সুফি শিল্পী ও সাধক রনি আহম্মদের ইন্টারভিউ

চিত্রকর্ম: রনি আহম্মেদ

সুফি শিল্পী ও সাধক রনি আহম্মদের ইন্টারভিউ

 নিয়েছেন তত্ত্ব সমালোচক ইমরান ফিরদাউস

ইমরান ফিরদাউস: রনি ভাই, যোগাযোগের এইকালে মনে পড়তেছে কাঙ্গাল হরিনাথের একটা কথা। সেইটা হইলো যে- এমন যোগ দে মা যে যোগে বিয়োগ হয় না। এই যে এত যোগাযোগের বারোয়ারি মেলার মধ্যে তেরো রকমের ক্যাচাল কালচার- সেখানে মন কি আর শুধু মন ছুঁইতে পারতেছে? অভেদ করতে গিয়ে তো সব ভেদের কালচার দেখতেছি! রেকর্ড বোতাম চাপার আগে আপনেও বলতেছিলেন এইরকম কিছু?

রনি আহম্মেদ: মানে আমি বলছিলাম যে এখনকার যে কালচারটা, দুনিয়ার পৃথিবীর যে কালচারটা, এত ডিভিশনস, এত রুলস … মাইন্ড, এত বিভক্তি মানুষের মধ্যে, এত মতামত। কেউ ইউটিউব দিয়ে কথা বলে, কেউ গুগল দিয়ে বলে, কেউ টিকটক দিয়ে বলে, কেউ ফেসবুক দিয়ে বলে, কেউ ইন্সটাগ্রাম দিয়ে বলে, কেউ স্ন্যাপচ্যাট দিয়ে বলে – মানে এগুলা আসলে ভাগ হয়ে যাচ্ছে, মাইন্ড সেটআপটা ভাগ হয়ে যাছে।

আগে ছিল অখন্ড মাইন্ড, দু-চারটা ভাগ হত। এখন একই মন অনেকগুলো ভাগ হচ্ছে। তারপর ধরেন রিলস দেখছে, তারপর ব্রাউজ করছে, এইযে এভাবে উঠাচ্ছে-নামাচ্ছে, একটার পর একটা স্টোরি দেখছে অনলাইনে।

এটাকে মানে কি বলব, ইনফরমেশনও ঠিক না।

এটা হচ্ছে গ্লিমপস অব লাইটের মত, ঠিক লাইটও না এটা, মানে গ্লিম্পস অব ফাস্ট মুভিং অবজেক্ট। এটা সবসময় তাদের চোখের সামনে, সাই সাই সাই করে যাচ্ছে। এবং এটার স্পিডটা কিন্তু ইন্টারগ্যালাকটিক কারণ ইলেকট্রিকের স্পিডে যাচ্ছে সবকিছু। তো পৃথিবীর মধ্যে আমরা একটা ইন্টারগ্যালাকটিক কালচারে আছি, মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীর ভেতরে অনেকগুলা গ্রহকে পুশ করে ঢোকানো হয়েছে।

হ্যাঁ, যেটা ঢাকা শহর সম্পর্কে বলছিলাম, এখন যখন বের হই, তখন মনে হয় যে এই সিটির মধ্যেও আরেকটা সিটিকে পুশ করা হইছে। এবং একটা আধুনিক সিটি গড়ে উঠতেছে। যেটা আগের লেইডব্যাক সিটিটা আর নাই। তো পৃথিবীটাও ওরকম। একই জায়গায় অনেকগুলা গ্যালাক্সিকে মানে প্ল্যানেটকে মনে হচ্ছে পুশ করা হচ্ছে। পুশ করে এখানে মনে হচ্ছে বিভিন্ন কালচার আনা হচ্ছে। এবং সবাই সবার থেকে অপরিচিত।

এর সাথে আবার ড্রাগ কালচার আছে। নেশাদ্রব্য বেড়ে গেছে এখন, কারণ অ্যামাউন্ট অব ড্রাগস মানি এখন অনেক ওয়ার্ল্ডে। বিলিয়নস অব বিলিয়ন ডলার। এগুলা মানুষের মধ্যে এলিয়েশন তৈরি করে একেকজনকে একেকটা এলিয়েন বডিতে তৈরি করতেছে। এখন তারাই এলিয়েন, এতদিন এলিয়েন খুঁজতেছিল, এখন আর খোঁজার দরকার নাই। কারণ তারাই এলিয়েনেটেড। তাদের মধ্যে যোগাযোগ মাধ্যমগুলা হয়ে গেছে একধরনের ইন্টেলেকচুয়াল যোগাযোগ মাধ্যম আবার তার সাথে ইমোশনাল পালস দেয়া। আগে যে একটা আম গাছের তলায় দুঘণ্টা বসে আড্ডা দেবেন, ওগুলার মানে এখন কমে আসতেছে। ওগুলা নাই এখন আর। আর বাংলাদেশের গ্রামও তো কমে আসতেছে। আমাদের দেশ যদি ধরি, সেন্স অব ভিলেজ বা গ্রামের যে পরিবেশ আমরা চিন্তা করতাম ওটা আর নাই। এখন সব সেমি-গ্রাম হয়ে যাচ্ছে। বা অ্যাবসোলিউট গ্রাম…

ই: বা অবসোলিট?

