ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী ফুলপরীকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের ইতোমধ্যে আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। এখন তাদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি করেছেন ফুলপরী খাতুন। এছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা ভাবছেন তিনি। এরই মধ্যে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেছেন ফুলপরী।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে মামলা করার বিষয়ে পরামর্শ করতে কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে আইনজীবী পিএম সিরাজুল ইসলামের কক্ষে আসেন ফুলপরী। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।
ফুলপরী বলেন, ‘আমি চাই তাদের (অভিযুক্তরা) ছাত্রত্ব বাতিল হোক। তাদের মতো ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার অধিকার নেই। আমার সঙ্গে তারা (অভিযুক্তরা) যা করেছে, এটা ফৌজদারি অপরাধ। আমি এ জন্য মামলা করতে চাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমি মামলা করব। যাতে আর কখনও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা না ঘটে। সেজন্য আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছি। ’
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর বুধবার (১ মার্চ) উচ্চ আদালতে শুনানি হতে পারে, আদালতের কাছে আপনি কী রায় আশা করেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। ’
আইনজীবী পিএম সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফুলপরীকে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে হল কমিটি। তিনি ৭ থেকে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমার সঙ্গে তিনি মামলার বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলেন। আমি মামলাটি প্রস্তুত করে জানালে তিনি এসে সই করবেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলাটি করা হবে। ’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হন ফুলপরী খাতুন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ওইদিন তাকে শারীরিক নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীরা। ফুলপরীকে হুমকি দেওয়া হয় নির্যাতনের কথা কাউকে বললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার। ঘটনার পর ভয়ে পরদিন সকালে হল ছেড়ে বাড়িতে চলে যান তিনি। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিক হেনস্থার বিচার এবং নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
ঘটনা তদন্তে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ইবি শাখা ছাত্রলীগ তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন থেকে একজন বিচারিক হাকিম, একজন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের সমন্বয়ে ৩ সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
হল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি সত্যতা পাওয়ায় সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচজনকে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন, পরিসংখ্যান বিভাগের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও একই বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান। তাদের বুধবার (১ মার্চ) দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে তাদের সংযুক্তি বাতিলের সুপারিশ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
news24bd.tv/আইএএম