আবারও আলোচনায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত লতিফ সিদ্দিকী

সংগৃহীত ছবি

আবারও আলোচনায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত লতিফ সিদ্দিকী

অনলাইন ডেস্ক

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার জোকারচরে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণসংযোগ করেছেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এই নেতা সম্প্রতি রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় হয়ে ওঠায় আবারও আলোচনায় এসেছেন। তাকে নিয়ে রাজনৈতি মহলে চলছে নানা গুঞ্জন।    

মঙ্গলবার তিনি জোকারচরে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া যাবে না।

সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তাদের দমন করতে হবে। বিএনপি আগামী অক্টোবর মাসে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উৎখাত করার ঘোষণা দিয়েছে- এটা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির উত্থানের সুর। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। ’

একই দিন সকালে আতিয়া মাজারে যাওয়ার সময় দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল-সিলিমপুর সড়কের লতিফ সিদ্দিকীর গাড়ি বহরে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে।

তবে বাধার বিষয়টি লতিফ সিদ্দিকী অস্বীকার করেন।

দেলদুয়ার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাছির উদ্দিন মৃধা জানান, গাড়ি বহরে হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। তবে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী গণসংযোগে বলেন, বিএনপি নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন অক্টোবর মাসে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উৎখাত করবে। আমার বিবেক থেকে এটা প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি তো কোনো কালেই সন্ত্রাস করিনি।

এটা প্রতিহত করতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। সে জন্য কালিহাতীর জোকারচর ও গোহালিয়াবাড়ি এলাকায় এসেছি। কোনো সভা-সমাবেশ না করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে এসেছি। নেতাকর্মীদের বলছি, নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হও। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ১৪ দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেবেন।

এ গণসংযোগের সময় লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে তার সহধর্মিণী সাবেক এমপি লায়লা সিদ্দিকীসহ কালিহাতীর উপজেলার আওয়ামী ঘরনার একাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। গণসংযোগ শেষে লতিফ সিদ্দিকী তার কালিহাতীর বাসায় কিছুক্ষণ অবস্থান করে রাতে ঢাকায় চলে যান।

এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর নিজ নির্বাচনী এলাকা কালিহাতীতে আসা কিংবা গণসংযোগের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা আলোচনা। তিনি আওয়ামী লীগে কি ফিরবেন?  নাকি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হয়, সেখান থেকে প্রার্থী হবেন? এসব বিষয়ে পুরো কালিহাতী এবং টাঙ্গাইলে চলছে জোর আলোচনা বিশ্লেষণ। কালিহাতীর উপজেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও চলছে একই কথাবার্তা আলাপচারিতা।

এর আগে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর কাছে কাদেরীয়া বাহিনীর অস্ত্র সমর্পণের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। সে অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন। গত ৩০ আগস্ট টাঙ্গাইল শহীদ মিনারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসের শোক সভায় লতিফ সিদ্দিকী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি এখনো নিজেকে আওয়ামী লীগার হিসেবে দাবি করেন।

লতিফ সিদ্দিকীর কালিহাতীতে গণসংযোগের বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, লতিফ সিদ্দিকী একজন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা ও একসময় আমরা একসঙ্গে দল করেছি। কিন্তু তিনি এখন আওয়ামী লীগের কেউ না। তিনি কালিহাতীতে আসতেই পারেন। তবে এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।  

মোজহারুল ইসলাম তালুকদার আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কালিহাতীর আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুসংগঠিত। তবে লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে আমাদের নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

উল্লেখ্য, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ২০১৪ সালে হজ ও তাবলীগ জামাত এবং শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। ফলে দল ও মন্ত্রীত্ব থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পরে ২০১৮ সালে লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতীতে সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ট্রাক প্রতিক নিয়ে এমপি পদে নির্বাচন করেন। সে নির্বাচনের গণসংযোগে তার গাড়িবহরে বিপক্ষরা হামলা করে। পরে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। এক পর্যায়ে ঢাকায় গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে লতিফ সিদ্দিকী সেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক সিদ্দিকী পরিবারের পৈত্রিক নিবাস কালিহাতীর নাগবাড়ী ইউনিয়নের ছাতিহাটী গ্রামে।

news24bd.tv/আইএএম