জন্মদিন মনে রেখো, বয়স নয়

আনোয়ার সাদী, সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজ টোয়েন্টিফোর

জন্মদিন মনে রেখো, বয়স নয়

আনোয়ার সাদী

ক্লাস ওয়ানে পড়া মেয়েটি তার বাবাকে বললো, আজ যে তোমার জন্মদিন তা কী করে বুঝলে? বাবাটি অবাক হয়ে বললো আগে তো বুঝতে পারিনি, এখন তুমি বলার পর বুঝতে পারলাম। তুমি কী করে বুঝলে? মেয়েটি বললো, তোমার ফেইসবুকে অনেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, তা দেখে বুঝতে পারলাম। অবাক হওয়ার কিছু নেই। করোনা মহামারী আমাদের ছোটদেরকে শুধু অনলাইন ক্লাসের সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দেয়নি, ফেইসবুকেও প্রবেশাধিকার দিয়ে দিয়েছে।

আমাদের দেশে ফেইসবুক নানা কাজে ব্যবহার হয়, তা আপনারা জানেন। সরকার বিরোধী প্রচারণা থেকে শুরু করে নসিহত সব কিছু্ এখন ফেইসবুকে চলে। ওই দিন একজনের স্টেটাস দেখে কিছুক্ষন থ মেরে বসে রইলাম। তিনি মহান রব্বুল আল আমিন এর উদ্দেশ্যে মোনাজাত করেছেন, কিন্তু তা লিখে দিয়েছেন ফেইসবুকে।

আগে নামাজ পড়ে মনে মনে যে দোয়া করা হতো, নেট নাগরিকরা এখন তা ফেইসবুকেও নিয়ে এসেছে।
 
যাহোক, জন্মদিন প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ফেইসবুক এখন সবাইকে জন্মদিন মনে করিয়ে দেয়। এমনকী একমাস আগেও কারো জন্মদিন সম্পর্কে জানা যায়। ফলে, শুভেচ্ছা জানানো অনেক সহজ হয়ে গেছে। অথচ আগে জন্মদিন মনে রাখাই বিস্ময় ছিলো। কেউ জন্মদিন মনে রেখেছে এটাও দারুণ অনুভূতির জন্ম দিতো। তখন যদি প্রশ্ন করা হতো,
প্রকৃত বন্ধু বলতে কী বোঝায়?
উত্তর পাওয়া যেতো,  যে আপনার জন্মদিন মনে রাখে কিন্তু বয়স নয়!

বিশেষ করে সঙ্গীর জন্মদিন ভুলে যাওয়া আমাদের সংসার জীবনে এক বিরাট অঘটনের নাম। এটাকে অপরাধ বলতে পারলাম না, তবে এর সাজা ভয়ংকর। বিস্তারিত না বলে বরং একটা প্রেমের কৌতুক শোনাই।  একবার এক ছেলে তার প্রেমিকার জান্মদিনে যেকোনো কারণে দেশে থাকতে পারছে না। তো, সে তার প্রেমিকার জন্য একটা ফুলের দোকানে গিয়ে কিছু ফুলের তোড়ার ফরমায়েশ দিলো। এমন ব্যবস্থা করলো যেনো জন্মদিনে মেয়েটির হাতে ফুল পৌঁছে যায়। তারপর প্রেমিকাকে ফোন দিয়ে গদ গদ হয়ে বললো, আমি তোমার জন্মদিনে তোমার বয়স যত বছর ততগুলো ফুলের তোড়া পাঠাবো।  শুনে মেয়েটি খুশি। যাহোক, প্রেমিক দেখি মনের মতো আচরণ করছে! যে ফুলের দোকানে অর্ডার দেয়া হয়েছিল তার মালিক ছিলেন এক দয়ালু  নারী। তিনি  তো আর গোপন খবর জানেন না, ভাবলেন দোকান থেকে একসাথে এতগুলো ফুলের তোড়া সহজে কেউ নেয় না। তাই তিনি খুশি হয়ে ১০টি ফুলের তোড়া ফ্রি দিয়ে মোট ৩৪টি তোড়া পাঠিয়ে দিলেন। ছেলেটি আজও নীরবে নির্ভৃতে বসে বসে ভাবে, কেনো তার এতো সাধের প্রেম ভেঙে গিয়েছিলো। কেন? 

এই গল্পটি আমি ইন্টারনেটে পেয়েছি। কিন্তু বাস্তবের জীবনে, কতো মানুষের কতো গল্প লুকিয়ে আছে, যারা বউ এর জন্মদিন ভুলে গিয়ে নীরবে বসে বসে ভাবে এমনটা কেনো হলো? কেনো? 

আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবার অবসর খেয়ে বসেনি। তখন মাথায় স্টেটাসের চেয়ে কবিতার লাইন বেশি সময় জুড়ে থাকতো। কবিতা আমাদের জন্মদিনের অন্যতম অনুসঙ্গ ছিলো।

’আজ আমার জন্মদিন মনেই ছিলো না 
কেউ বুক পকেটে একটা কলম গুজে দিয়ে 
বলেনি – হ্যাপি বার্থ ডে …’

এমনিতরো হাজারো অনুভূতির ঝড় দিস্তার পর দিস্তার কবিতার লাইনে চাপা পড়ে আছে। সেসব এতোবছর পর আর মনে নেই। মনে রাখার জো নেই। বাস্তবতা জীবনের নানা নতুন নতুন দিগন্তের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমরা কেবল পরিবর্তনকে আবিস্কার করে সামনে এগিয়ে চলি।  এই পথচলায় জন্মদিন আসে, তাকে উদযাপন করে আমরা কোনো একজন মানুষের উপস্থিতি উদযাপন করি। যে মানুষটি আমাদের মাঝে আছে তাকে অভিনন্দন, উপহার ও ভালোবাসা জানাই, আবার যিনি আমাদের মাঝে নেই তার জন্মদিন উদযাপন করে তার উপস্থিতির অভাবকেও উদযাপন করি। মানুষ আসলে এমনই, যতোটা সে বাস্তবে বাস করে ততোটাই সে স্মৃতিতে বাস করে।

(মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। ) 

news24bd.tv/এমি-জান্নাত