থানা হাজতে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানা হাজতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আজ (২০ আগস্ট, সোমবার) এ ঘটনা ঘটে। যুবকের মৃত্যুতে পুলিশ এবং পরিবার পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে।  

নিহত যুবকের নাম হাসানুর রহমান (১৭)। সে সোনাহার এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে।  

পুলিশ বলছে, হাজত খানার টয়লেটে কম্বল পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে হাসানুর। অন্যদিকে পরিবার বলছে, পিটিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।   খবর পেয়ে এলাকাবাসী থানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং ঘটনাটির তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেছে।  

হাসানুরের পরিবারের সদস্যরা জানান, সে ঢাকায় রাজ মিস্ত্রীর কাজ করতো। কয়েক দিন আগে ঈদের ছুটি কাটাতে বাড়িতে আসে তাদের সন্তান। বড় ভাইয়ের শ্যালিকা কুলসুমের সাথে হাসানুরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর জেরে গত রাতে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়।

অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে বড় ভাই হাসিবুল ইসলাম মৌখিকভাবে পুলিশকে জানায়। অভিযোগ পেয়ে দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম রাত ৩টার দিকে হাসানুরকে থানায় নিয়ে আসেন।  

থানার সামনে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

নিহতের বড় বোন বিউটি জানান, সোমবার সকালে হাসানুরের জন্য কাপড় এবং খাবার নিয়ে আসার জন্য থানা থেকে পরিবারকে ফোন করা হয়। ছোটবোনকে সাথে নিয়ে বড় বোন বিউটি এবং অন্যরা খাবার নিয়ে থানা হাজতে যান। সেখানে হাসানুরকে না পেয়ে পুলিশকে জানান তারা।  

এ সময় পুলিশ হাজতের বাথরুমে ঝুলন্ত লাশ দেখে তাদেরকে জানায় টয়লেটের ভেন্টিলেটরে কম্বল দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে হাসানুর আত্হমত্যা করেছে।  

কিন্তু পরিবারের দাবি, হাসানুরকে হত্যা করে ‘ফাঁসি নাটক’ সাজিয়েছে পুলিশ।  

প্রতিবেশী কবি শাহেদ সাফায়েদ বলেন, ‘পুলিশ হাসানুলকে হত্যা করেছে। পুলিশি হেফাজতে দিনের বেলায় কেউ কিভাবে আত্মহত্যা করতে পারে? ঘটনাটি প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা চাই এই হত্যার সঠিক তদন্ত হোক। ’ 

তবে দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম পরিবার ও প্রতিবেশীর সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘হাসানুরকে ৬০ গ্রাম গাজাসহ রোববার রাতে আটক করা হয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা ছিল। সকাল ১০টায় আমি আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মিটিংয়ে যোগদানের জন্য পঞ্চগড়ে (সদরে) যাই। সেখানে পৌঁছানোর পর শুনি হাসানুর আত্মহত্যা করেছে। ’   এদিকে, খবর পেয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত বোদা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহমুদ হাসান প্রাথমিক সুরতহাল সম্পন্ন করেছেন। তিনি জানান, থানা হাজতের বাথরুমে কম্বল পেঁচিয়ে আত্মগত্যার সুরত হাল করেছি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে । পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ’

অন্যদিকে, থানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পেছনের দরজা দিয়ে নিয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। লাশ নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভকারীরা বিজয় চত্বরে সড়ক অবরোধ করে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলছে।  

 

হায়দার/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর