তাড়াহুড়োয় দাফন হয় হারিছ চৌধুরীর

মৃত্যু নিশ্চিতে আইনি প্রক্রিয়ায় আগাবে পুলিশ 

তাড়াহুড়োয় দাফন হয় হারিছ চৌধুরীর

সাভার প্রতিনিধি :

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর নাম পরিচয় গোপন রেখে সাভারে একটি মাদ্রাসায় দাফন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টার সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসায় তাকে দাফন করা হয় বলে জানিয়েছেন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা চৌধুরী।  

জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান,তার পূর্ব পরিচিত ব্যক্তি ইকবাল মাসুম নামের এক ব্যবসায়ী মিরপুর থেকে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে ফোন করে জানান মাহমুদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি নানা জঠিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। তাকে ওই মাদ্রাসায় দাফন করতে হবে।

পরে ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে একটি এ্যাম্বুলেন্স ও একটি প্রাইভেটকারে করে  কয়েকজন ব্যক্তি এসে মাদ্রাসায় জানাযা শেষে তাড়াহুড়া করে তাকে দাফন করা হয়।

এসময় ওই মাদ্রাসায় পাঁচ লক্ষ টাকা অনুদান হিসেবে দান করেন নিহতের মেয়ে সামিরা চৌধুরী। নাম পরিচয় গোপন রেখে ওই মাদ্রাসায় হারিছ চৌধুরীকে দাফন করায় মাদ্রাসার শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।  

কবর দেওয়ার সময় পর্যন্ত তার নাম মাহবুবুর রহমান বলেই জানানো হয়েছিল।

এমনকি কবর দেওয়ার সময় সেখানে থাকা মাদ্রসার একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললেও তারা একই কথা জানান।  

আশিকুর রহমান কাশেমী আরো বলেন, মাহবুবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির কবর তার মাদ্রসায় দেওয়া হয়। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বরের আগের দিন রাতে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে তারা প্রবাসী বলে দাবী করেন। তাদের কোন আত্মীয়-স্বজন দেশে নেই, সবাই প্রবাসী, সে কারনেই সন্তানেরা ঢাকাতেই দাফন করতে চায়। পরে ৪ সেমেপ্টম্বর সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে তিনি নিজেই মাদ্রসায় জানাজার নামাজ শেষ করে আঙ্গিনায় কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করেন।  

মাদ্রাসার হাফিজুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রায় এক বছর আগে বিকেলের দিকে ঢাকা থেকে মাহবুবুর রহমান নামের একজনের মরদেহ নিয়ে আসা হয়। পরে তাদের মাদ্রাসার প্রায় সাড়ে তিনশত শিক্ষার্থী ও বহিরাগত আরো একশত লোক এই জানাজায় অংশ গ্রহন করে।  

মাদ্রসার শিক্ষা সচিব মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাদের এখানে মাদ্রসার নিয়ম অনুযায়ী ছদকয়াজারীয়া (অনুদান) যারা দেয় তাদের জন্য একটা সারিতে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা রাখ হয়েছে। মাহবুবুর রহমানের পরিবারও কবরের জন্য পাচ লক্ষ টাকা দান করেই এখানে কবর দেয়। তাদের এখানে কবর দেওয়া যায় বা এই নিয়মে কবর দেওয়া হয়, সেটি মাহমুদুর রহমানের পরিবার কিভাবে জানলো বিষয়টি তার জানা নেই। এছাড়াও যে কোন কবরস্থানে যদি নিয়মের মধ্যে গিয়ে কবর দেওয়া হয়, তাহলে যে কেউ কবর দিতে পারে।  

 মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে দিন দাফন হয় তার আগের দিন মাহবুবুর রহমানের মেয়ে সামিরা চৌধুরী এসে বলেন, তার বাবার মৃতদেহ এখানে দাফন করতে চায়। পরের দিন মাগরিবের আগ মুহুর্তে জানাজা দেওয়া হয়। নিহতের পরিবারের ৪/৫ জন সদস্য দাফনের সময় মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও আশপাশের লোকজন জানাজায় অংশ গ্রহন করে বলে তিনি জানান। তবে তিনিই হারিছ চৌধুরী কিনা বা সে সময় পরিচয় গোপন করে মৃতদেহ দাফনের বিষয়টি নিয়ে তাদের কোন সন্দেহ দেখা যায়নি।  

তবে তাড়াহুড়া করে দাফনের বিষয়ে তিনি বলেন, রাত হয়ে যাচ্ছে বলে রাতের আগেই কবর দিয়ে দিতে বলেন পরিবারের সদস্যরা। এছাড়াও এখানে শুধু জানাজা আর কবর দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও মারা যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরে তার দুই থেকে তিনজন আত্মীয় স্বজন কবর দেখতে এসেছিলেন। তবে গত এক বছরের মধ্যে আর কেউ আসেনি বলে তিনি জানান।  

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, এ বছরের শুরুতে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে-এমন খবর নিশ্চিত হতে সিআইডিকে চিঠি দেয় ইন্টারপোল। ওই চিঠির পর তদন্ত করে সিআইডি। মৃত্যু তথ্য নিশ্চিত হতে পারার বিষয়টি জানিয়ে সদর দফতরকে অবহিত করে সংশ্লিষ্টরা। এখন আবারও নতুন করে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু ও তার দাফনের বিষয়টি সামনে আসায় নতুন করে খোঁজ খবর নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যেখানে গোয়েন্দারা হন্য হয়ে তাকে খুঁজেছেন। ইন্টারপোলের রেড  অ্যালার্টের তালিকায়ও তার নাম ছিল। এর পর থেকে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে।  

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, সাভারে দাফন হওয়া ‘মাহমুদুর রহমান’ই হারিছ চৌধুরী কিনা, তা নিশ্চিত হতে তার মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ টেস্ট করার প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হতে পারে। আদালতের নির্দেশনা পেলে দ্রুতই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলার অভিযুক্ত আসামি ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালী নেতা হারিছ চৌধুরী। ওই হামলার টার্গেট ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই হামলা মামলার চার্জশিটেও অভিযুক্ত আসামি ছিলেন হারিছ চৌধুরী। অভিযোগপত্রে তাকে লাপাত্তা দেখানো হয়। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার আসার পর হারিছ চৌধুরী গা ঢাকা দেন।
news24bd.tv/আলী