এখনতো মেকআপের আক্রমণে আসল নকল বুঝিনা: আসিফ

সিনেমা নাটক পত্রিকায় তারকাদের দেখার জন্য উদগ্রীব থাকতাম। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তাম তাদের ব্যাপারে। এখনকার মত আটলান্টিকসম মিডিয়া আমাদের সময় ছিলনা। ভিলেন ছাড়া সব তারকাদের প্রতি রেসপেক্ট ছিল অনেক। সাদাকালো স্ক্রীনের ওপার থেকে একটু নাক বোঁচা বা ছোট চোখের নায়িকা গায়িকা দেখলে খুব চিন্তায় পড়ে যেতাম। ভাবতাম এদের যদি ভাল বিয়ে না হয় তাহলে খুব কষ্ট পাবো। বাসায় প্রিয় প্লেয়ারদের পোস্টার কিনে লাগিয়ে রাখতাম, ভিউকার্ড জমাতাম। বন্ধুদের আড্ডায় যে যত বেশী জানে তার ততো বেশী চাপা মারার সুযোগ ছিল। আমার ছোটবেলায় তারকারা ছিলেন কল্পজগতের বাসিন্দা।

  দেশের ভিতরে বাইরে পুলিশ কিংবা  ইমিগ্রেশনের জেরার চিন্তায় নিজেকে কখনো তারকা ভাবিনা। তবে তারকাদের সাথে এখন ওঠাবসা আমার, বলতে গেলে এই জীবনটাই জড়িয়ে গেছে শো’বিজে। যাদের বিয়ে না হওয়া নিয়ে চিন্তা করতাম তাদের সাথেও মেশার সৌভাগ্য হয়েছে।  

সাদাকালো স্ক্রীনের ধোঁকায় ছোটবেলায় তাদের সৌন্দর্য বুঝতে পারিনি। উনাদের এখন বলতেও পারিনা আপা আপনার বোঁচা নাক নিয়ে আমার টেনশন ছিল। এ এক আজব পরীক্ষা, যাদের নিয়ে ভাবতাম তারা সামনে অথচ ভয়ে অতীত ভাবনা শেয়ার করতে পারছিনা। এখনতো মেকআপের আক্রমণে আসল নকল বুঝিনা। অনেক জুনিয়র তারকাদের সাথে বারবার পরিচিত হয়েও চেহারা মনে রাখতে পারিনা। ভুল নামে ডেকে বিপদে পড়ে যাই প্রায়ই।

তেইশ বছর কাটিয়ে দিলাম এই রঙ্গীন জগতে। আমি কখনোই ফ্যাশনেবল ছিলাম না। তারকাদের সাথে যেসব ব্যাপারগুলো যায় সেগুলে আমার মধ্যে নেই। সাধাসিধে জীবনযাপনের সাথে নামডাক হয়ে যাওয়ার কাহিনীগুলো এডজাস্ট করে চলার চেষ্টা করছি এখনো। আমিও সাধারণ থেকে আসিফ হয়েছি।

আরও পড়ুন: কোন ধর্মই সহিংসতা বা উগ্রবাদের শিক্ষা দেয় না: নুর

আমাকে নিয়ে আমার ফ্যানদের আবেগগুলো বহুলাংশেই বুঝতে পারি, ভালও লাগে ভাবতে। তারকাদের চুল পড়তে পারেনা, তাদের বয়স বাড়তে পারেনা, শারীরিক গড়নের উথ্থান পতন হতে পারেনা এরকম নানান ভাবনা প্রচলিত, প্রচুর কমেন্টও পাই। আমার মনে হয় এটাই খ্যাতিমান হওয়ার বড় প্রাপ্তি, সবুজ হয়ে মানুষের মনে বেঁচে থাকা যায়। আমার মাথায় চুল কমেছে, চোখের দৃষ্টিও হালকা ক্ষীণ হয়েছে, শরীরে মেদ জমেছে আরো কত কি ! 

এভাবে আস্তে আস্তে ক্ষয়ে ক্ষয়ে একদিন সরে যেতে হবে দুনিয়া থেকে, রয়ে যাবে শুধু স্মৃতিগুলো। আকাশের সবচেয়ে  উজ্জ্বল নক্ষত্র সূর্যটাও প্রতিদিন উদয় হয় অস্ত যাওয়ার মধ্য দিয়ে আসল সত্যটা মনে করিয়ে দেয়। প্রতিটি নক্ষত্রের পতনের জন্য সময় নির্ধারন করা আছে, এটাই নিয়ম, একটু আগে আর পরে এই যা। সব শেষ হয়ে যাবে একসময়, থেকে যাবে শুধু ভালবাসা বাসিটা, মরে যাবে ঘৃনার শাখা প্রশাখা...

লেখক: আসিফ আকবর, সংগীত শিল্পী (ফেসবুক)

news24bd.tv আহমেদ