করোনা প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত হুমকির মুখে রয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীরা। হুমকিগুলো হলো- ভাইরাসের সংক্রমণ, দীর্ঘকালীন সেবা দেওয়ার ধকল, মানসিক ও শারীরিক অবসাদ, পেশাগত জ্বলন, শারীরিক ও মানসিক সংঘাত। এই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্য বিশেষ করে তাদের কর্মক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেটি প্রাধান্য পেয়েছে।   

স্বাস্থ্যকর্মীদের অধিকার, করণীয় এবং দায়িত্ব স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসা কেন্দ্রের মালিক ও ম্যানেজাররা যা করতে পারেন..

১। প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা ও বিশেষ করে স্বাস্থ্যগত যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে তদারকি করতে হবে।   ২। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য কর্মীদের তথ্য, নির্দেশনা এবং সঠিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিশেষ করে সংক্রমণ রোধে প্রশিক্ষণ প্রদান। ৩। ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পরিধান, ব্যবহার শেষে খুলে ফেলা এবং ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিরাপদে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা।   ৪। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় যেসব স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম বিশেষ করে মাস্ক,  গ্লোভস, চশমা, গাউন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, পানিসহ শরীর পরিষ্কার রাখার যাবতীয় সরঞ্জামের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে সেবা দেয়ার সময় কর্মীরা মনে করেন তাদের স্বাস্থ্যগত সকল নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৫। করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত সরঞ্জামের সাথে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের পরিচিতি করাতে হবে। যাতে করে তারা সঠিকভাবে করোনা টেস্ট করতে পারেন ও রোগীদের উপযুক্ত সেবা দেয়ার পাশাপাশি রোগী-জনসাধারণকে এই রোগের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেন। ৬। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের প্রয়োজনীয় বিবেচনায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। ৭। কর্মক্ষেত্রে একটি দোষারোপমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে যেন স্বাস্থ্যকর্মীরা যেকোন ঘটনার তথ্য দিতে পারেন। বিশেষ করে শ্বাসযন্ত্রে রক্তের সংক্রমণ, দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে করে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক ফলোআপ তথ্য জানানো সম্ভব হয়। ৮। স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের ব্যক্তিগত মূল্যায়নের সুযোগ, উপসর্গের বিষয়ে রিপোর্ট করা এবং অসুস্থ হলে বাসায় থাকার বিষয়ে পরামর্শ দিতে হবে। পাশাপাশি পেশাগত সুরক্ষা বাস্তবায়ন এবং ঝুঁকি শনাক্তকরণ এবং মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। ৯। বিরতিসহ কাজের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ১০। পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে পরামর্শ করুন। পেশাগত দায়িত্ব পালনে অসুস্থতার বিষয়ে শ্রম পরিদর্শককে অবহিত করুন। ১১। যেকোনো অনাহুত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজে থেকে সরিয়ে অধিকার দিন। তারা যে কাজের পরিস্থিতি থেকে থাকে সেই বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য আসন্ন এবং গুরুতর বিপদ সম্পর্কে অবহিত করুন। ১২। কর্মক্ষেত্রে যদি স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত কর্মীদের কাজ থেকে বিরত রাখুন। ১৩। সেবা দিতে গিয়ে যদি কোন স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন তবে তার ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং সম্মান রক্ষা করুন। ১৪। কর্মীদের অবসাদ কাটাতে তাদের মানসিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। ১৫। ম্যানেজমেন্ট ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং তাদের প্রতিনিধিদের মাঝে সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের যা করা উচিত

১। পেশাগত নিরাপত্তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যের কাছে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত পেশাগত ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়ে ট্রেনিং নিতে হবে। ২। অসুস্থতা নির্ধারণ, রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রদত্ত নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। ৩। রোগীদের সম্মানের সাথে চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ এবং মর্যাদা দিতে হবে। ৪। রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনে গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে। ৫। সন্দেহভাজন এবং নিশ্চিত রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য-বিষয়ক তথ্য প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা মেনে চলতে হবে। ৬। যারা আক্রান্ত নন বা যাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই তারাসহ সকলকে জনস্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে। ৭। চিকিৎসা দেওয়ার আগে সঠিক নিয়মে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পরিধান, খুলে ফেলা এবং সেগুলোর ডিস্পোজ করতে হবে। ৮। চিকিৎসা দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেক্ষেত্রে আইসোলেশন পর্যবেক্ষণ করে ম্যানেজারদের অসুস্থতার খবর দিন।   ৯। স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার ঝুঁকি, মানসিক চাপ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিলে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিন। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানির দিকে শূন্য-সহনশীলতার নীতিগুলো অনুসরণ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের জানান। ১০। যে কোনও পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সুপারভাইজারকে রিপোর্ট করুন। যাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অন্যান্য সমস্যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কোনো পরিবর্তন যেন নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে সেটির জন্য গভীর পর্যবেক্ষণ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এসব পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করা হবে। আর যদি কোনো সমস্যা না হয় তবে অভ্যন্তরীণ এই ডকুমেন্টের মেয়াদ প্রকাশের দুবছর পর শেষ হবে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)