গাছ না কেটে যেন উন্নয়ন করতেই পারে না ডিএনসিসি

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন যেন গাছ কাটা ছাড়া কোনো উন্নয়ন প্রকল্প শুরুই করতে পারে না। গাছ কাটা নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদের মধ্যেই সাতমসজিদ রোডের গাছ কেটে উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।  একই পথে হেঁটেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনও। সম্প্রতি মহাখালী-গুলশান সড়কের ডিভাইডার সম্প্রসারণের কাজ হাতে নেয় ডিএনসিসি। উন্নয়নের নামে ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার রাস্তার ডিভাইডার থেকে শতশত গাছ কেটেছে সংস্থাটি। পরিবেশের ওপর গাছ কাটার ভয়াবহ প্রভাব উপেক্ষা করে গত ছয় মাসে এসব গাছ কেটেছে নগর কর্তৃপক্ষ।  

নগর কর্তৃপক্ষ এভাবে গাছ কাটায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয়রা। যদিও গাছ কাটার সময় দুই লাখ নতুন গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। তবে সেটা এখনো বাস্তবায়ন করতে দেখা যায়নি। ফলে একে ফাঁকা বুলি হিসেবেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

বনজদ্রব্য পরিবহন (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০১১ এর ৫ ধারায় বলা আছে সড়ক ও জনপথ, বাঁধ, রেলপথ, সংযোগ সড়ক ইত্যাদি ভূমি থেকে বনজ সম্পদ আহরণ, অপসারণ বা পরিবহণ করতে হলে বন বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন হয়। তবে সেই আইনের তোয়াক্কা করেনি ডিএনসিসি। অনুমতি না নিয়ে বন বিভাগের অফিসের সামনের গাছ কাটলেও ডিএনসিসির এই কাজে বাঁধা দেয়নি বন বিভাগ।  

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, ‘ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও সড়ক নিরাপত্তা’ প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন কাজে এরইমধ্যে প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে ডিএনসিসি। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

গুগল স্ট্রিট ভিউ ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, মহাখালী-গুলশান রোডের মধ্যবর্তী ডিভাইডারে প্রায় ৩০০টি গাছ ছিল। সারেজমিনে দেখা যায়, মহাখালী-গুলশান সড়কে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ও হাসপাতালের সামনের সড়কের ডিভাইডারে চলমান সংস্কার কাজের কারণে অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ডিভাইডারের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে ৩০টি গাছের গুঁড়ি।  

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জনি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলিপ বাবু জানান, প্রকল্পের কাজের সময় মরে যাওয়া গাছগুলোকেই  শুধু সরিয়ে নেওয়া হয়েছে যাতে সেগুলো রাস্তায় পড়ে দুর্ঘটনা না ঘটে। কাজের শুরুতে কোনো গাছ কাটা হয়নি। তবে সেখানে কাজ করা শ্রমিকরা ও স্থানীয়রা বলছেন, কাজের সুবিধার জন্য সেখান থেকে গাছ কাটা হয়েছে।  

গাছ কাটার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, কাজ করার সময় ঝুঁকির কারণে কয়েকটি গাছ কাটা হয়ে থাকতে পারে। তবে বন বিভাগের অনুমতির বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।  

সম্প্রতি বুয়েটের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগ জানিয়েছে, ঢাকায় ২০ শতাংশ বন প্রয়োজন, যেখানে এই ধরনের স্থান আছে সাড়ে ৮ শতাংশের কম। সচেতন মহল বলছে, উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তাদের বোঝা উচিৎ গাছ না কেটেও একটি রোড ডিভাইডার তৈরি করা সম্ভব।

news24bd/ARH