ঈদুল ফিতরে করণীয় ও বর্জনীয়

ঈদুল ফিতর

ঈদুল ফিতরে করণীয় ও বর্জনীয়

অনলাইন ডেস্ক

আগামীকাল বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ঈদ যেমন আনন্দের; তেমনি ইবাদতেরও। ঈদের আনন্দ উদযাপনে আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় কিছু বিষয় রয়েছে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:

করণীয়

ঈদের দিন গোসল: ঈদের দিন সকাল সকাল গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা।

এ দিনে নামাজ আদায়ের জন্য মুসলমানরা ঈদগাহে একত্র হয়ে থাকে। তাই কারও থেকে যেন অপরিচ্ছন্নতা বা দুর্গন্ধ না ছড়ায়। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন। (বায়হাকি : ৫৯২০)

উত্তম পোশাক ও সাজসজ্জা: ঈদে উত্তম জামাকাপড় পরিধান করে ঈদ উদযাপন করা।

ইবনুল কায়্যিম (র.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) দুই ঈদেই ঈদগাহে যাওয়ার আগে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। ’ (যাদুল মায়াদ)। সামর্থ্য থাকলে নতুন পোশাক পরিধান করা। না হয় নিজের পরিষ্কার উত্তম পোশাক পরা। হজরত নাফে (র.) বর্ণনা করেন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ঈদের দিন উত্তমভাবে গোসল করতেন, সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করতেন, নিজের সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। অতঃপর নামাজে যেতেন। (শরহুস সুন্নাহ : ৪/৩০২)

সদকায়ে ফিতর আদায়: সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য নিজের ও অধীনস্থদের পক্ষ থেকে ঈদুল ফিতরে সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। অভাবী মুসলমানরা এই সদকার হকদার। সদকায়ে ফিতর আদায়ের উত্তম সময় হলো (ঈদের) নামাজে যাওয়ার আগে আদায় করা। কোনো কারণে দিতে না পারলে নামাজের পরও আদায় করা যাবে।

ঈদের নামাজ আদায়: ঈদের দিন সকালে পুরুষদের জন্য ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। বিশেষ পদ্ধতিতে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরসহ জামাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা এবং তারপর ঈদের খুতবা দেওয়া ও শ্রবণ করা। ঈদের নামাজ খোলা ময়দানে আদায় করা উত্তম।

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়: ঈদে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো শরিয়ত অনুমোদিত একটি বিষয়। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমনÑ ১. হাফেজ ইবনে হাজার (র.) বলেছেন, সাহাবায়ে কেরামরা ঈদের দিন সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেনÑ ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ অর্থÑ আল্লাহ তায়ালা আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন। ২. ঈদ মোবারক ইনশাল্লাহ। ৩. ‘ঈদুকুম সাঈদ’ বলেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়।

মুসাফাহা ও মুয়ানাকা: মুসাফাহা ও মুয়ানাকা করার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একদা হাসান ইবনে আলি (রা.) নবী করিম (সা.)-এর কাছে এলেন, তিনি তখন তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন এবং মুয়ানাকা (কোলাকুলি) করলেন। ’ (শারহুস সুন্নাহ)

ঈদের তাকবির পাঠ: তাকবির পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হয়। তাকবির হলোÑ ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহ আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ। ’ বাক্যটি উচ্চস্বরে পড়া। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতেন। ’ (মুসতাদরাক : ১১০৬)

ঈদে খাবার গ্রহণ: ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের নামাজ আদায়ের আগে খাবার খাওয়া এবং ঈদুল আজহার দিন ঈদের নামাজের আগে কিছু না খেয়ে নামাজ আদায়ের পর কোরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত। বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিন ঈদের নামাজের আগে খেতেন না। ’ (তিরমিজি : ৫৪৫)

এতিম ও অভাবীকে খাওয়ানো: ঈদের দিন এতিমের খোঁজখবর নেওয়া, তাদের খাবার খাওয়ানো এবং সম্ভব হলে তাদের নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া। এটা ঈমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, এতিম ও বন্দিকে খাদ্য দান করে। ’ (সুরা দাহার : ৮)।

আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর খোঁজ নেওয়া: ঈদের সময় আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া। পাশাপাশি প্রতিবেশীরও খোঁজখবর নেওয়া। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ইবাদত করো আল্লাহর, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার করো মাতা-পিতার সঙ্গে, নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে, এতিম-মিসকিন, প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পাশর্^বর্তী সাথি, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদের, যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী। ’ (সুরা নিসা : ৩৬)

মনোমালিন্য দূরীকরণ: জীবন চলার পথে বিভিন্ন পর্যায়ে কারও কারও সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। ঈদের সময় পারস্পরিক মনোমালিন্য দূর করা ও সম্পর্ক সুদৃঢ় করার উত্তম সময়। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে তার ভাইকে তিন দিনের বেশি সময় সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে। তাদের অবস্থা এমন যে, দেখা সাক্ষাৎ হলে একজন অন্যজনকে এড়িয়ে চলে। এ দুজনের মাঝে ওই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে প্রথম সালাম দেয়। ’ (মুসলিম : ৬৬৯৭)

আনন্দ প্রকাশ: ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যেখানে সুষ্ঠু বিনোদনের সুযোগ রয়েছে। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন আমার ঘরে এলেন, তখন আমার কাছে দুটি ছোট মেয়ে গান গাচ্ছিল বুয়াস যুদ্ধের বীরদের স্মরণে। তারা পেশাদার গায়িকা ছিল না। এরই মধ্যে আবু বকর (রা.) ঘরে প্রবেশ করে এই বলে আমাকে ধমকাতে লাগলেন যে, নবীজির ঘরে শয়তানের বাঁশি? রাসুলুল্লাহ (সা.) তার কথা শুনে বললেন, ‘মেয়ে দুটিকে গাইতে দাও হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতির ঈদ আছে, আর এটি আমাদের ঈদের দিন। ’ (বুখারি : ৯৫২)

বর্জনীয়

ঈদের দিন রোজা না রাখা: রোজা রাখলে ঈদের দিনের কাজগুলো যথাযথ পালন করা যাবে না। সে জন্য হাদিসে ঈদের দিন রোজা রাখা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ এসেছে। হাদিসে আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। ’ (মুসলিম : ২৭৩০)

বিজাতীয় আচরণ প্রদর্শন না করা: ঈদকে কেন্দ্র করে বিজাতীয় আচরণ মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদে, চাল-চলনে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে অমুসলিমদের অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে মুসলমানদের অনেকেই। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সঙ্গে সাদৃশ্য রাখবে, সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। ’ (আবু দাউদ : ৪০৩৩)

অপচয় ও অপব্যয় না করা: ঈদের কেনাকাটা থেকে শুরু করে এ উপলক্ষে সব কিছুতেই অপচয় ও অপব্যয় করা হয়। অথচ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা কোনোভাবেই অপব্যয় করো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই। ’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৬-২৭)। আরও বলা হয়েছে, ‘এবং তোমরা খাও, পান করো এবং অপচয় করো না। ’ (সুরা আরাফ : ৩১)

মদ ও আতশবাজি থেকে দূরে থাকা: ঈদের আনন্দে মদ খাওয়া, জুয়া খেলা, আতশবাজি করাÑ শরিয়তবিরোধী কাজ। শুধু ঈদ নয়, অন্য কোনো দিনও এসব করা যাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদি ও ভাগ্যনির্ধারক তীরগুলো তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। ’ (সুরা মায়েদা : ৯০)

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক