যেভাবে খরচ করলে আল্লাহ খুশি হন

বৈধ পন্থায় অর্থ-সম্পদ উপার্জন করা এবং তা ভালো কাজে ব্যয় করা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি বলুন, আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার রিজিক প্রশস্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তার রিজিক সংকীর্ণ করেন। তোমরা যা ব্যয় করবে তিনি এর প্রতিদান দেবেন, তিনি সর্বোত্তম রিজিকদাতা। ’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ৩৯)

মুমিনদের বৈশিষ্ট্য: নিজের প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি এসব সম্পদ অন্যের জন্যও খরচ করা চাই। তা আল্লাহভীরুদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে মুত্তাকির গুণাবলীতে বলা হয়েছে, ‘এ কিতাবে কোনো সংশয় নেই, তা মুত্তাকিদের জন্য পথনির্দেশক। যারা অদৃশ্যের ওপর বিশ্বাস করে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমার প্রদত্ত রিজিক থেকে দান করে। যারা আপনার ওপর ও আপনার আগে অবতীর্ণ গ্রন্থের ওপর বিশ্বাস করে এবং আখিরাতকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। তাঁরা তাদের রবের হেদায়াতের ওপর রয়েছে এবং তাঁরাই সফলকাম। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২-৫) 

ভালো কাজে উৎসাহ: পবিত্র কোরআনে কিয়ামতের দিন আসার আগেই মুমিনদের ভালো কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি আমার বান্দাদের বলুন, যারা ঈমান আনে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদের যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে সেই দিন আসার আগে যখন কোনো ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব কাজে আসবে না। ’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৩১) 

অর্থ ব্যয়ের অনেক খাত রয়েছে। বিভিন্ন হাদিসে মুমিনদের দান করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল রয়েছে; তা হলো—সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম ও চরিত্রবান ছেলে, যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম, হাদিস : ১৬৩১)

নিম্নে অর্থ ব্যয়ের সর্বোত্তম কয়েকটি খাত উল্লেখ করা হলো—

এক. মানুষের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা : মানুষের উপকারে সচেষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর সবেচেয়ে প্রিয়। মুমিনকে আনন্দ দেওয়া, তার দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবেচেয় প্রিয় সেই ব্যক্তি যে মানুষের উপকার করে। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো কোনো মুসলিমকে আনন্দ দেওয়া কিংবা তার কোনো বিপদ দূর করা বা ঋণ পরিশোধ করা বা ক্ষুধা নিবারণ করা। এই মসজিদে (মসজিদ-ই-নববী) এক মাস ইতিকাফ করার চেয়ে কোনো ভাইয়ের প্রয়োজনে হেঁটে যাওয়া আমি খুবই পছন্দ করি। যে ব্যক্তি রাগ সংবরণ করে আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখেন। যে ব্যক্তি রাগ দমন করে, অথচ সে চাইলে তা প্রয়োগ করতে পারে, আল্লাহ তার অন্তরকে কিয়ামতের দিন পূর্ণ করবেন। কেউ নিজ ভাইয়ের প্রয়োজনে হেঁটে যায় এবং তা পূর্ণ করে আল্লাহ তাঁর পা সুদৃঢ় রাখবেন, যেদিন সবার পদস্খলন ঘটবে। মন্দ চরিত্র আমল নষ্ট করে দেয়; যেমন—সিরকা মধু নষ্ট করে। (তাবারানি, হাদিস : ৬০২৬)

দুই. আত্মীয়-স্বজনের জন্য ব্যয় : আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মীয়-স্বজনের জন্য অর্থ ব্যয় করা পূণ্যের কাজ। সাআদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তুমি যা কিছু ব্যয় করবে এর জন্য প্রতিদান লাভ করবে। এমনকি স্ত্রীর মুখে যা তুলে দেবে এরও বিনিময় রয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ৫৬)

তিন. মসজিদ নির্মাণ : মসজিদ নির্মাণ আল্লাহর প্রিয় কাজগুলোর অন্যতম। কারণ এর মাধ্যমে সবার নামাজের সওয়াব লাভ করা যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ঈমান আনে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারাই সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১৮)

চার. দ্বিনি শিক্ষা প্রচার : ইলম প্রচারে সার্বিক সহযোগিতা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের ইলম দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উন্নত করবেন, তোমরা যা করো আল্লাহ তা সম্পর্কে অবগত। ’ (সুরা : মুজাদালা, আয়াত : ১১)

পাঁচ. এতিম ও বিধবাদের দেখাশোনা : এতিমদের দেখাশোনা করা খুবই মর্যাদাপূর্ণ কাজ। সাহাল বিন সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি ও এতিমের তত্ত্বাবধানকারী জান্নাতে এভাবে থাকব। তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল মিলিয়ে দেখান। (বুখারি, হাদিস : ৫৩০৪)

অন্য হাদিসে এসেছে, সাফওয়ান বিন সুলাইম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, বিধবা ও অসহায় ব্যক্তির ভরণপোষণে সচেষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারী মতো। কিংবা ওই ব্যক্তির মতো যে দিনে রোজা রাখে এবং রাতে নামাজ পড়ে। (বুখারি, হাদিস : ৬০০৬)

ছয়. পানাহারের ব্যবস্থা করা : পশুপাখি, প্রাণী ও মানুষের জন্য পানাহারের ব্যবস্থা করা সওয়াবের কাজ। পবিত্র কোরআনে মুমিনদের এই গুণের প্রশংসা করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পানির কূপ খনন করে, অতঃপর তা থেকে জিন, মানুষ ও পাখি পানি পান করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে প্রতিদান দেবেন এবং যে ব্যক্তি তিতির পাখির বাসার পরিমাণ বা এর ছোট কোনো মসজিদ নির্মাণ করল আল্লাহ তাঁর জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৩৮)

লেখক: তালহা হাসান

news24bd.tv/DHL