র: অবসোলিট হয়ে যাচ্ছে। ইরেজড হয়ে যাচ্ছে। নাই হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু নাই হচ্ছে দ্রুত, এবং যেটা আসতেছে ওটা হচ্ছে সে নাই এর কিছু অ্যাট্রিবিউশন। বাট ওটা পরিপূরক না। যে ‘নাই’ টা চলে গেছে, তারই কিছু ভেজাইল্লা জিনিসপত্র আসতেছে। এক ধরনের স্যাম্পল। আরে এটাইতো রিয়েলিটি ছিল। আগের রিয়েলিটির একটা ডাইল্যুটেড ধারণা এখনকার সবাইকে দিচ্ছে।

আর এখনকার নিউ জেনারেশন এ গল্পগুলা সম্পর্কে জানেইনা। তারা একটা নতুন পৃথিবীতে আসছে, তাদের কাছে এই ডাইল্যুটেড রিয়েলিটিটা বা যেটা খুবই সুপারফিশিয়াল রিয়েলিটি, ওদের কাছে মনে হচ্ছে যে এটাই তো সব। এর যে শেকড়টা, এর যে গোড়াটা, এর যে গল্পগুলা, এরা তো আর তা জানে না। তারা তো জানে না কিভাবে কি হইছে, হিস্ট্রিতে কিভাবে হইছিল, হিস্ট্রি পড়া আর এটার মধ্যে বসবাস করার মধ্যে পার্থক্য আছে। বা ওটা থেকে নেওয়াটা পার্থক্য আছে।

কিন্তু এখন এমন একটা সিচুয়েশন পৃথিবীতে যে টোটালি হিস্ট্রিকে ডিনাই করার মত সিচুয়েশন। এখন হিস্ট্রি বলে হিস্ট্রিকে মুছে ফেলা হচ্ছে। মুছে ফেলে এখন যে রিয়েলিটিটা হচ্ছে নো হিস্ট্রি, অনলি প্রেজেন্ট। এবং প্রেজেন্টও না এটা, ফিউচারও না। এ আবার অতীতও না। Its kind of a virtual void. ভার্চুয়াল একটা রিয়েলিটি। এখানে মানুষজনও কাইন্ড অফ ইয়াজুজ মাজুজ মার্কা জিনিসপত্র, মানে ব্রেইনলেস এবং রুথলেস। এবং তারা কেন বেঁচে আছে সেটাও জানে না। এটা বলা আছে নবীজির হাদিসে, কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে বলা হইছে, মানুষ কেন মরবে, কে মারবে এবং কি হবে এটা কিন্তু সে বুঝবে না। যে মারবে সেও জানবে না কেন মারছে, হত্যা করছে, যে মরছে সেও জানবে না। তো এরকম অজানা একটা ফোর্স জেনারেট করা।

তো, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা হচ্ছে ইবলিশের একটা লাস্ট স্টেজ—পৃথিবী যেহেতু শেষের দিকে, কেয়ামতের কাছাকাছি আমরা—ইবলিশ এখন স্ট্রাইকব্যাক করতেসে, মানুষকে শেষ খেলাটা দেখাচ্ছে। জগৎ নিয়ে শেষ ইবলিশি কর্মকাণ্ডের, সেটারই একটা ভার্সন, এবং দজ্জালের ফেতনা যেটাকে বলে সেটাও শুরু হয়ে গেছে, সেটাতো আপনারা জানেন। তাকে ঘিরে একটা বড় তন্ত্র তৈরি হচ্ছে। ক্যাপিটালিজম দিয়ে শুরু করে সবকিছু মিলে, তারপর বিভিন্ন রকম গ্রুপস আছে এটার সাথে অ্যালাইন করে। তারপর ছেলেমেয়েদের ক্যারেক্টারিস্টিকস, তাদেরকে কিভাবে সাজানো হবে, কিভাবে তাদের মাইন্ডকে কন্ট্রোল করা হবে, সবকিছু এখন থেকে শুরু হয়ে গেছে। মানে সবকিছু একপেশে হয়ে গেছে, ওয়ান আই, ওরকম হয়ে গেছে। তারা মুক্তচিন্তার, তাদেরকে ধারণা দেয়া হচ্ছে তোমরা ফ্রি, এটা ফ্রিডম। তাদেরকে ফ্রিডমের কিছু বুঝ দিয়ে দেয়া হচ্ছে, কিন্তু তারা যখন জীবন-যাপন করছে তখন ফ্রিডম আর খুঁজে পাচ্ছে না।

ই: না। They are not free. Maybe there is freedom, but they are not free.
র: হ্যাঁ, ফ্রিডম আছে কিন্তু ফ্রি না, রাইট। They are not free. Freedom is there, but they are not free.

র: এটা ধরেন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এখন। ক্যাপিটালিজমের বাজারে আপনি সব পাবেন, কিন্তু আপনার কোন ফ্রিডম নাই।
ই: না।

র: কারণ আপনি তো একটা ফুলের দিকে তাকায়ে দুই ঘণ্টা বসে থাকতে পারছেন না।
ই: না।

র: ওই যে কানেকশনটা, প্রকৃতির সাথে কানেক্টেড না থাকাই তো বন্দিত্ব। একটা লোককে যখন কারাগারে রাখা হয়, একটা জেলখানায়, তাকে আসলে কী করা হয়? সে আউটার ওয়ার্ল্ড থেকে অ্যালুফ হয়ে যায়। আলাদা করে দেয়, তাকে বন্দী করা হয়। আমরা খোলা অবস্থায় বন্দি, আউটার ওয়ার্ল্ডে আমাদের যাওয়ার নিয়ম নাই। আমরা সবসময় বক্সের মধ্যে আছি। আমরা নেটের মধ্যে আছি। আমাদের চিন্তা-ভাবনা ওরকম, আমাদের ভ্যালুজগুলা ওরকম চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। একটা নদীর ধারে দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে জাস্ট আমি তাকায়ে থাকব, বা একটু তাকায়ে দেখলাম, একটু গন্ধ নিব…

ই: একটু ঘাস চিবালাম…

র: হ্যাঁ চিবালাম, হোয়াটেভার। একটু গরুর দিকে তাকায় থাকলাম। এসব এন্টারটেইনমেন্ট, এই যে একটা লেইডব্যাক জীবনের যে যাপন এটাই কিন্তু ফ্রিডম ছিল। বলা হচ্ছে এগুলো করে কী করবা, তোমার তো আরও মজার জায়গা আছে। এইযে মজা দিচ্ছে, মজা নিচ্ছে, টোটাল একটা ফাজলামি কালচার চারিদিকে। বিশাল ধরণের, আমি বলি এটাকে দ্য বিগেস্ট পার্টি এভার হ্যাপেনড অন প্ল্যানেট আর্থ। রাত্রি ৩টার সময় পার্টি হচ্ছে, গাম্বিয়ায় একজন নাচতেসে, মোজাম্বিকে একজন নাচতেসে, ইংল্যান্ডে একজন নাচতেসে। তারপর চায়নায় একজন নাচতেসে, বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় একজন নাচতেসে। এইযে সবাই নাচতেসে, টিকটক হেনতেন এসবের মাধ্যমে। তারপর কেউ ফাজলামি করে এটা রান্না করছে, ক্যাঁ ক্যাঁ করে কথা বলছে। যেটা মানে অনেকটা জ্বীন জাতির ভাষা। জ্বীন জাতির আচরণ। হ্যাঁ, ফাজলামি করছে—বদ জ্বিন বা এরকম টাইপের। মানে এক ধরনের আছড় করার মত জিনিসপত্র। হা হা হা।

ই: না আছড় তো করে। ওই যে ইনফ্লুয়েন্স করা আর কী? ইনফ্লুয়েন্সাররা তো বেসিক্যালি আছড় করে।

র: রাইট রাইট। হ্যাঁ আছড়মূলক যে একটা সমাজ তৈরি হইছে এবং ভেরি ফ্লিটিং, মানে চলে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে। স্পিড, মানুষের যে বডি বা নেচারের যে একটা স্পিড আছে, এটা কিন্তু একটা শান্ত। মানে নেচার কিন্তু শান্ত, একটা রিদম আছে। এই হচ্ছে মাঝে মধ্যে অশান্ত হয়, আবার শান্ততে ফিরে আসে। অশান্ত বেশিক্ষণ থাকে না। ভূমিকম্প বেশিক্ষণ থাকে না, ঝড়ও বেশিক্ষণ থাকে না। আবার সে শান্ত হয়। এখন ভূমিকম্প ঝড়ই চলছে, শান্ত হচ্ছে মাঝে মাঝে। কিন্তু ওটা একটা ফ্যানাটিক সিচুয়েশন। মানুষ এখন শক চায়। এখন সবকিছু স্টান্টবাজিতে না নিতে পারলে আর হচ্ছে না! যদিও স্টান্টবাজি কথাটা এখন ব্যবহার করে না, ভাইরাল বলে ওটাকে, বা হিটকে বলে ভাইরাল।

ই: স্টান্টবাজি থেকে আরেকটা ফ্রেইজ গেলো গিমিক। এখন স্টান্টবাজি, গিমিক দুইটা শব্দই চলে গেছে অজানায়।

র: চলে গেসে, এখন কোন শব্দ নাই, এখন হচ্ছে ভাইরাল আসছে।
ই: হ্যাঁ ভাইরাল।

র: ভাইরাল আসলে কী? ভাইরাল হচ্ছে স্টান্টবাজি আর গিমিকের মিশ্রণ।
ই: এটা হাইব্রিড কনসেপ্ট।

র: হ্যাঁ, একটা হাইব্রিড শব্দ। ভাইরাল মানে ইন জেনারেল আরকি, ওটার মধ্যে পাগলামি, ছাগলামি, বদমাইশি, ভালমানুষি সব আছে।
ই: এক জায়গায় প্যাকেট করে দিসে।

র: ভাইরাল হচ্ছে যে, আমরা তো ভাইরাস আক্রান্ত। এই যে কোভিড হলো। এগুলা আগে থেকেই ফিট করা ছিল। এখন হচ্ছে ভাইরাস আক্রান্ত পৃথিবী, ভাইরাল আক্রমণ, ভাইরাল। আগে কি হত, হিট হত, মানে উত্তাপ হত। কোন একটা জায়গায় হিট বেড়ে গেসে, ওইজন্য গরমে লোকজন চিৎকার করছে, বলছে উটকো গরম। ওটাই হিট। আর এখন হচ্ছে ভাইরাস আক্রান্ত। মানে মানুষকে আক্রমণের জায়গাগুলো আলাদা হয়ে যাচ্ছে, রোগ আসতেছে। তার মানে সামনে আরো রোগ আসবে, এটাই সিগ্নিফাই করছে। এটা ওয়েবপড/বট বলে একটা জিনিস আছে না, শব্দ ধরে ধরে। পৃথিবীর শব্দগুলা দিয়ে আপনি অনেক কিছু বুঝতে পারবেন। ধরেন ভাইরাল আছে, আর কি কি আছে না? আর কী আছে? মানে এরকম কিছু শব্দ যেগুলা দিয়ে পৃথিবীকে এখন জাজ করা যায়, বিভিন্নভাবে। এখন মনে পড়ছে না আমার।

ই: এইতো ভাইরাল, ইনফ্লুয়েন্সার আর এখন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর।
র: কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। মানে এগুলা তো কোন টেকসই ধারণা না।

