খিলগাঁও একটা উদাহরণ হতে পারে

শোয়েব সর্বনাম

বেইলি রোডে আগুন

খিলগাঁও একটা উদাহরণ হতে পারে

শোয়েব সর্বনাম

খিলগাঁও এলাকাটা উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। নব্বইয়ের দশকে মহল্লায় একটা মাত্র চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ছিল তালতলার ওইদিকে। মিলেনিয়ামের আগে পরে মেবি চালু হলো ভূতের আড্ডা। এই দুইটাই মহল্লাবাসীর জন্য এনাফ ছিল।

৫/৭ বছর আগে মহল্লার কিছু পোলাপান চায়ের দোকানের আড্ডা দেয়া বাদ দিয়ে একটা কফির দোকান বানায়ে আড্ডা দেয়া শুরু করে। আপন কফি হাউজ। পরে দেখা গেলো কফি খাওয়ার জন্য সারা ঢাকা শহর ওই দোকানে গিয়ে ঝাঁপায়ে পরছে। খিলগাঁও মূলত একটা নিরিবিলি আবাসিক এলাকা।
অনেকেই জানেন না, খিলগাঁও এলাকাটা ডিজাইন করেছেন পৃথিবীর সেরা দুইজন আর্কিটেক্ট ড্যানিয়েল ডানহাম ও বব বুই। তারা কমলাপুর রেলস্টেশন করার উদ্দেশে এই দেশে আসেন। ফলে, খিলগাঁও তিনটা ব্লক কয়েকদিন আগে পর্যন্তই ঢাকার সবচেয়ে সুন্দর আবাসিক এলাকা ছিল। এখন সেটা হয়ে গেছে আরেকটা বেইলি রোড।  
পল্লীমার সামনের রাস্তাটার এক ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা নাই। ফুটপাতে স্ট্রীট ফুট। আমি যেই স্যারের বাসায় প্রাইভেট পড়তাম সেই বাসা এখন কেএফসি। মহল্লার সবচেয়ে সুন্দরীর বাসাটা এখন হয়ে গেছে আপোলিয়ানো, পাস্তা বেচে দোকানটাতে, আর থাকার জন্য ওরা গুলশান চলে গেছে।  খিলগাঁও কমার্শিয়াল এলাকা না। খিলগাঁয়ের এড্রেস দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করতে পারার কথা না।  কমার্শিয়াল বিল্ডিংয়ের অনুমতি পাওয়ার প্রশ্নই নেই। বাসাগুলা সারাজীবন আবাসিক ছিল, এখন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়িদের টাকার গরমে সবাই কমার্শিয়াল ভাড়া দিয়ে ফেলছে। আরেক হিসাবে দেখলে, খিলগাঁও একটা গ্রোয়িং ইকোনোমিক এরিয়া। এখানে প্রচুর পুঁজি এসে ঢুকে পরতেছে। প্রচুর এমপ্লয়মেন্ট হচ্ছে। স্টার্ট আপ হচ্ছে। সবাই প্রফিট করতেছে। এটাকে বাধাগ্রস্ত করার কারণ নেই। ফলে স্থানীয় সরকার নমনীয়, তারাও ইয়াং জেনারেশনের বিজনেস্ ডেভলপ করার স্পেসগুলা স্মুদ রাখার চেষ্টা করে। খন প্রশ্ন হচ্ছে, এখানে যে হাজারখানেক রেস্টুরেন্ট চলতেছে, হাজার হাজার সিলিন্ডার জ্বলতেছে, সেইফটি দিবে কে? লাখ টাকার ইন্টেরিয়র, আগুন নেভানোর জন্য এক হাজার টাকা দামের অগ্নিনির্বাপক নাই। রেস্টুরেন্টগুলার ইন্টেরিয়র ডিজাইনারও জানেন না যে প্রতিটা কমার্শিয়াল কিচেন আর গেটে দুইটা অগ্নিনির্বাপকের স্পেস রাখা লাগে। অথচ এইটা তাদের প্রাইমারি বাজেটেই থাকার কথা।  
বসন্ত আগুনের সিজন। আমাদের শহরে কয়েকবছর পরপরই বড় ধরনের আগুন লেগে যাচ্ছে। দমকলের লোকেরা প্রতিদিন কী পরিমাণ আগুন নিভায়ে ফেলতেছেন এই তথ্য কেউই জানেন না। শুধু দুর্ঘটনার খবরগুলাই সামনে আসে। কয়েকদিনের মধ্যেই বর্ষা চলে আসবে। ঢাকায় এখন প্রতি বর্ষায় নিয়ম করে কিছু বিল্ডিং ধসে পরতেছে। শহরের ঘর বাড়ি মার্কেটগুলা পর্যবেক্ষণ করে করে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা সাইনবোর্ড ঝুলায়ে দিয়ে আসছেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। ব্যবহারের অনুপযুক্ত। কারওয়ানবাজারের মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সেই সাইনবোর্ড খুলে গোডাউনের ভেতর নিয়ে রেখে দিছেন। প্রশাসনের লোকেরা গিয়ে অনুরোধ করলে তারা মাঝে মাঝে ওই সাইনবোর্ডটা এনে টানায়ে দিতে রাজি হন তারা। এই পর্যন্তই। ওইখানে একটা বড় দুর্ঘটনার জন্য সবাই জেনেশুনে ওয়েট করতেছে। মৌচাক মার্কেটের অবস্থা আরো খারাপ। যেকোনো বিল্ডিং ধসে গেলেই প্রশাসনের লোকেরা মৌচাক মার্কেট খালি করতে তৎপরতা শুরু করে। ফাইনালি ব্যবসায়ীদের সাথে আর পেরে ওঠে না।  
এরকম আরো শখানেক বিল্ডিংয়ের নাম লিখতে পারবো আমি, যেখানে লোকেরা জেনেশুনে মৃত্যুফাঁদ বানায়ে তার ভেতরে ঢুকে বসে আছে। বছরের পর বছর এভাবেই চলতেছে। আমার মনে হয়, প্রশাসনিক বা আইনি পদ্ধতিতে এই জটিলতা নিরসন করা অসম্ভব। কিছু ব্যবসায়ী, কিছু দুর্নীতিবাজ ধরে নিয়ে জেলে ভরে রাখলে কোন কাজ হবে না। শুধু সোশাল এওয়ারনেস এই মুহূর্তে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুগুলার হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে যারা থাকতেছেন, কেন থাকতেছেন আমি জানি না। আমার প্রস্তাব, রাষ্ট্রীয়ভাবে সেইফটি উইক ডিক্লিয়ার করতে হবে। ওই সপ্তাহে সকলে নিজেদের বাসা আর কাজের ক্ষেত্রের সেইফটি ইস্যুগুলো সলভ করবে। দেশের স্থপতিরা কিছু ইমার্জেন্সি গাইডলাইন পাবলিশ করতে পারেন, প্রচারমাধ্যমগুলাতে ওই সপ্তাহভরে প্রচার করা যেতে পারে কীভাবে আমরা সেইফটি সিকিউরিটি ইত্যাদি চেক করবো। জানুয়ারি মাসে বছর শুরুর অনেক ভেজাল থাকে। নীতিনির্ধারকদের কাছে ফেব্রুয়ারি প্রথম সপ্তাহটা সোশাল সেইফটি উইক হিসেবে চালু করার প্রস্তাব থাকলো।  

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক 

news24bd.tv/ডিডি

এই রকম আরও টপিক