দাতব্য সংস্থায় নারীদের কাজের জন্য নতুন নিয়ম করছে তালেবান

দাতব্য সংস্থায় নারীদের কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করতে যাচ্ছে তারা। এক আফগান মন্ত্রী জাতিসংঘের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এ আশ্বাস দিয়েছেন। খবর বিবিসির।

প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, জাতিসংঘের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তালেবান সরকারের এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, দাতব্য সংস্থায় নারীদের কাজ নিয়ে তারা নতুন একটি গাইডলাইন করতে যাচ্ছে। এতে করে সংস্থাগুলোতে নারীরা সীমিত আকারে কাজের সুযোগ পাবেন।

জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থার প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বিবিসিকে জানিয়েছেন, কাবুলে এক আফগান মন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে নারীদের দাতব্য সংস্থায় কাজ করা নিয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন তিনি।

বিবিসি বলছে, মাসখানেক আগে নারীদের বেসরকারি সহায়তা সংস্থায় (এনজিও) কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও পক্ষ। ইতোমধ্যে দেশটিতে অনেক দাতব্য সংস্থা নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। মূলত সাহায্য প্রত্যাশীদের সহায়তা পৌঁছে দিতে ও জীবন রক্ষাকারী মানবিক কার্যক্রম চালাতে কাজ করতো নারীরা।

গ্রিফিথস বলেন, ‘আফগানিস্তানের দরজায় দুর্ভিক্ষ কড়া নাড়ছে। এই বছরেই দেশটিতে সর্বকালের সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা কর্মসূচি চলবে। সংস্থাগুলো দুই কোটি ৮০ লাখ আফগানকে সহায়তা করার প্রস্তুতি নিয়েছে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। ’

বিবিসি বলছে, আফগানিস্তানে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে এবার। গত দুই সপ্তাহে তীব্র শীতে ১২৬ আফগানি মারা গেছে। এতে করে বিপাকে পড়েছে দেশটির প্রান্তিক জনগণেরা। তুষারপাতে জেরে সহায়তা দিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে তালেবান সরকারকে। ঠিক এই সময়েই কাবুলে তালেবান সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করেছেন গ্রিফিথস। ওইসব বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দাতব্য সংস্থায় নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে।

নিজের মিশন শেষে গ্রিফিথস ফিরে এসে জাতিসংঘে একটি রিপোর্ট দেন। যেখানে আন্ডারলাইন করে গ্রিফিথস লিখেন, ‘মানবিক কাজে নারীরা অংশ না নিলে, আমরা মূল সাহায্যপ্রার্থীদের কাছে পৌঁছাতে পারবো না। এর জন্য নারীদের কথা আমাদের শুনতে হবে। ’

গ্রিফিথস আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, তারা (তালেবান সরকার) আমাদের কথা শুনছে। তারা আমাকে জানিয়েছে, নারীদের কাজ করা নিয়ে তারা নতুন গাইডলাইন প্রণয়ন করবে। ’

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের উপমহাসচিব আমিনা মোহাম্মদের সঙ্গে কাবুলে যান গ্রিফিথস। ওই সময় তালেবান মন্ত্রীদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন তারা। বৈঠকগুলো অনেক কষ্টদায়ক ছিল বলে দাবি করেছেন নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলিম নারী আমিনা। এমনকি কিছু বৈঠক অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ছিল। তবে নারীদের কাজ করা নিয়ে শিথিলতার কথা জানিয়েছে এক আফগান মন্ত্রী। তবে পুরোপুরি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনো ইঙ্গিত দেননি ওই মন্ত্রী।

গ্রিফিথসের বরাতে বিবিসি বলছে, কাবুলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ আব্বাস আখুন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতিসংঘের দুই ঊর্ধ্বতন। ওই সময় তালেবান সরকারের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘উদ্ধার অভিযানে পুরুষরা ইতোমধ্যেই কাজ করছে। এই কাজে নারীদের কোনো প্রয়োজন নেই। ’ এমনকি জাতিসংঘের দুই ঊর্ধ্বতনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপক্ষে কথা বলার অভিযোগ তোলেন ওই মন্ত্রী।

জবাবে গ্রিফিথস বলেন, ‘আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থী, তবে আমি আপনার মতের সঙ্গে মিল রাখতে পারছি না। আফগানিস্তোনে দাতব্য সংস্থাগুলো কয়েক দশক ধরে কাজ করছে। আমরা আপনাদের রীতি নীতি ও ধর্মকে সম্মান করি, যেমনটা আমরা অন্যসব দেশে করে থাকি। ’

news24bd.tv/মামুন