎ ও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দক্ষিণ চট্টগ্রামে দোহাজারীতে যে গ্রিড সাব-স্টেশন রয়েছে, এটাও বন্ধ হয়ে গেছে বন্যার কারণে।

বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় এই পর্যন্ত খুঁটি ভেঙে পড়েছে ৪৪টি, খুঁটি পড়ে গেছে ২৩টি, খুঁটি হেলে পড়েছে ৫৪টি, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেছে ২৭টি, ক্রস আর্ম নষ্ট হয়ে পড়েছে ৬৩টি, ইনস্যুলেটর নষ্ট হয়েছে ৪৮টি এবং ৪৫২টি স্পটে তার ছিঁড়ে গেছে।

ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ব্যাপারটির ব্যাখা দিতে বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে চলমান দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার ৮ উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সার্বিক বিষয় নিয়ে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রাম পটিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১।

সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র জিএম প্রকৌশলী  দিলীপ চন্দ্র চৌধুরী দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্তার সার্বিক বিষয় তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, বিগত কয়েক বছরেও এমন ভারী বৃষ্টি হয়নি, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়নি। বিদ্যুৎ ব্যবস্হার এমন বিপর্যেয় পড়বে আমরা কখনো কল্পনা করিনি।  

তিনি আরো বলেন, ছয়দিনের টানা অতি ভারী বর্ষণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়া, বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণে না আসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় কোন ভাবেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে পারছি না। ভারী বৃষ্টিপাত কমে গেলে পানির উচ্চতা আরো দুই থেকে তিন মিলিমিটারের নিচে নেমে গেলেই আমরা বিদ্যুতের খুঁটি, ট্রান্সফরফার, ছেঁড়া তারগুলো পুনরায় স্থাপন করতে পারবো। আশাকরি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়েছে, অব্যাহত টানা বর্ষণে গত ৭ আগষ্ট মাঝরাত হতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অংশের বেশ কিছু জায়গায় মহাসড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৮ আগষ্ট সকালে দোহাজারী ১৩২/৩৩ কেভি গ্রীড উপ-কেন্দ্রে পানি প্রবেশ করে। ফলে ফিডার অপারেশনে ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় এবং অস্ত্র পরিসরের লোহাগড়া, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া ফিডার টিপ করায় লাইন চেকিং ছাড়া ট্রায়াল দেওয়া সম্ভব হয় নাই। পরবর্তীতে লাইন চেকিং কালে লোহাগাড়া ৩৩ কেভি লাইনের সাতকানিয়া এলাকায় এবং চন্দনাইশ ৩৩ কেভি লাইনের জামির জুরি বিল এলাকায় ক্লিয়ারেন্স কমে (৩/৪ ফুট ) ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাছাড়া সাতকানিয়া উপকেন্দ্রের (কেরানীহাট) অভ্যন্তরে প্রায় ৫ ফুট পানি উঠে পাওয়ার ট্রান্সফরমারের বডি প্রায় ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় অস্ত্র পবিসের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও লোহাগাড়া উপজেলার ৩৪ টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র চালু করা সম্ভব হয় নাই। ফলে উক্ত তিন উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিহীন আছে।

এছাড়াও দোহাজারী গ্রীড হতে পটিয়া ৩৩ কেভি লাইনের ও সাঙ্গু নদীর উপর ক্লিয়ারেন্স কমে ৩/৪ ফুট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। পানির উচ্চতা ৩/৪ ফুট কমা ছাড়া বর্ণিত ৩৩ কেভি লাইন ৩টি চার্জ করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। দোহাজারী গ্রীড উপকেন্দ্রের বাঁশখালী ৩৩ কেভি ফিডারের আমিলাইশ এলাকায় গত ৭ জুলাই সন্ধ্যা সাতটার দিকে ৫ টি খুঁটি পড়ে যায়। চলাচলের রাস্তায় পাহাড়ী ঢলে পানি উঠে যাওয়ায় ৩৩ কেভি লাইন মেরামত এর জন্য ক্রেন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

স্পটে প্রায় ৭-৮ ফুট পানি এবং ড্রেন ব্যাতিত লাইনটি মেরামত করা সম্ভব না হওয়ায় মেরামত বিলম্বিত হচ্ছে। দোহাজারী গ্রীড হতে অস্ত্র পবিসের আউটগোয়িং ৩৩ কেভি ফিচার বন্ধের কারণে বিকল্পভাবে পটিয়া উপজেলায় শিকলবাহা গ্রীড হতে এবং বাঁশখালী উপজেলায় শাহমীরপুর ও মাতারবাড়ী গ্রীড হতে আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সচল রাখা হয়েছে। কিন্তু লোহাগাড়া, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলায় ৩৩ কেভি লাইন ও উপকেন্দ্র ঝুঁকিতে থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করা সম্ভব হয় নাই। ৬ দিনের টানা বর্ষণে অনেক স্পটে গাছ পড়ে দুটি ভেঙ্গে তার ছিড়ে লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

news24bd.tv/SHS