ক্যান্সার প্রতিরোধে নারীরা সতর্ক হোন

সংগৃহীত ছবি

আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস

ক্যান্সার প্রতিরোধে নারীরা সতর্ক হোন

ডা. লায়লা শিরিন

নারীদের নানা ধরনের ক্যান্সার হয়। তবে জরায়ু ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা অনেক বেশি। চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে এসব ক্যান্সারে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বা প্রগ্নোসিস (রোগের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে পূর্বাভাস) এখন বেশ ভালো। এ জন্য প্রথমেই গুরুত্ব দিতে হবে ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ে।

আগেভাগে ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারাটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য খুব জরুরি বিষয় হলো—খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ওজন নিয়ন্ত্রণ, পরিমিত ব্যায়াম করা, পারিবারিক ইতিহাস জানা, সঠিক সময়ে বিয়ে আর সন্তান জন্মদান, নিয়মিত স্তন্যদান ইত্যাদি।

নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা
স্তন ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে নির্ণয়ের জন্য নারীদের নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। ২০ বছর বয়স থেকে সব নারীর এই পরীক্ষাটা করা উচিত।

সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার পর, প্রথম ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে প্রতি মাসে অন্তত একবার করলে ভালো হয়। যদি কারো মাসিক না হয় তখন ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ দিয়ে রেখে যেদিন স্তন পরীক্ষা করা হবে সেদিন (সাধারণত ব্যথা যেদিন কম থাকে সেদিন) করানো যায়। পরের মাসগুলোয় এই দিনে নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করুন। গর্ভবতী এবং স্তন্যদানের সময়ও স্তন পরীক্ষা করবেন। কারণ এই সময়ের ক্যান্সার সাধারণত মিস হয় বেশি, যার কারণে বেশির ভাগ খারাপ হয়ে যায়। তাই এটি অভ্যাসে পরিণত করুন; নিজের খেয়াল নিজেই রাখুন।

জরায়ু মুখের ক্যান্সার
বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কম বয়সে বিয়ে, অধিক সন্তান জন্মদান, ঠিকমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা, কিছু ক্ষেত্রে বহুবিবাহ বা বহু সঙ্গী থাকা ইত্যাদি এই ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, অধিক সন্তান প্রসব নিরুৎসাহ করা, ধূমপান, পানের সঙ্গে জর্দা-সাদা পাতা-গুল বর্জন করা দরকার। সামাজিক অনুশাসন মেনে চলার পাশাপাশি নারীদের নিয়মিত পেপস স্মেয়ার টেস্টে অংশ নেওয়া উচিত। এতে রোগ আগে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এখন জরায়ু ক্যান্সার রোধে টিকাও আছে। কাজেই সন্তান ধারণের বয়সে টিকা নিন; রোগ প্রতিরোধ করুন। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা যায় তাহলে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের প্রগ্নোসিস খুবই ভালো।

পায়ুপথের ক্যান্সার
পুরুষদের এই রোগ বেশি হলেও কনজারভেটিভ মানসিকতার কারণে নারীদেরও এ রোগটি হয়। আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, স্তন ক্যান্সারের সচেতনতা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রচারণার কারণে। কিন্তু যারা খুব লজ্জা বোধ করেন বা ব্যক্তিগত সমস্যা বলতে দ্বিধা করেন, তাঁরা পায়ুপথের সমস্যা এড়িয়ে যান বা রোগটি লুকিয়ে রাখেন। অনেকে নারী চিকিৎসকদের কাছে গিয়েও বিষয়টি সহজভাবে বলতে পারেন না। তাঁদের ক্ষেত্রে অনেকটা ছড়িয়ে যাওয়ার পর পায়ুপথের ক্যান্সার ধরা পড়ে। কিন্তু স্তন ক্যান্সারের মতো পায়ুপথের ক্যান্সারও নিরাময়যোগ্য। আগে ধরা পড়লে বেঁচে থাকার হার অনেক বেশি।

পায়ুপথের ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু করণীয়—

  • পায়ুপথে যদি তাজা রক্ত না গিয়ে মরা রক্ত, আমযুক্ত রক্ত, পেটে মোচড় দিয়ে অথবা কালো দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা হয়—তবে তা এ ধরনের ক্যান্সারের লক্ষণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আবার মলদ্বারের একদম কাছে না হয়ে ক্যান্সার যদি ওপরের দিকে হয়, সে ক্ষেত্রে রোগীর একমাত্র লক্ষণ শুধু রক্তশূন্যতা ও ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া হতে পারে।
  • ব্যথা-বেদনা আর পায়খানা করার সময় ফোঁটা ফোঁটা রক্তপাত—এটি খুবই কম ক্যান্সারের কারণে হয়। এটিকে ‘এনাল ফিশার’ বলে, যা পায়ুপথ ছিঁড়ে রক্তপাত হয় এবং ছোট্ট একটি অপারেশনে ভালো হয়ে যায়। কখনো কখনো অপারেশন না করে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেও রোগীরা ভালো থাকতে পারেন।
  • ব্যথা-বেদনা ছাড়াও অনেক সময় রক্তপাত হতে পারে। অনেকে এটা সহ্যও করে থাকেন। তাঁরা ভাবেন, হয়তো এটা খারাপ কিছু না। কিন্তু মনে রাখা দরকার, বেশির ভাগ ক্যান্সারে প্রাথমিকভাবে ব্যথার উপসর্গ থাকে না। সে কারণে রোগীরা অপেক্ষা করেন এবং রোগ নিরাময়ের পর্যায়ের অনেক পরে তাঁরা চিকিৎসার জন্য যান।
  • শুধু Digital Rectal Exam (DRE) বা পায়ুপথের আঙুলের যে পরীক্ষা চিকিৎসকরা করে থাকেন তাতেও অনেক আগেই বেশির ভাগ পায়ুপথের ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব। এর পাশাপাশি কোলোনোস্কপি পরীক্ষা করা জরুরি।
  • এ ছাড়া নারীদের পান, গুল, তামাক, জর্দা ব্যবহার করার কারণে মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঝুঁকিও অনেক বেশি থাকে। পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সারসহ অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কাজেই এসব বিষয়ে শুধু নারীদের নয়, বরং সবার সচেতন হওয়া জরুরি।

লেখক : ডা. লায়লা শিরিন, সহযোগী অধ্যাপক, ক্যান্সার সার্জারি বিভাগ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

news24bd.tv/health

এই রকম আরও টপিক