যোগাসন কেন করবেন?

শরীরের সঙ্গে মনের সংযোগ ঘটিয়ে আত্মিক উন্নতি ও শরীরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যোগাসনের বিকল্প নেই। যোগ শব্দের অর্থ দেহ ও মনের প্রগাড় সংযোগ বা ঐকান্তিক মিলন। ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার (নফস ও রুহুর মিলন) যোগ বা মিলনকে যোগ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

সুস্বাস্থ্যের উদ্দেশ্যে বিধিসম্মতভাবে অঙ্গ সঞ্চালনই ব্যায়াম। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষেরই সুস্থ থাকার জন্য কিছু না কিছু যোগ ব্যায়াম করা দরকার । বলতে হয়, ‘সুষম খাদ্য খাও, যোগাসন কর, লাইফ স্টাইল পাল্টাও, টেনশন (স্ট্রেস্) মুক্ত জীবনযাপন কর। ’ টেনশন বা স্ট্রেস্ থেকে মানুষের যে কত রোগ হতে পারে এবং আয়ু কমে যেতে পারে আধুনিক বিজ্ঞানীরা তা অনেকভাবে দেখিয়েছেন। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ থেকে শুরু করে প্রায় সকল রোগের গোড়ায় রয়েছে মানসিক চাপ। যোগাচার্যদের মতে যোগাসনের মাধ্যমে সবচেয়ে কার্যকরি উপায়ে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

যোগাসনকে অনেকে যোগ ব্যায়াম বলেন। আসন আর ব্যায়ামে কিছুটা পার্থক্য আছে। ব্যায়াম হচ্ছে খেলাধুলা, সাঁতারকাটা, হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, জিম, এ্যাক্রোবিক ইত্যাদি। খালি হাতে ব্যায়াম করা যায় আবার যন্ত্রযোগেও ব্যায়াম করা হয়। এর মাধ্যমে অঙ্গ সঞ্চালন হয় বটে। এতে যেমন দ্রুতি আছে তেমন শারীরিক পরিশ্রমও আছে। শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক পূর্ণ প্রশান্তির জন্য যোগাসনের বিকল্প নেই। বলা হয়, জগিংয়ে দশভাগ উপকার হয়, টেনিস খেলায় হয় পনেরো ভাগ, সাঁতারে হয় পনেরো ভাগ। কেবল যোগাসনের মাধ্যমে এক শ’ ভাগ উপকারিতা পাওয়া যায়। যোগাসন ছাড়া এমন কোন ব্যায়াম নেই যাতে শরীরের অস্থি সন্ধিতে এবং ফুসফুস, প্লীহা, পাকস্থলী, মূত্রথলী, যকৃৎ, বৃক্ক ইত্যাদি অন্ত্রে ভালভাবে রক্ত সঞ্চালন হতে পারে। যোগাসন ছাড়া এমন কোন ব্যায়াম নেই যাতে মেরুদণ্ডে আড়াআড়ি আর লম্বালম্বী চাপ পড়তে পারে এবং মেরুদণ্ড দুইদিকে স্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে। যোগাসন শরীরের প্রয়োজনীয় গ্রন্থিগুলোকে অধিক সতেজ ও সক্রিয় করে তোলে। তাই যোগাসনকেই সর্বোত্তম বলে ধরা হয়।

আসনের উপকারিতা

১) দেহের নমনীয়তা বাড়ায়।

২) দেহ ও মনের সমতা রক্ষা করে।

৩) অবাঞ্চিত চিন্তা মনে আসতে দেয় না ।

৪) সূক্ষ্মতর ও উচ্চতর সাধনার জন্য মনকে প্রস্তুত ও সাহায্য করে।

৫) গ্রন্থিগত ত্রুটি দূর করে আর গ্রন্থিরস ক্ষরণে সমতা আনে।

এইভাবেই আসনের মাধ্যমে বৃত্তি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় ।

আসনের নামকরণ

ক) কিছু কিছু আসনের ভঙ্গিমা প্রাণীদেহের বিশেষ চলাফেরার মতো। তাই তাদের নামকরণ সংশ্লিষ্ট প্রাণীটির নামানুসারে রয়েছে যেমন - মৎস্যমুদ্রা, গরুড়াসন ইত্যাদি ।

খ) কিছু আসন প্রাণীর- সংরচনার বৈশিষ্ট্য বা স্বভাবের সমান। তাদের নামকরণ সে অনুযায়ী হয়েছে, যেমন- কুর্মাসন, শলভাসন (শলভা মানে পঙ্গপাল) ইত্যাদি।

গ) কিছু আসন বিশেষ গুণসম্পন্ন হওয়ায় তাদের নামকরণ সেভাবেই হয়েছে। যেমন-সর্বাঙ্গাসন। এতে সমগ্র দেহযন্ত্র উপকৃত হয়।

ঘ) কিছু আসন যিনি প্রথম আবিষ্কার করেছেন তার নামানুসারে হয়েছে। যেমন: মৎস্যেন্দ্রাসন (যোগী মৎস্যেন্দ্রনাথ কর্তৃক আবিষ্কৃত)। এই আসনটিও সমগ্র দেহযন্ত্রকে প্রভাবিত করে।

আসন প্রধানত দুই প্রকারের-স্বাস্থ্যাসন আর ধ্যানাসন। স্বাস্থ্যাসনের অভ্যাস করা হয় মূলত দৈহিক স্বাস্থ্যের জন্য আর কিছু করা হয় আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য। ধ্যানাসনের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো মনের একাগ্রতা আর সাধনা। ধ্যানাসনের উদাহরণ হলো- পদ্মাসন, বদ্ধ পদ্মাসন, সিদ্ধাসন, বীরাসন।

এই দুই প্রকারের মধ্যেই আবার বহুসংখ্যক আসন আছে। যোগীরা সব মিলিয়ে ৫০,০০০ আসন ভঙ্গি আবিষ্কার করেছেন। কোন আসন করলে কী উপকার হয় বা কোন আসন কার করা উচিত একজন যোগাভ্যাসকারীর পক্ষে বুঝে ওঠা অসম্ভব। তাই আসনের ক্ষেত্রে একজন অভিঙ্গ আচার্যের মূল নির্দেশনা অপরিহার্য। আচার্যের বিনা নির্দেশনায় আসন অভ্যাস করলে উপকারের চেয়ে বিপদের ঝুঁকি থাকতে পারে।