বাংলাদেশে করোনা নিয়ে ডিজির বক্তব্য শুনে আৎকে উঠলাম

লাকমিনা জেসমিন সোমা

চীনা বিশেষজ্ঞের কাছে সরল স্বীকারোক্তি

বাংলাদেশে করোনা নিয়ে ডিজির বক্তব্য শুনে আৎকে উঠলাম

লাকমিনা জেসমিন সোমা

বাংলাদেশকে সাহায্য করতে খুব শিগগির চীন থেকে ১৫ সদস্যদের একটি মেডিকেল টিম বাংলাদেশে আসছে। ভালো খবর। কিন্তু, সেই সাথে একটা খুব খারাপ খবরও আছে। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের।

বুধবার ভিডিও কনফারেন্সে চীনের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ, হুয়াশান হাসপাতালের সংক্রমণ বিভাগের পরিচালক ডা. চাং উন হোং এর কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছিলেন ঢাকার ডাক্তাররা। সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে অংশ নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি ডা. আবুল কালাম আজাদও। যেহেতু ডাক্তারের কাছে রোগ লুকিয়ে লাভ নেই, হয়ত সে কারণেই ওই চীনা বিশেষজ্ঞের কাছে অকপটে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এবং নিজেদের নানা রকম সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন ডিজি মহাদয়। যদিও মিডিয়ার সামনে তিনি কিংবা স্বাস্থ্যমন্ত্রী কখনোই নিজেদের এই অসহায়ত্বগুলো স্বীকার করেননি, এখনও করছেন না।
তো চীনা বিশেষজ্ঞের কাছে ডিজি মহাদয় অকপটে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যে সরল স্বীকারোক্তি দিলেন তা নিচে তুলে ধরলাম-

প্রথমত, ‘‘আমাদের অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে বাড়ি (গ্রামাঞ্চলে) চলে গেছে। আমরা অবশ্য বিমানবন্দরে তাদের সবার স্ক্রিনিং (পরীক্ষা) করেছি। কিন্তু সেটি শুধু জ্বর বা অন্য কিছু উপসর্গের টেস্ট মাত্র। তখন রোগের উপসর্গ প্রকাশ পাইনি এমন অনেকেই বাড়ি ফিরে গেছে। সে কারণে আমাদের দেশের একটি ধারণা- গ্রামাঞ্চলে অনেক করোনা আক্রান্ত থাকতে পারে। তার বাইরেও থাকতে পারে এবং আমাদের দেশে একটি ধারণা আছে যে সেখানে আক্রান্ত থাকতে পারে যেটি আমরা এখনো শনাক্ত করতে পারিনি। ”
দ্বিতীয়ত, ‘‘যেহেতু আমরা অনুমান করছি বাংলাদেশে মৃত্যুর হার অনেকটা বেশি, সুতরাং আমি মনে করি আমাদের শনাক্ত/পরীক্ষা করার হার যথেষ্ট না। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ আমাদেরকে জানায়নি। ফলে তারা মারা গেছে। এবং পরে আমরা ওই মৃত দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে দেখছি তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। সুতরাং ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলেও আমরা জানিনা এর আরো আগেই বাংলাদেশ করোনা আক্রান্ত হয়েছে কি না। সুতরাং (মৃত্যহার বেশি হওয়ার) এটিও একটা কারণ হতে পারে। ’’

তৃতীয়ত, ‘‘আমরা শুরুতে আমাদের দেশের জেনারেল হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন ইউনিট করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এবং তুমি (চীনা বিশেষজ্ঞ) কেস শনাক্তকরণে সিটিস্কান বা রেডিওলজি একটি ভালো উপায় হতে পারে বলছো। ” “আমরা অবশ্য এরইমধ্যে করোনা চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল করেছি। কিন্তু এই হাসপাতালগুলোতে সিটিস্ক্যান বসানো ভীষণ কঠিন ব্যাপার। ”

চতুর্থত, ‘‘আমরা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। (করোনা শনাক্তকরণে ) আরটিপিসিআর এর সংখ্যা এখনও বেশ কম। আমরা এখনো পযর্ন্ত মাত্র ১৫ টি সেন্টারে আরটিপিসিআর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করছি। হয়ত আগামি এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে ২৮ টি সেন্টারে পরীক্ষা করতে পারব। আমাদের দেশে (কোভিড-১৯ এর) নমুনা সংগ্রহ করাও কঠিন। আমাদের এখানে প্রায় ৫০০’র মতো উপজেলা আছে। এবং আমরা ওই উপজেলাগুলোতে আমাদের স্টাফদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে সারাদেশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করছি।

পঞ্চমত, ‘‘কিন্তু এখানে আমরা একটা ব্যাপার নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্নও। আমরা যদি লোকজনকে সরাসরি সেন্টারে এসে ভিড়ের মধ্যে পরীক্ষা করতে অনুমতি দিই তাতে আবার সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকবে। সে কারণেই আমরা আমাদের স্টাফদের মানুষের বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগহের কথা বলেছি। কিন্তু সত্যি বলতে এটি পুরো প্রক্রিয়ায় একটি সীমাবদ্ধতা/অপর্যাপ্ততা তৈরি করছে। ’’

ডিজি মহাদয়ের শেষ কথা- ‘‘এমন পরিস্থিতিতে আমরা কী করব?’’

ওই ভিডিও কনফারেন্সে চীনা বিশেষজ্ঞ মোটাদাগে কয়েকটি পরামর্শ দেন। আর তা হলো, ইতালির মতো বিপদে পড়তে না চাইলে প্রথমত, ঘরে থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত ট্রেসিং এন্ড টেস্টিং, অর্থাৎ- পরীক্ষা এবংশিনাক্তকরণ যথেষ্ট পরিমাণে হতে হবে। তৃতীয়ত, মুত্যুহার যাতে কমানো যায় সেজন্য পযার্প্ত আইসিইউ বা ভেন্টিলেশন সিস্টেম থাকতে হবে।

তার পরামর্শের পর আমাদের ডিজি মহাদয় এমন একটি বক্তব্য দেন। খোদ ডিজির মুখেই এসব কথা শুনে আঁচ করতে পারছি আমাদের প্রস্তুতি কেমন। আরো দুঃখের ব্যাপার হলো- তিনি সবই জানেন, সবই বোঝেন...কিন্তু গণমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত আছি, আমাদের সবকিছু যথারীতি চলছে’।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী