কবি শামসুর রাহমান লক্ষ বাঙালির মতো আমারও প্রিয় কবি। তাঁর কবিতার ভক্ত সেই ইন্টারমিডিয়েট কলেজ জীবন থেকে। বাংলা ভাষার আধুনিক কবিদের মধ্যে তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু বরাবরই নগরজীবন। নগরজীবনের দহন ও দাহন দুটোই বিধৃত হয়েছে তাঁর কাব্যে। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গুণ হচ্ছে, তাঁর ভাষা ও কাব্যিকতা। প্রচণ্ড রাজনীতি সচেতন কবি ছিলেন তিনি। স্বাধীনতা নিয়ে রচিত তাঁর কবিতা চিরদিন আমাদেরকে আন্দোলিত করবে কারণ কবিতাগুলো কাব্যিক, শ্রুতিমধুর।
তাঁর সঙ্গে আমার একবারই সাক্ষাৎ হয়েছিল সময়টা সম্ভবত ১৯৯৬-৯৭ সাল হবে। তিনি জাপান থেকে প্রকাশিত বাংলা মাসিক কাগজ ‘মানচিত্র’র প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন ১৯৯৭ সালের অক্টোবর সংখ্যা থেকে।
মানচিত্র অফিসে কবি শামসুর রাহমান
সেই সময় ‘মানচিত্রে’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন বন্ধুবর কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। তিনি আমাকে শামসুর রাহমানের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন আলাপ হয়েছিল। তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধ ‘মানচিত্রে’ প্রকাশ করতে পেরে আমি গর্বিত। ‘মানচিত্র’র ইতিহাসে তিনিও একজন উজ্জ্বল স্মৃতি।
আরও পড়ুন: আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে
১৯৯৭ সালের ১৩ জুন যখন ঢাকার ৮৭, আজিজ সুপার মাকের্টের তৃতীয় তলায় ‘মানচিত্র’র ঢাকা অফিস চালু হয় তখন তিনি ফিতা কেটে উদ্বোধন করেছিলেন, দুর্ভাগ্য সেই শুভলগ্নে আমি ব্যস্ততার জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারিনি। মানচিত্র’র আরেকজন সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, তিনিও তখন সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের অনেক কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বিশেষ করে যারা মানচিত্রে তখন নিয়মিত লিখতেন।
মানচিত্র’র ঢাকা অফিস উদ্বোধন করছেন কবি শামসুর রাহমান
এক যুগ কাগজটি প্রকাশের পর নানা কারণে বন্ধ করে দিতে হল ২০০২ সালে। সেই সময় কবি শামসুর রাহমানের একটি কবিতা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছিলেন দুলাল। সেটি আর প্রকাশ করা যায়নি। তাই আজকে কবির ৯১তম জন্ম বার্ষিকীতে অমূল্য স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেই কবিতাটি কবিভক্তদেরকে সামনে তুলে ধরতে চাই।
বামে পথ চলা শামসুর রাহমান এই যে জনাব, মধ্য দুপুরে এমন হন্তদন্ত হয়ে বলুন তো যাচ্ছেন কোথায়? খুব ঘাম ঝরছে শরীর বেয়ে, চুল সুদ্ধ ভেজা। এ বয়সে সাজে কি এমন কাজ? পথচারী নিরুত্তর, শুধু হাঁটছেন, হাঁটছেন, বামে হাঁটছেন। কী যে করছেন ঐ ক্লান্ত দেহমনে, যাবেন না বামে, সে-পথে অনেক বিষ-কাঁটা। আরাম আয়েশ নেই, আগুনের হলকা, বন্দীদশা, দুঃখ আছে। তবুও অদম্য পথচারী; রোদে পোড়া শরীরকে বাঁ দিকে চালিয়ে যান সর্বশক্তি দিয়ে। ক‚ট, ভন্ড মঙ্গলাকাঙ্খীর উপদেশ, দরদ ঝরছে শ্রাবণ-ধারার মতো। সেই পথিক অবিচলিত তবু, চলেছেন অভীষ্টের লক্ষ্যে শুধু। আলো মুছে যাচ্ছে প্রায়, পা’দুটো অবশ হয়ে আসে----- যোজন যোজন দূরে প্রিয় স্বর্ণচূড়া।
news24bd.tv আহমেদ