এবার ভারতীয় সীমান্ত রক্ষায় অস্ত্রহাতে একমাত্র নারী কমান্ডো সুমন

স্নাইপার হিটার সুমন

এবার ভারতীয় সীমান্ত রক্ষায় অস্ত্রহাতে একমাত্র নারী কমান্ডো সুমন

অনলাইন ডেস্ক

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীগুলিতে সবথেকে কঠিন প্রশিক্ষণ মনে করা হয় কমান্ডো প্রশিক্ষণকে। তারপরই রয়েছে স্নাইপার কোর্স। নারী হওয়ায়, সুমনের কাজটা ছিল আরও কঠিন। সেন্ট্রাল স্কুল অব ওয়েপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিকসের আইজি, ভাস্কর সিং রাওয়াত জানান, এই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন ৫৬ জন পুরুষ ও একমাত্র নারী হিসেবে সুমন।


এবার, সীমান্তবর্তী এলাকায় কোনোরকম ভারতবিরোধী কাজ করতে গেলেই চিন-পাকিস্তানের সেনাদের খেতে হবে এই বিএসএফ সাব-ইন্সপেক্টরের গুলি। আর সেই গুলি কোথা থেকে আসল, তা বুঝতেও পারবে না তারা। সুমন কুমারী গুলি চালাবেন স্নাইপার রাইফেল দিয়ে। মধ্য প্রদেশের ইন্দোরে অবস্থিত ‘সেন্ট্রাল স্কুল অব ওয়েপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিকস’ বা সিএসডব্লুটিতে আট সপ্তাহের কঠোর স্নাইপার কোর্স শেষ করে, সম্প্রতি, বিএসএফ-এর প্রথম মহিলা স্নাইপার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন হিমাচল প্রদেশের এই সেনা কর্মী।

স্নাইপার রাইফেল হল দূর পাল্লার রাইফেল। এতে দূরবীন লাগানো থাকে। লুকোনো কোনও জায়গা থেকে, অথবা শত্রুপক্ষের থেকে অনেক দূরের কোনও জায়গা থেকে এই রাইফেল ব্যবহার করে গুলি চালানো যায়। ফলে, শত্রুপক্ষ বুঝতেই পারে না, কোথা থেকে গুলি চলছে। তবে, যে কেউ চাইলেই এই বন্দুক চালাতে পারবেন না। এর জন্য প্রয়োজন উচ্চ প্রশিক্ষণ, অনেক দূর থেকে বিশেষ রাইফেল দিয়ে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার বিশেষ দক্ষতা। স্নাইপার যারা হয়, তারা সাধারণত লুকিয়ে থাকা, ছদ্মবেশে থাকা, অনুপ্রবেশ এবং শত্রুপক্ষকে পর্যবেক্ষণে পারদর্শী হয়। তাই, এর জন্য কঠিন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। বিএসএফ-এর প্রথম মহিলা হিসেবে সেটাই করে দেখিয়েছেন সুমন কুমারী।
প্রথম ‘নারী স্নাইপার’কে স্বাগত জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএসএফ বলেছে, তাদের বাহিনী সত্যি-সত্যিই অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে উঠছে। অর্থাৎ, লিঙ্গ-ধর্ম-বর্ণ ভেদে সকলে জায়গা করে নিচ্ছেন বাহিনীতে। তারা আরও বলেছে, বাহিনীর সর্বত্র এখন মহিলারা দ্রুত এগিয়ে আসছেন। কঠোর প্রশিক্ষণের পর, প্রথম মহিলা স্নাইপার পাওয়াটাও এই ধারাবাহিকতার অংশ বলে দাবি করেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
সুমনের কাজটা ছিল আরও কঠিন। সেন্ট্রাল স্কুল অব ওয়েপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিকসের আইজি, ভাস্কর সিং রাওয়াত জানিয়েছেন, এই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন ৫৬ জন পুরুষ ও একমাত্র মহিলা হিসেবে সুমন। প্রশিক্ষণের প্রতিটি ধাপে তিনি বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছেন। যা বাহিনীর আরও অনেক মহিলা সদস্যকে স্নাইপার প্রশিক্ষণ নিতে অনুপ্রাণিত করব বলে আশা করছেন তাঁরা।
হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলার এক অতি সাধারণ পরিবারের মেয়ে সুমন। তাঁর বাবা একজন ইলেকট্রিশিয়ান, মা ব্যস্ত থাকেন সংসারের কাজ নিয়ে। ২০২১ সালে সুমন বিএসএফ-এ যোগ দিয়েছিলেন। তিনি খালি হাতে যুদ্ধে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু, কীভাবে স্নাইপার প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা এল তাঁর মাথায়? নিজের কর্তব্য পালন করতে গিয়ে, বাধার মুখে পড়েই সুমন এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। আসলে, এর আগে সুমন সীমান্তবর্তী রাজ্য পঞ্জাবে বিএসএফ-এর এক পল্টনের নেতৃত্বে ছিলেন। সেই সময় তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, সীমান্তের ওপার থেকে পাকিস্তানি স্নাইপাররা ক্রমাগত হামলা চালায়। এরপরই, তিনি স্বেচ্ছায় স্নাইপার কোর্সের যোগ দিতে চেয়েছিলেন। যাতে, পাক সেনাদের উপযুক্ত জবাব দিতে পারেন। উর্ধ্বতন কর্তারা অনুমতি দিতেই আর পিছনে তাকাননি।
ভাস্কর সিং রাওয়াত জানান, স্নাইপার কোর্সের যে সকল প্রশিক্ষণার্থীরা অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দেন, তাঁদের ‘আলফা’ এবং ‘ব্রাভো’ গ্রেড দেওয়া হয়। সুমন পেয়েছেন ‘ইন্সট্রাক্টর গ্রেড’। এর জন্য একটি পৃথক স্ক্রীনিং পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেই পরীক্ষায় পাশ করে তিনি বিএসএফ-এর প্রথম মহিলা স্নাইপার হওয়ার পাশাপাশি, ইন্সট্রাক্টর গ্রেড পাওয়ায় স্নাইপার প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করতে পারবেন। প্রশিক্ষণের সময়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো তিনি পুরুষ প্রশিক্ষণার্থীদের পিছনে ফেলে দিয়েছেন। বিশেষ করে, এই বছর কোর্সে একাগ্রতা এবং ছদ্মবেশের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। যাতে স্নাইপাররা শত্রুর দ্বারা শনাক্ত না হয়ে তাদের অনেক কাছাকাছি যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে বেশিরভাগ পুরুষ প্রশিক্ষণার্থী ব্যর্থ হয়েছেন। সুমন কিন্তু দুর্দান্ত দক্ষতা দেখিয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি সবার আগে ছিলেন বলে জানিয়েছেন আইজি ভাস্কর সিং রাওয়াত। তাঁর মতে, কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প এবং শেখার ইচ্ছাই তাঁকে বাকিদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। খবর , টিভিনাইন অনলাইন।  

news24bd.tv/ডিডি

এই রকম আরও টপিক