ই: মেকার্স, আর্টিস্ট নাই কিন্তু।
র: আর্টিস্ট শব্দটা কিন্তু অবসোলিট হয়ে গেসে। আর্টিস্ট শব্দটাকেও ওরা ফেলে দিচ্ছে। কারণ আর্টিস্ট শব্দটা হচ্ছে ফ্রিডম। রিয়েল ফ্রিডম কিন্তু আর্টিস্টের ছিল। আর্টিস্ট মানে বিট অফ ইন্টেলেকচুয়াল বাট অলসো হি ইজ আ স্পিরিচুয়াল পারসন। এখন ওই দুটাকেই ডিনাই করতেছে তারা।
ই: এখন না রনি ভাই, সবার আলাপে খালি রিয়েলিটি রিয়েলিটি রিয়েলিটি এর চিৎকার শোনা যায়। কিন্তু কেউ ‘রিয়েল’ নিয়ে কথা বলে না।
র: রিয়েল মানে কি? রিয়েল মানে একটা পার্ট…

ই: একটা সময় আমাদের জার্নিই ছিল, বা আমরা বুঝতাম যে ইউ আর ডুইং এনিথিং অর সামথিং টু বিকাম রিয়েল। সামথিং লাইক রিয়েল, নট রিয়েলিটি।
র: মানে আমাদের রিয়েলিটিটা একটা ডিরেকশনে ছিল। এখন হচ্ছে মাল্টি-ডিরেকশনের একটা রিয়েলিটি।

ই: রিয়েলটা কই? রিয়েলটা কেন নাই আর?
র: রিয়েলটাও নাই। আর রিয়েলিটির এত মাল্টি-ডাইমেশন যে এটার কোন তাল খুঁজে পাবেন না। আজ আছে কাল নাই, যেটা ওয়ারহোল বলছিল, ফিফটিন মিনিটস অব ফেইম। তো এখন ফিফটিন মিনিটস অব রিয়েল বা রিয়েলিটি, এখনকার কথাটা হচ্ছে এটা।

ই: না আবার ব্যাঙ্কসিও বলছিল যে পনেরো মিনিটের জন্য সবাই হারায় যাইতে চাবে। এখন তো সেটাও নাই।
র: তো এখন রিয়েলিটিটা, চমস্কি ম্যানুফেকচারিং কনসেন্ট যেটা বলছে, রিয়েলিটিটা ম্যানুফ্যাকচার্ড হচ্ছে। আগে নরমাল ছিল, খুব স্বাভাবিক ছিল। সিম্পল অ্যান্ড বিউটিফুল। আগে এ দুইটা ছিল। এখন সিমপ্লিসিটি চলে গেসে, আর বিউটি খুব ইন্ডিভিজুয়ালি আপনাকে বাইর করে নিতে হবে। কোনটা বিউটিফুল কোনটা সিম্পল।

ই: মানে এখন হয়ে গেছে কমপ্লেক্স আর ন্যাস্টি মোর অ্যাফোর্ডেবল। সিম্পল আর বিউটিফুলের অ্যাগেইনস্টে কমপ্লেক্স আর ন্যাস্টি।

র: হ্যাঁ, সবকিছুর মধ্যে একটা ডার্কনেস চলে আসছে। সবকিছুর মধ্যে ডার্ক এজেন্ডা আছে। আগে এরকম অ্যাজেন্ডা-ফ্যাজেন্ডা ছিল না। এই লাইফটা তোমাকে দেয়া হচ্ছে যে এটা তুমি কাকে সার্ভ করতেছ। বেসিক্যালি অন্য একটা গোষ্ঠীকে সার্ভ করে বা কোন একটা ধারনা বা যাপন কে প্রোমট করে। ওই লোক ভাবছে যে আই অ্যাম হেভিং গুড লাইফ। কিন্তু তার গুড লাইফটা যে কত ব্যাড মটোকে প্রমোট করতেছে সে নিজেও জানে না। হা হা হা। এরকম আরকি, বুঝছেন!
ই: ব্ল্যাক ভার্সেস ডার্ক।


র: প্রত্যেকটা মানুষ কমোডিফাইড হয়ে গেছে। এটা তালিকাভুক্ত হয়ে সবার নামও আমার মনে হয় যে কোন একটা ডাটাবেজে আছে, নাম-ঠিকানা সবই আছে। একটা সেন্ট্রাল ডাটাবেজ আছে ওয়ার্ল্ডে কোথাও, ওখানে সবকিছুই আছে।

ই: সবার আছে, আমি যা জানিনা আমার সম্বন্ধে তারা সব জানে।

র: সব জানে। ফেসবুক, নেট থেকে, আর কি কি সার্ভেইল্যান্স আছে যেগুলা আমরা জানি না। বিজ্ঞান তো এখন সিক্রেটলি অনেকদূর আগাইছে। ওপেনলি তো আগাইছেই, কিন্তু সিক্রেটলিও আগাইছে।

ই: বিজ্ঞানের চেয়ে প্রযুক্তি আগায় গেছে বেশি।

র: প্রযুক্তি আগাইছে, ইনভেনশন কমে গেছে আমার মনে হয়। বাংলাদেশের যে শিক্ষাব্যবস্থা এখানে এখন দরকার ইনভেনশন অ্যান্ড স্কিল, এ দুইটা জিনিস দরকার। এ দুইটা থাকা উচিত। কারণ আমাদের দেশে যে পরিমাণ পাবলিক আছে, যে জনগোষ্ঠী আছে এদেরকে যদি ইনভেনশন অ্যান্ড স্কিলে নিয়ে যাওয়া যায় তারা রুল করবে। একটা জায়গাকে, একটা বড় অঞ্চলকে রুল করতে পারবে। তাদের সেই ক্ষমতা আছে, তাদের বুদ্ধিমত্তাও ভাল আছে। কিন্তু বুদ্ধিমত্তাকে কমানোর জন্যে আবার খাদ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে, যাতে নেক্সট জেনারেশন ডাম্ব হয়ে যায়। সেখানেও পলিটিক্স আছে, এগুলা আমি বলতে চাই না। এগুলা হয়ে গেসে আরকি।

