নবীজি (সা.) যেভাবে দোয়া করতেন

নবীজি (সা.) যেভাবে দোয়া করতেন

 মো. আবদুল মজিদ মোল্লা

আনাস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি যত দিন পর্যন্ত আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি তত দিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকব, তুমি যাই করে থাক আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তবু আমি তোমাকে ক্ষমা করব, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তা হলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪০)

আলোচ্য হাদিসে বান্দাদের হতাশ না হয়ে আল্লাহর প্রতি আশাবাদী হতে বলা হয়েছে।

গুনাহের পরিমাণ যত বেশিই হোক না কেন, আল্লাহ বান্দাকে মাফ করে দেবেন। যদি না সে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে। হাদিসে বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা আল্লাহর কাছে চাইলেই আল্লাহ খুশি হন।


আর যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না, তিনি তার ওপর রাগান্বিত হন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৩)
দোয়া করার শিষ্টাচার : আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কিছু শিষ্টাচার ও শর্ত রয়েছে। এসব শিষ্টাচার দোয়া কবুল হওয়ার জন্য সহায়ক। যেমন—

১. নিবিষ্ট মনে দোয়া করা : নবী করিম (সা.) বলেন, কবুলের দৃঢ় প্রত্যয় রেখে তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।

জেনে রেখো! উদাসীন ও অমনোযোগী মনের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯)
২. কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা : মহানবী (সা.) বলেন, তোমাদের প্রত্যেকের দোয়া কবুল করা হয়, যতক্ষণ সে তাড়াহুড়া না করে। যেমন সে বলল, আমি দোয়া করলাম কিন্তু তা কবুল হলো না। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৭)

৩. আশা নিয়ে দোয়া করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ যখন দোয়া করে তখন এভাবে বলা উচিত নয় যে হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করেন যদি আপনার ইচ্ছে হয়। বরং বড় আকাঙ্ক্ষা পোষণ করবে। কেননা তিনি এমন এক সত্তা যে কোনো কিছুই দান করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। (মুসলিম, হাদিস : ৬৯৮৮)

৪. অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করা : আল্লাহ অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রার্থনা করো গোপনে অশ্রুসিক্ত হয়ে। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫)

৫. আল্লাহর গুণবাচক নামের সঙ্গে দোয়া করা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। সুতরাং তোমরা তাঁকে সে নামেই ডাকবে। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৮০)

মুমিনের কোনো দোয়া নিষ্ফল নয় : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো মুসলমান যখন কোনো দোয়া করে, যাতে কোনো গুনাহের কাজ অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছেদের কথা নেই, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে এ তিনটির যেকোনো একটি দান করেন। হয়তো তাকে তার প্রার্থিত বস্তু দুনিয়াতে দান করেন বা তা তার আখিরাতের জন্য জমা রাখেন অথবা তার অনুরূপ কোনো অমঙ্গলকে তার থেকে দূরে রাখেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১১১৩৩)

এই রকম আরও টপিক