২৮ অক্টোবর: কোন পক্ষ কী বলছে? পুলিশ যা বলছে...

সংগৃহীত ছবি

২৮ অক্টোবর: কোন পক্ষ কী বলছে? পুলিশ যা বলছে...

আলী আজম

২৮ অক্টোবর ঢাকায় বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমাবেশ করছে। তাদের মধ্যে সংঘাতমূলক পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন অনেকে। গণমাধ্যমে এ নিয়ে অনেকে যৌক্তিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তবে কেউ কেউ এ পরিস্থিতিকে শুধু দুই দলের ক্ষমতার লড়াই হিসেবে দেখছেন।

তাদের মতে, এখানে জনগণ কোনো পক্ষ নয়, দুই দলের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে সাধারণ মানুষের কোনো স্বার্থ বা স্টেক নেই।

আগামীকাল সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর একাধিক প্রবেশমুখে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। তারা ঢাকার বাইরে থেকে আসা যানবাহনে ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করছে বলে জানা গেছে।

কী বলছে আওয়ামী লীগ?
আগামীকালকের সমাবেশের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে অশান্তির বিরুদ্ধে জবাব দেব।

আমাদের সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। কেবল মিছিল শেষ হলেই শেষ নয়, সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। এটা দেশের আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ। তাই সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, এদের (বিএনপি) দুরভিসন্ধি আছে। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সাথে নিয়ে এরা যেকোনো অশুভ চক্রান্ত করতে পারে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামীকাল স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করতে চাই। আমরা উত্তরায় যে সমাবেশ করি, একটা থানায় যে সমাবেশ করি সেখানে যে উপস্থিতি হয় তার সাথে সারাদেশ থেকে যে মানুষ এসে জমায়েত হয় তার তুলনা করা হয়।

তিনি বলেন, আগামীকাল ইনশাআল্লাহ ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের নেতাকর্মীরা দলে দলে শান্তি সমাবেশে আসবে বায়তুল মোকাররমে। সকাল ১১টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করব। দুপুর ২টার পর মূল সমাবেশ হবে।

মির্জা ফখরুল অনুমতির বিষয়ে মিথ্যা বলেছেন দাবি করে তিনি বলেন,পুলিশ এখনও আমাদের অনুমতি দেয়নি। ফখরুল এসে দেখে যান আমরাও অনুমতি পাইনি।

বিএনপি কী বলছে?
আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠেয় সমাবেশ রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই করতে চায় বিএনপি এমনটাই জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  

দলের মহাসচিব বলেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের অনুমতির জন্য তারা শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন এবং এরপর তারা ভেন্যুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

 বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা তো বলেছি, আমরা নয়াপল্টনে করতে চাই। চিঠি দিয়েছি, মৌখিকভাবেও বলে দিয়েছি।

সরকারি দলের নেতাদের নানা 'উসকানিমূলক' বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে অনেকগুলো কর্মসূচি আমরা সফলতার সঙ্গে এখানে (নয়াপল্টন) করেছি। এত কিছুর পরও। এর আগেও রেইড হয়েছে। এর আগেও মারপিট করেছে। মেরে ফেলেছে গুলি করে। তারপরও কিন্তু আমরা আমাদের জায়গা থেকে এতটুকু সরিনি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই। '

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তারা যদি কোনো রকমের বাড়াবাড়ি করে অত্যাচার নির্যাতন করে, তার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারকে বহন করতে হবে। 'বিএনপি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি পালন করছে, করবে', যোগ করেন তিনি।

বিশৃঙ্খলা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে আন্দোলন করতে পারবে। এটা রাজনৈতিক দলের অধিকার। কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তারা ব্যবস্থা নেবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাতে আদালত বসানোর যে অভিযোগ করেছেন, তার জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ওনাকে (মির্জা ফখরুল) ভালো জানতাম। অনেক কথাই মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলেন তিনি। ’ 

পুলিশ যা বলছে

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আগামীকাল শনিবার আওয়ামী লীগ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এবং বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে। আজ শুক্রবার রাতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।  

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান রাত ৮টার দিকে বলেছেন, বিএনপিকে কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।  

আওয়ামী লীগকেও তাদের পছন্দের জায়গা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার নিশ্চিত করেছেন।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণাটি দিয়েছিল ১৮ অক্টোবর। এরপর আওয়ামী লীগও একই দিন ঘোষণা দেয় যে তারা ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে। এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনাকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।

বিএনপি মহাসমাবেশের ঘোষণার তিন দিনের মাথায় ২১ অক্টোবর পুলিশকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানায়। পুলিশের পক্ষ থেকে ২৬ অক্টোবর বিএনপিকে চিঠি দিয়ে মহাসমাবেশের জন্য দুটি বিকল্প জায়গা ভাবতে বলা হয়। সঙ্গে চাওয়া হয় সাত ধরনের তথ্য—সমাবেশে লোকসমাগমের সংখ্যা, সময়, বিস্তৃতি, কোন কোন স্থানে মাইক লাগানো হবে, অন্য দলের কেউ উপস্থিত থাকবেন কি না ইত্যাদি।

বিএনপি একই দিন পুলিশকে চিঠি দিয়ে জানায়, তারা সমাবেশ নয়াপল্টনেই করবে। অন্য কোনো জায়গার প্রস্তাব বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।

২৬ অক্টোবর ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে রাস্তায় কোনো সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। মাঠ কিংবা খোলা স্থান নির্বাচন করে, সেটি উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে।

নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে আজ দুপুরে পুলিশ সদস্যদের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা লাগাতে দেখা যায়। অপর দিকে সকাল থেকেই বিএনপি নেতা-কর্মীরা সেখানে জড়ো হতে থাকেন। বিকেলে ভিড় বাড়তে থাকে।

অনুমতি পায়নি জামায়াত
আগামীকাল রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। তবে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে আগেই ডিএমপি জানিয়েছিল জামায়াতকে অনুমতি দেওয়া হবে না। আজও ডিএমপির সভা শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, জামায়াতকে মহাসমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

অবশ্য বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান বলেছেন, অনুমতি না পেলেও তাঁরা মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার বিকল্প দুটি ভেন্যুর নামসহ ৭টি তথ্য চেয়ে আওয়ামী লীগকে চিঠি দেয় পুলিশ। পরে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুলিশের চিঠির চাওয়া সব তথ্য দেওয়া হয়। আগামী ২৮ অক্টোবর বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিএনপি। একই দিন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের ডাক দিলে তা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
news24bd.tv/A