ই: এগুলা চলতেসে।
র: চলতেসে। ফুড কোয়ালিটি একটা দেশে আপনি কমায়ে দেন এটা এক ধরনের ম্যাস মার্ডার। এই যে কিডনির অসুখ হচ্ছে, ইয়ে হচ্ছে, ডায়বেটিস বেড়ে গেসে প্রচণ্ড, এগুলা আসলে ফুড কোয়ালিটি কমানোর জন্য।

ই: পাবলিক ম্যাসাকার আরকি।
র: হ্যাঁ। এইযে ওয়েস্টে, আমেরিকায় চিকেন নিয়ে যে পলিটিক্স করছে, কালোদেরকে চিকেন খাওয়াইয়া একেবারে ডাম্ব করে রাখছে। তারপর ওবেসিটি বাড়ায়। ওরা নিজেরাও সাফার করছে, সবাইকেও সাফার করাচ্ছে বড় বড় কোম্পানিগুলার মুনাফার জন্য।

তো আমাদের এখানে ফরমালিন ও ভেজাল দিয়ে একই কাজ হচ্ছে। আমাদেরটা আরো ম্যাসিভ। ওখানে ইউ ক্যান চুজ, যে আপনি ম্যাকডোনাল্ডস যাবেন কি যাবেন না, কিন্তু এখানে ইউ ক্যানট চুজ। কারণ বাসায় আপনাকে আনতেই হবে। জিনিসগুলা নিয়ে আসতে হবে।

ই: আমাদের বাজারই তো একটা!

র: আর ওখানে বহুধরনের অপশন আছে। তুমি চাইলে খাইতে পার বিষ, না চাইলে নাই। এখানে আপনার অপশন নাই। আপনাকে খাইতেই হবে। বিষ খাওয়ানোর পিছনে বড় বড় কারণ আছে। যাতে আমরা পিছায়ে থাকি, হেন করি তেন করি। মানে এগুলা খুবই ইজি।

ই: মোটাদাগে জনগোষ্ঠী ভুয়া খাবার খাবে। ভেজাল খাবার খাবে।
র: হ্যাঁ, গ্রাম-গঞ্জেও পানি পলিউটেড। সবকিছু মানে এভরিথিং ইজ গোয়িং ডাউন অ্যাকচুয়ালি। কিছু জিনিস সংস্কার করলে আমি মনে করি, মানে সবই ঠিকাছে, কিছু জিনিসে ঝাঁকি দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা, খাদ্য—এগুলা যদি ঝাঁকি দেয়া হয় তাহলে আমার মতে ভালভাবে সাস্টেইন করবে। মানে আমাদের অনেক কিছু রেডি হয়ে আছে, এখন জাস্ট শিক্ষাব্যবস্থাকে যদি স্ট্রং করতে হবে, খাদ্যটাকে স্ট্রং করতে হবে।

ই: সেটার কোন নমুনা দেখা যাচ্ছে না। যেভাবে তারা বই-পত্র আবার চেইঞ্জ করসে এখানে স্ট্রংগার বা স্ট্রং পজিশনে যাওয়ার নমুনা দেখা যাচ্ছে না।

র: ওটা ধরেন টাইম-সাপেক্ষ, আমি জানিনা। তবে এটার প্ল্যানটা হচ্ছে, আপনি যদি চান বাংলাদেশকে শক্ত-সামর্থ্য করতে, আপনাকে একটা ফর্মে আনতে হবে। মানে একটা স্কিমের মধ্যে আনতে হবে। স্কিম এরকম হতে পারে যে ২০টা গ্রাম মিলে একেকটা স্কুল। ওই স্কুলটা কমিউনিটি স্কুল, মানে ওখান থেকে খাবার দেয়া হবে, ওখান থেকে পড়ালেখা করা হবে তাহলে বাচ্চারা এসে সারাদিনে যে ফুড কনজাম্পশনটা হবে, এটা সরকার থেকে দেয়া হবে—মানে এধরনের একটা সাপোর্টিভ কমিউনিটি গড়ে তুলতে হবে। ওখান থেকে ইন্টারন্যাশনাল টিচিং দেয়া হবে। ওখানে নেটের মাধ্যমে বাইরের শিক্ষকরা পড়াবেন। এ ধরনের কিছু জিনিস ইন্ট্রডিউস করলে একটা দেশের কিন্তু বেশিদিন লাগে না। চায়না তো এভাবেই উঠছে। তারাতো ইংরেজির অও পারে না, এবিসিডিও পারে না। আর এখনো আমাদের মধ্যে কমপ্লেক্স ঢুকায়ে রাখছে যে তুই ইংলিশ পারিস না। এটাতো কোন কাজের জিনিস না, ইংলিশ দিয়ে আমি করবটা কি! আমার দরকার গাড়ি বানানো, আমার দরকার সাইকেল বানানো, আমি কি ইংরেজি বললে এটা বানাতে পারব? পারব না। সো আমাকে যেটা বানানোর বিদ্যা সেটা দাও।

ই: যে ভাষায় ম্যানুয়ালটা পড়লে সবাই বুঝবে, শিখবে সেই ভাষাতেই ম্যানুয়েল টা লিখলেই তো চলে!

