ঝিনাইদহে অব্যবহৃত স্বাস্থ্য বিভাগের ৬০ কোটি টাকার আবাসিক ভবন

অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টার।

ঝিনাইদহে অব্যবহৃত স্বাস্থ্য বিভাগের ৬০ কোটি টাকার আবাসিক ভবন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

বাংলাদেশের একমাত্র ঝিনাইদহ ২৫ শয্যার সরকারী শিশু হাসপাতালে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বসবাসের জন্য ছয়টি ভবনে ২২টি ইউনিট আছে। সুরম্য এই ভবনগুলোর মধ্যে মাত্র চারটি ইউনিট ব্যবহার হয়। বাকী ১৮টি ইউনিট বছরের পর বছর পড়ে থাকে।

মানুষ বসবাস না করায় প্রতি বছরই ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে রক্ষনাবেক্ষন বাবদ মোটা অংকের টাকা ব্যয় করতে হয়।

হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অন্তত ৩ বার মেরামত করা হয়েছে। বসবাসের জন্য উপযোগী পরিবেশ থাকার পরও কর্মকর্তা কর্মচারীরা হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকেন না।

সর্বশেষ ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করে আবাসিক ভবনগুলো মেরামত করা হয়। একইভাবে শৈলকুপা উপজেলার দুধসর মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রটিরও একই অবস্থা।

তিনতলা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে রয়েছে অন্তঃসত্তা নারীদের সিজার ও শিশুদের চিকিৎসার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। চিকিৎসক ও স্টাফদের জন্য রয়েছে আবাসিক ভবন। কিন্তু লোকবল না থাকার কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে ভবনগুলো।

জেলার সীমান্তবর্তী মহেশপুরের ভৈরবা বাজারের ২০ শয্যা হাসপাতাল, ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন, ৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে কালীগঞ্জের ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধীকার প্রকল্পের আওতায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতটি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৫ লাখ টাকা ব্যায় করে একাধিক কমিউনিটি ক্লিনিক সংস্কার করা হলেও যথাযথভাবে সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ ২৫০ বেডের জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের বাসভবনটিও খালি পড়ে আছে। ভবনটিতে বসবাস না করলেও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গুলশান আরা লিমার কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা বাসা ভাড়া কাটা হচ্ছে। কিন্তু ওই ভবনে বসবাস না করলে সেটি কত দিন বসবাসের যোগ্য থাকবে সেটাই বিবেচ্য হয়ে দাড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির রায়হানের দেয়া তথ্যমতে, ঝিনাইদহ জেলায় নতুন ভবন নির্মান ও পুরাতন ভবন সংস্কারের জন্য ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। বাংলাদেশের একমাত্র ঝিনাইদহ ২৫ শয্যার সরকারী শিশু হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. জামিল ফরিদ জানান, মফস্বল শহরে সরকারী বাসা ভাড়া সমন্বয় করলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে ভেবে দেখা জরুরী বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে জনবলের অভাব থাকায় সরকারী বাসা খালি পড়ে থাকছে। বাংলাদেশের একমাত্র ঝিনাইদহ ২৫ শয্যার সরকারী শিশু হাসপাতালে ২৩টি পদ শূন্য রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী আমিনুর রহমান টুকু জানান, বসবাস না করায় ভবনগুলো যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি লোকবল না থাকায় স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে না প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। তাই স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনবল নিয়োগ দেওয়া জরুরী বলে তিনি দাবী করেন।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা: শুভ্রা রানী দেবনাথ জনবল সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে জনবল নিয়োগ দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। পর্যায়ক্রমে জনবল নিয়োগ করা হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

news24bd.tv/ab