প্লাবিত গ্রামের পর গ্রাম, বিদ্যুৎহীন ৩০ লাখ গ্রাহক

সংগৃহীত ছবি

ঘূর্ণিঝড় রিমাল

প্লাবিত গ্রামের পর গ্রাম, বিদ্যুৎহীন ৩০ লাখ গ্রাহক

অনলাইন ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলে। লণ্ডভণ্ড হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ভেঙে গেছে বাড়িঘর-গাছপালা। পানিতে ডুবে গেছে উপকূলের অনেক অঞ্চল।

এতে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন দুর্গত জেলাগুলোর অন্তত ৩০ লাখের বেশি গ্রাহক।

স্বাভাবিকের চেয়ে সাত-আট ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারের চাপে সাতক্ষীরা, বরগুনাসহ কয়েক জেলায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে শত শত গ্রাম। উপকূলে তাণ্ডব চালিয়ে এ ঝড়ের পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসতে সোমবার ভোর হয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

বাতাসের গতিবেগে বেড়ে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব দৃশ্যমান হতে শুরু করলে একের পর এক উপকূলের জনপদ বিদ্যুৎবিহীন হতে শুরু করে রোববার সন্ধ্যার পর থেকে। দমকা বাতাসে গাছপালা ভেঙে কিংবা উপরে পড়ার কারণে জেলাগুলোর ৩০ লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।

ঝড়ের রাতে বাগেরহাট জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ঝড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের লাইনের উপর গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। মধ্যরাতেও পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় জেলাবাসীকে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থাতেই কাটাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান অবশ্য রোববার রাত ৯টা সময়ই সংবাদ সম্মেলন করে ‘ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির’ খবর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঝড়ের মধ্যে মানুষ ‘অনেক বিপদের মধ্যে’ রয়েছে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকে পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছেন। আমাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। তথ্য-উপাত্ত নিচ্ছেন আমাদের কাছ থেকে। তার পরামর্শ নিয়ে সমস্ত শক্তি সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন ও কাজ করছি।

রোববার রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এ সময় বাগেরহাটের মোংলা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, কুয়াকাটা ও খেপুপাড়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে রিমাল। শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নে রাতভর বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় ভেঙে গেছে ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা। জেলার অন্য এলাকাতেও ঝোড়ো হাওয়া বইছে। বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে গেছে।

রিমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কলাপাড়া, খেপুপাড়া ও কুয়াকাটায়। এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিষখালি-সন্ধ্যা, পায়রা, আন্ধারমানিক, গলাচিপা ও তেতুলিয়া নদীর উপচে পড়া পানিতে বরগুনা ও পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে বরগুনায় তলিয়ে গেছে ২৭ গ্রাম, ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। আমতলী ও তালতলী উপজেলার ২৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে উপজেলা নির্বাহী অফিস। বলেশ্বর নদীর পানিতে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

বাগেরহাটের বলেশ্বর, পানগুছি-খাসিয়াখালি এবং দড়াটানা নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে। এতে শরণখোলা ও মোড়লগঞ্জের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রিমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবন। করমজলসহ বনের উঁচু এলাকাগুলোও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। সদর হাসপাতালের কোন একসাইড ভেঙে ভেতরে পানি ঢুকেছে। বাগেরহাটে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।  

মোংলার শ্যালা নদী ও পশুর নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপরে। রাস্তা ভেদ করে জয়মুনি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।

চট্টগ্রামেও রেমালের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগরে জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে ২১ টি গ্রাম। এছাড়া নোয়াখালীর হাতিয়ার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।

news24bd.tv/DHL