র: সোজাসাপ্টা কথা আমাকে ইন্ডাস্ট্রি বানায় দাও, আমি যাতে ইন্ডাস্ট্রি হই। একেকটা লোক একেকটা ইন্ডাস্ট্রি। যেমন, থাইল্যান্ডের ছিল ওয়ান ভিলেজ, ওয়ান ইন্ডাস্ট্রি। এরকম একটা সিস্টেমে উঠছে কিন্তু ওদের দেশটা। তো আমাদের এরকম আমাদেরকে ইন্ডাস্ট্রি বানায় দাও, প্রতিটা লোক ইন্ডাস্ট্রি হবে, তারা ক্রিয়েটিভ হবে, তারা বেরিয়ে আসবে। বাংলাদেশের লোক যথেষ্ট ক্রিয়েটিভ। কারণ এটা হচ্ছে নদীময় জায়গা, তারা কাল্পনিক চরিত্র পছন্দ করে, মানে কল্পনা পছন্দ করে।

ই: এগুলাইতো তারা বিশ্বাস করে।
র: তারা ভাববাদী, ভাবে বিশ্বাস করে। তাদের যদি লাইনে আনা যায়, দে উইল ডু ওয়ান্ডার। এদেরকে এভাবেই করতে হবে। ফুডের যে ক্রাইসিসটা, ফুডটা যদি ইজি করে দেয়, শুদ্ধ করে দেয়, আমার মনে হয় ৫ বছরে দেশ চেঞ্জ হয়ে যাবে।

ই: যেকোন কারণেই হোক সম্ভাবনার জায়গাটা বাংলাদেশে হেঁজেমজে গেছে। এখন একটা বিষয় দেখেন রনি ভাই, আগে কিন্তু যেটা ছিল যে ব্ল্যাক। ব্ল্যাক বলত মানুষজন। ডার্ক ওয়ার্ল্ড, ব্ল্যাক ম্যাজিক। এখন আমি দেখি, কেন জানি আমার মনে হয়, লোকজন ব্ল্যাককেও ডার্ক বলে দেখে। বাট ডার্ক আর ব্ল্যাক কি এক জিনিস?

র: ওহ, হ্যাঁ হ্যাঁ।

ই: অন্ধকার আর কালো কি এক জিনিস? এখানে তো ডার্ক আর ব্ল্যাক তো একাকার হয়ে গেল।

র: ডার্ক জিনিসটা হোয়াইটও হতে পারে। যেমন সাদা পোশাক পরে একজন লোক আরেকজনকে হত্যা করল। হাহাহা।

ই: সাদা পোশাকধারীরা এসে তুলে নিয়ে গেল।
র: হ্যাঁ সাদা পোশাক পরে অনেককিছু করা যায়। যেমন ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ ছবিটা, ওই যে কুবরিকের, সবাই সাদা পোশাক পরে দুধ খায়, এটার মানে কি? হা হা হা। দুধ খাচ্ছে, সাদা পোশাক পরছে, রেইপ করছে, মার্ডার করছে। সো টোটালি পুরা অপোজিট।

এই সিনেমায়ও কুবরিক ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটের আক্ষরিক অর্থকে নষ্ট করে দিছে। ইনোসেন্সের মানেও চেঞ্জ করে দিসে যে দুধ খাইলে ইনোসেন্ট হয়। সে হোয়াইটকে ডার্ক হিসেবে তুলে ধরসে। সো এটার কোন ক্যারেক্টার নাই তো। শয়তান যখন কাজ করে সে তো আরো বুদ্ধি নিয়ে কাজ করে। আরো উল্টাপাল্টা অনেক কম্বিনেশন নিয়ে কাজ করে।

ই: না আপনি একটু আগে যে ড্রাগ কালচার নিয়ে কথা বলতেছেন এই ড্রাগ কালচারে এখন তো সবকিছু একটা ডার্ক রিয়েলিটি হয়ে গেছে। সো এখানে ব্ল্যাক আর কোন কালারের নাম না! এটা মনে হয় ইন্টারেস্টিং।

র: মানে ওখানে কালার কোন ম্যাটার না। এটা হচ্ছে ডার্ক কালচার। মানে ব্ল্যাককে ওরা যেটা বলার চেষ্টা করছে যে ওইটা গণহারে একটা ইউজ করে ফেলসে, কালারের যে মানেগুলা ওগুলা চেঞ্জ করে ফেলতেছে। কালারের মানেগুলা চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে, সিম্বল চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। কারণ কালার তো আসলে সিম্বল। যখন সোসাইটিতে একটা কালার আসে সেটা সিম্বল হিসেবে আসে। পেইন্টারদের কাজ কী? নতুন করে কালার ইনভেন্ট করা, ফর্ম ইনভেন্ট করা। এইজন্যে পেইন্টাররা পেইন্টার হয়। পিকাসোর নীল, শাগালের নীল এগুলার মধ্যে হাজার হাজার মাইল পার্থক্য আছে। একেকজনের নীল একেকরকম। তারপর মাতিসের নীল এক রকম। তারপর ধরেন, আমি জাস্ট নীলটা বললাম এটা পরিচিত কালার। তো এরকম আরকি।
যেটা, ৮-১০ বছর আগের হিসাবে বিজ্ঞানীরা বলেছিল যে নেচারের মধ্যে ১৬ মিলিয়ন কালার ছিল বা আছে। মানে সায়েন্টিস্টরা বাইর করতে পারছে, আরো কালার আছে। তারপরেও কতকিছু অজ্ঞানে রয়ে গেছে এখনো।

যেমন, সিদরাতুল মুনতাহা, নবীজি মেরাজের সময় যে গাছের কথা বলছিলেন। এটা কিন্তু জিবরাইলের বাড়ি। সিদরাতুল মুনতাহা, দ্য গ্রেট ট্রি, বিরাট গাছ যেটা। ওটার কী কালার এটা পৃথিবীর মানু্ষ জানে না। কিন্তু বর্ণনায় আছে সেটি এক অভূতপূর্ব কালার। তার মানে এখানের যে কালার আমরা দেখছি তার বাইরের জিনিস। এরকম কোরানে অনেক জায়গায় আছে। হাদিসেও এরকম কালারের অনেক কিছু আছে। বেহেশতের বর্ণনা আছে, ওই রং কেউ দেখে নাই, এমন রং। রঙয়ের যে অজানা অধ্যায়গুলা, এখন তো ডিমিস্টিফাইংয়ের যুগ তো, মানে মিস্ট্রিগুলাকে নষ্ট করে ফেলে যত গ্রেট জিনিসগুলাকে ডিগ্রেড করতেছে, গ্রেটনেসটাকে বাদ দিয়ে দিচ্ছে। বাদ দিয়ে একটা ছেলেখেলা করে ফেলতেছে। ছেলেখেলা করে বলছে এটাই মর্ডান, বা এটাই পোস্টমর্ডান। কিন্তু খেলাটা যে আরো গভীর, কিছু জিনিস আপনি বাদ দিতে পারেন। কিন্তু কিছু জিনিস বাদ দিলে আপনার মেইন যে স্কেলেটন, ওইটা পড়ে যাবে। ধ্বংস হয়ে যাবে।

ই: মর্ডার্নিটি তো ইটসেলফ একটা অ্যান্টাই-ন্যাচারাল ঘটনা এখন আমার কাছে মনে হয়। কারণ মর্ডানিটি মানুষকে কেন্দ্রে রাখতে চায় আর দুনিয়াকে চারপাশ দিয়ে ঘুরাইতে চায়। মানুষকে তো নেচারের ক্ষেত্রটার ভেতরে পজিশনড হইতে হবে, মানে একটা পাজল হিসাবে নেচারের মধ্যে জয়েন করা, পার্টিসিপেট করার বা যুক্ত হওয়ার বিষয়টা হইতে হবে তো।

র: মানে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব—কথাটার মানে কী? কথাটার মানে কিন্তু এইটা না যে, সে সবাইকে ডমিনেট করবে, সবার খাদ্য খেয়ে ফেলবে বা ইচ্ছামত নদী নষ্ট করবে, পশু-পাখিদের তাড়ায় দিবে– এটা না।

অর্থটা হচ্ছে তুমি আছ, তোমার মত থাকো। আল্লাহ তোমাকেও রিযিক দিছে, ওই ছোট্ট চড়ুই পাখিটিকেও রিযিক দিছে। তার মানে তাদের আলাদা জগৎ আছে। তুমি তোমার জগতে রাজা, তারা তাদের জগতে রাজা। Let them be there. তো, এখন তোমাকে সব মিলায় বলা হইছে।

কারণ দুইটা প্রাণী, দুইটা সৃষ্ট জীবের স্বাধীন সত্ত্বা আছে, যত সৃষ্ট জীব আছে। এরা হচ্ছে মানুষ আর জ্বীন। এরা স্বাধীন চিন্তা করতে পারে, ক্রিয়েটিভ হতে পারে। বাকিরা বদ্ধ। বদ্ধ প্রাণী ও উন্মুক্ত প্রাণী, দুইভাবে সৃষ্টি করা হইছে। মানুষ আর জ্বীন হচ্ছে উন্মুক্ত প্রাণী। আর বদ্ধ প্রাণী হচ্ছে যত সৃষ্ট প্রাণী আছে, যতরকম আছে, এরা হচ্ছে বদ্ধ প্রাণী।

তো, এখন উন্মুক্ত ও বদ্ধ প্রাণীর মধ্যে মানুষ সৃষ্টির সেরা। এটা বলা আছে। এটা আল্লাহ ঘোষণা করে দিছে, কোরানে আছে, আশরাফুল মাখলুকাত। এখন, খালি ঘোষণা তো উনি করেছেন, কিন্তু আশরাফুল মাখলুকাত কাদের বলছেন, এটা বুঝতে হবে। যে আমি মানুষ হয়ে জন্ম নিলাম, আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে গেলাম, তা কিন্তু না। আশরাফুল মাখলুকাত হচ্ছে হাইয়েস্ট কনশাসনেস। এটা হায়ার কনশাসনেসের জিনিস, যখন আপনি ভেতরের নূর-এ-মোহাম্মদকে জাগায় তুলবেন, আপনার মধ্যে যে আল্লাহ নূর-এ-মোহাম্মদকে দিসে, নবী মোহাম্মদ (সা:) এর যে নূরটা আছে, ওইটাকে যখন আপনি হাইয়েস্ট জায়গায় নিয়ে যাবেন তখন আপনি মানুষ হবেন। এবং যে আশরাফুল মাখলুকাত তার মৃত্যুও নাই জন্মও নাই। সে হচ্ছে চিরকালীন একটা সত্ত্বা। এখন তার আগে মানুষ পশু-পাখির মত মরণশীল এবং খাচ্ছে-দাচ্ছে। কিন্তু আশরাফুল মাখলুকাত হওয়া হচ্ছে সাধনার বিষয়।
এজন্যেই বলছে যে, আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টির সেরা জীব। তারাই সৃষ্টির সেরা জীব হবে যখন সৃষ্টি থেকে বের হয়ে আল্লাহর জগতে যাবে। তখন সে সৃষ্টির সেরা জীব হবে। সৃষ্টির মধ্যে থেকে সেরা জীব হতে পারবে না। কারণ সে বায়োলজিকালি বন্ডেড হয়ে যাচ্ছে। সে গ্র্যাভিটেশন ল’য়ে পড়ে যাচ্ছে, সবকিছুর মধ্যে। তাহলে সেরা কিভাবে হল। সেরা হতে হলে আল্লাহর জগতে যেতে হবে এবং আল্লাহর জগতে যাওয়া মানে আশরাফুল মাখলুকাত হওয়া। আশরাফুল মাখলুকাত হতে গেলে পর্যায়ভুক্তি আছে এবং এটার সাধনা দরকার আছে। এটা একজীবনে হতে পারে, বহুজীবনে হতে পারে, বিভিন্নভাবে হতে পারে।

