উন্মোচিত হলো মানব মস্তিষ্কের প্রথম স্পষ্ট ছবি

মানুষের মস্তিষ্কের সবচেয়ে স্পষ্ট ছবি প্রকাশ করেছেন ফ্রান্সের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের (সিইএ) গবেষকরা।

উন্মোচিত হলো মানব মস্তিষ্কের প্রথম স্পষ্ট ছবি

অনলাইন ডেস্ক

মানুষের মস্তিষ্কের সবচেয়ে স্পষ্ট ছবি প্রকাশ করেছেন ফ্রান্সের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের (সিইএ) গবেষকরা। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এমআরআই স্ক্যান ব্যবহার করে এ রকম প্রথম কোনো স্পষ্ট ছবি পাওয়া গেছে বলে দাবি তাদের।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানানো হয়।

সিইএ গবেষকরা ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো এ স্ক্যানার দিয়ে একটি কুমড়া স্ক্যান করে মেশিনটির শক্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।

পরবর্তীতে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ মেশিন ব্যবহার করে মানুষের মস্তিষ্ক স্ক্যান করার জন্য অনুমতি দেন গবেষকদের। স্ক্যানারটি ১১.৭ টেসলাস পরিমাপের একটি বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্র, যা আবিষ্কারক নিকোলা টেসলার নামে নামকরণ করা হয়েছে।

এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম অঞ্চলগুলোকে আরও পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। ফলে, মস্তিষ্কের জটিল সমস্যা, রোগ নির্ণয় এবং এর চিকিৎসায় চিকিৎসকদের আরও সুবিধা দেবে বলে দাবি করেন গবেষকরা।

প্রকল্পে কাজ করা পদার্থবিদ আলেকজান্ডার ভিগনাউড জানান, প্যারিসের দক্ষিণে মালভূমি দে স্যাক্লে এলাকায় গত কয়েক মাসে প্রায় ২০ জন সুস্থ মানুষের ওপর ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) মেশিনটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়। মস্তিষ্কের এমন নির্ভুল চিত্র এর আগে কখনও দেখা যায়নি।

আলেকজান্ডার জানান, মেশিনটি বর্তমানে হাসপাতালে ব্যবহৃত এমআরআইগুলোর চেয়ে ১০ গুণ বেশি নির্ভুল ছবি স্ক্যান করতে পারে। এ যন্ত্রের সাহায্যে সেরিব্রাল কর্টেক্সের ছোট ছোট রক্তনালিগুলো পরিষ্কারভাবে দেখা যায়, যা এখন পর্যন্ত প্রায় মানুষের ধারণার বাইরে ছিল।

ফ্রান্সের গবেষণামন্ত্রী এবং পদার্থবিদ সিলভি রিটেইলিউ বলেন, ‘এত নির্ভুল ছবি সত্যিই অবিশ্বাস্য!’ বিশ্ব এবার মস্তিষ্কের আরও উন্নত চিকিৎসার দেখা পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মস্তিষ্কে কী ধরনের আলোকপাত দেখতে পায় মেশিনটি?

সিলিন্ডারটির ভিতরে ৫ মিটার (১৬ ফুট) লম্বা এবং এতে ১৩২ টন চুম্বকীয় শক্তির একটি কয়েল রয়েছে, যা ১৫০০ এএমপিএস বিদ্যুৎ বহন ক্ষমতা রাখে। মানুষকে প্রবেশ করানোর জন্য ৯০ সেন্টিমিটার (৩ ফুট) একটি খোলা জায়গা আছে এতে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়াও একই রকম শক্তিশালী এমআরআই মেশিন নিয়ে কাজ করছে; কিন্তু এখনও তারা মানুষের ছবি স্ক্যান করা শুরু করেনি।

এমআরআই মেশিনটি তার কাজ শুরু করলে, মানুষের মস্তিষ্কের গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়। মানুষের চিন্তা-ভাবনা থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যক্রমে মস্তিষ্কে কী ধরনের অনুরণন হয়, তা স্পষ্টই লক্ষ করা যায় এ মেশিনে। গবেষকরা এরই মধ্যে মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের জন্য মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সের কোন্ অংশ বা অঞ্চলগুলো সাড়া দিয়ে থাকে, তা লক্ষ করে দেখেছেন।

প্রকল্পটির বৈজ্ঞানিক পরিচালক নিকোলাস বোলান্ট বলেন, নতুন প্রযুক্তিটি মস্তিষ্কের গঠন এবং এর গতিবিধি আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। যখন কেউ কোনো বই পড়ে বা লেখালেখি করে, তখন মস্তিষ্কে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় তা স্পষ্টই বোঝা যায় মেশিনটি দিয়ে।

আলঝেইমার নির্ণয়

আলঝেইমার হলো এক ধরনের ডিমেনশিয়া বা ক্লিনিক্যাল উপসর্গ, যা স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা এবং আচরণকে প্রভাবিত করে। এ উপসর্গগুলো বাস্তব জীবনে ধীরে ধীরে প্রকট আকারে ধরা পড়লে, স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
গবেষকরা বলছেন, এ স্ক্যানার দিয়ে আলঝেইমারের মতো মানসিক উপসর্গ এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগগুলোর কারণ খুব সহজেই চিহ্নিত করতে পারবেন তারা। বিষণ্ণতা বা সিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক অবস্থার প্রকৃত কারণও স্পষ্ট হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা। ফলে খুব সহজেই ভবিষ্যতের চিকিৎসা ব্যবস্থায়, বিশেষ করে মনোরোগ গবেষণায় প্রযুক্তির ব্যাপকতা দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিইএ গবেষক অ্যান-ইসাবেল এতিয়েনভ্রে বলেন, মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল আলঝেইমার রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেরিব্রাল কর্টেক্সের এ অংশের কোষগুলো কীভাবে কাজ করে, তা এ মেশিনের মাধ্যমে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, লিথিয়ামের মতো বাইপোলার ডিসঅর্ডারের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ কীভাবে মস্তিষ্কে কাজ করে, তার একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাবে এবার। ফলে বিজ্ঞানীরা সহজেই শনাক্ত করতে পারবেন, কোন ওষুধে রোগীদের কী ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে।

এখনই ক্লিনিক্যাল ডায়াগনস্টিক কাজে এ মেশিন ব্যবহার শুরু করা হবে না বলে জানানো হয়েছে। তবে মেশিনটির গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যতে চিকিৎসার কাজে বিশেষ অবদান রাখবে বলে মনে করেন গবেষকরা।

news24bd.tv/ab

এই রকম আরও টপিক