নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের ঢুষপাড়া আকবরপুর গ্রামে জিনকে দেওয়ার নামে পাঁচ বছরের শিশু সন্তানকে নির্মম নির্যাতন করেছেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক মা। নির্যাতনের শিকার শিশু হোসাইনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাতে এ ঘটনা ঘটে।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রাজ্জাক ও থানার ওসি সেলিম রেজা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শিশুটির নানা আমজাদ হোসেন ও মামা মিলন হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয় পুলিশ।
স্থানীয় ও পরিবারের বরাত দিয়ে তারা জানান, শিশু হোসাইনের মা রানু বেগম একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী। সম্প্রতি হোসাইনকে নিয়ে তিনি বাবার বাড়ি আকবরপুরে বেড়াতে আসেন।
সেখানে গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রানু বেগমের কাছে তার একমাত্র ভাই মিলনকে কথিত জিন নিয়ে যেতে চায় বলে শোনা যায়। এজন্য ভাইয়ের পরিবর্তে নিজ সন্তান হোসাইনকে দিতে চান রানু। তবে ছেলেকে জিনের কাছে দিলে হত্যা করে দিতে হবে- এমন বিশ্বাসে হোসাইনকে হত্যার চেষ্টা করেন রানু বেগম। শুরু হয় শিশু হোসাইনের উপর আদিম বর্বরতা-নির্যাতন। ওই দিন সন্ধ্যায় প্রথমে হোসাইনকে বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে মারার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন রানু বেগম। এরপর রাতভর হোসাইনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আগুনের ছেঁকা, পেরেক দিয়ে সারা শরীর খামচানো, লাঠিপেটা এবং সর্বশেষ পাকা দেয়ালে মাথা চেপে ঘষা দিয়ে হত্যাচেষ্টা করেন তিনি।
বুধবার সকালে আবারো নির্যাতন শুরু করলে হোসাইনের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে যায়। নির্যাতন বন্ধ করতে বলে। অনুরোধ না শুনলে দরজা ভেঙ্গে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে তারা।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, এমন নির্যাতনের কারণে শিশু হোসাইন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা নিবিড়ভাবে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কফিল উদ্দীন জানান, বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে রানু সন্তানের উপর নির্যাতন চালাতে পেরেছে। এই কাজে পরিবারের অন্যদের সম্পৃক্ততা নেই।
লালপুর থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, ইউপি সদস্যসহ স্থানীয়রা রানু বেগমকে মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সুস্থ হবার পর শিশুটিকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা রাখার আশ্বাস দিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)