এবং একবার যদি এক্সিস্ট করে কোনোকিছু, সেটা কখনই ধ্বংস হবে না। মৃত্যু বলে কিছু নাই। কোন জিনিস যদি এক্সিস্ট করে, একটা পাতাও যদি এক্সিস্ট করে, এই যে আমরা যে জগৎ দেখছি এক্সিস্ট করছে, এটা কখনো ধ্বংস হবে না। এটার রূপ চেঞ্জ হবে, কিন্তু ধ্বংস হবে না। বা অ্যাবসোলিউটলি উধাও হয়ে যাবে না, এটার রূপ হবে। সায়েন্সও তাই বলে যে, গ্লাসটা গুড়া করলে কাচের গুড়া হবে, টেবিলটা কাটলে কাঠের গুড়া হবে, এটা থেকে কার্বন হবে, তাপ হবে। কয়েকটা জিনিস বের হবে। হিট হবে, লাইট হবে। কিন্তু হিটটা তো আর উবে যাচ্ছে না, লাইটটা তো উবে যাচ্ছে না। ওটা গিয়ে আবার নেচারে চলে যাচ্ছে। এই জিনিসটাই বিভিন্ন নামে চলে যাচ্ছে। সো আমাদের কনশাসনেসও ওরকম। বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন রূপে চলে যাচ্ছে। এই দেহটা তো একটা জ্যাকেটের মত। একটা খোলস। এটাকে ফালায় দিয়ে আমরা আবার অন্য জ্যাকেট নিব। এই অন্য জ্যাকেটটায় অনেক রহস্য আছে এবং বলতে চাই না। কন্ট্রোভার্শিয়াল, এটা বুঝবে না লোকজন। আর আমাদের তো সোল ট্রাভেল করে খোলস থেকে খোলসে, যেমন আপনি বললেন আপনি দেখেন নিজেকে স্বপ্নে। এর মানে কি? আপনি আসলে আপনার বডির বাইরে যাইতে পারেন, লুসিড ড্রিম। স্বপ্ন মানে মানুষ ঘুরে। বডির বাইরে ঘুরে। স্বপ্ন কিন্তু একটা পরিশ্রমের কাজ। একটু খেয়াল করে দেখবেন। এক ধরনের পরিশ্রম হয়। খুব সেনসিটিভ হলে বোঝা যায়।

ই: ক্লান্ত না হলেও এক ধরনের শ্রান্তি আছে।
র: তো ওইটা কেন হয়? কারণ হচ্ছে আত্মাটা ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বডির মধ্যে ক্লান্তি আসে।

ই: বডিটাতো এক জায়গায় বেসিক্যালি শুইয়া আছে।
র: হ্যাঁ শুয়ে আছে, কিন্তু আত্মাতো পরিশ্রম করতেছে। সে তো ঘুরে ঘুরে দেখতেছে, বিভিন্ন ডাইমেনশন দেখতেছে। তারপর অতীত দেখতেছে। আর মাল্টিভার্স এগুলাতো আছে। কোথায় কি যাচ্ছে এগুলা খুব জটিল, আমাদেরকে আল্লাহ একটু সরলভাবে রাখছে। কারণ, আমরা যদি সব বুঝতাম আমরা টিকতে পারতাম না। আমাদের ব্রেইন ওইভাবে তৈরী করা না। এর কারণে নবীজি যখন মেরাজে যায়, এমন কিছু সে দেখবে, যেটা সৃষ্ট মানুষের পক্ষে দেখা সম্ভব না। ওইজন্য জিবরাইল (আঃ) তাকে অপারেশন করে হার্টটা জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে আবার এখানে রেখে, পবিত্র এবং আরো শক্তিশালী করে নিয়ে যায় যাতে সে সহ্য করতে পারে।

ই: শকগুলো অ্যাবজর্ব করতে পারে।
র: অ্যাবজর্ব করতে পারে এবং দেখতে পারে। ভিজ্যুয়ালিটির যে ব্যাপারটা, ওটা যাতে চলে আসে। তো এরকম আমরা অনেক কিছুর মধ্যে আছি। কিন্তু আমরা জানি না।

ই: একদম তাজা মন নিয়ে যাওয়া।

র: আমরা জানি না, ওটা জানানো হয় না। আমাদেরকে ওই ভিশনগুলো দেয়া হয় না। ওইটা মৃত্যুর পরে হয়তো কেউ পাবে। আর মৃত্যুর পরে একেবারে আল্লাহর দুনিয়ায় চলে যাব তাও না। যে বেটা যেমন, যে ব্যক্তি যেমন সে তেমনই থাকে। চোর মৃত্যুর পরে চোরই থাকে। ওই জন্য ইভিল কেউ মারা গেলে তার স্পিরিট আবার ইভিল হয়ে আরেকজনের কাঁধে আসে। আবার সাধু কেউ মারা গেলে সে আবার কোন খারাপ লোককেও সাধু বানায় দিতে পারে, মরার পরে। এটা আমি শিওর আরকি, এটা নিয়ে আমার কোন অ্যাজাম্পশন নাই। এগুলা আমি জানি। এগুলা আমার দেখা, এক্সপেরিয়েন্স করা, এই আরকি। তো জিনিসটা হচ্ছে একটা রিসাইক্লিং প্রসেসে থাকে, নেচারটা। এই একটা থেকে একটা, একটা থেকে একটা। নেচার ইজ ভেরি মাচ, মানে পুরাটা রিসাইক্লিং।

news24bd.tv/ডিডি

সম্পর্কিত খবর