ইসলামের আলোকে জীবনে সুখ ও সফলতার রহস্য

পৃথিবীতে সবাই সুখ ও সফলতা প্রত্যাশা করে। এখানে মানুষের চাহিদা অসীম কিন্তু চাহিদা পূরণের সময় ও সম্পদ সীমিত। তাই যে ব্যক্তি এখানে চাহিদা সীমিত করতে সক্ষম হবে সেই সুখী হবে এবং সফলতার স্বাদ পাবে। চাহিদা পূরণের জায়গা তো পরকাল; সেখানে মানুষ যা চাইবে তাই পাবে। তাই পৃথিবীতে অল্পে তুষ্টির গুণ অর্জন ছাড়া সুখ ও সফলতা কল্পনা করা যায় না। অল্পে তুষ্টিকে আরবিতে ‘কানাআত’ বলা হয়। এটি মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। অল্পে তুষ্টি মানে আল্লাহ তায়ালা আমাকে যা দিয়েছেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা।  

জাগতিক যত বিষয় আছে, তাতে কানাআত বা অল্পে তুষ্টিতে মুমিনের প্রকৃত সফলতা নিহিত রয়েছে। অল্পে তুষ্টির বিপরীত হলো লোভ ও মোহ। বেশি উপার্জন করতে হবে, বেশি থেকে বেশি পেতে হবে, আমাকে ধন-সম্পদ বাড়াতেই হবে, আসবাবপত্র বাড়াতেই থাকতে হবে এমনটির চাহিদা মুমিনের জন্য বাঞ্ছনীয় নয়। সম্পদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ একটি স্বাভাবিক বিষয়। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘নারী, সন্তান, রাশিকৃত স্বর্ণরৌপ্য আর চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদিপশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এসব ইহজীবনের ভোগ্যবস্তু। আর আল্লাহরই নিকট রয়েছে উত্তম আশ্রয়স্থল। ’ (সুরা আলে ইমরান : ১৪)।   নিজের সম্পদ কম-বেশি যতটুকুই হোক তাতেই যারা তৃপ্ত, দুনিয়ার জীবন তাদের জন্য হয়ে ওঠে অনেক বেশি সুখকর। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) আপন ছেলেকে এ বলে উপদেশ দিয়েছিলেন ‘বাবা শোন! যখন কোনো কিছু তালাশ করবে তখন অল্পে তুষ্টি সঙ্গে নিয়ে তালাশ করবে। আর তোমার যদি অল্পে তুষ্টি না থাকে তা হলে কোনো সম্পদই তোমার কাজে আসবে না। ’(আল মুজালাসাতু ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম : ১১১০)

আমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে আমিও মজায় আছি : নাসিরের সাবেক প্রেমিকা

নাসির প্রেমিক না আমার বন্ধু : মডেল মিম

পুরুষ নিষিদ্ধ গ্রামেও যেভাবে গর্ভবতী হন নারীরা!

বউ যেন এদিক-ওদিক ভাইগা না যায় : নাসিরের সাবেক প্রেমিকা (ভিডিও)

প্রতিটি মানুষের কাছে ধনী-দরিদ্রের সংজ্ঞা এমন সম্পদ-ঐশ্বর্যে যে সমৃদ্ধ সে-ই ধনী; পক্ষান্তরে সহায়-সম্পদ যার কম সে-ই দরিদ্র। অথচ এক দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবি হজরত আবু যরকে (রা.) বললেন, আবু যর! তুমি কি সম্পদের প্রাচুর্যকেই সচ্ছলতা মনে কর? হজরত আবু যর (রা.) বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলুল্লাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরপর বললেন, তা হলে তুমি সম্পদের স্বল্পতাকে দারিদ্র্য মনে কর? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আসলে সচ্ছলতা তো হৃদয়ের সচ্ছলতাই, আর হৃদয়ের দারিদ্র্যই হলো আসল দারিদ্র্য। ’ (ইবনে হিব্বান : ৬৮৫)

অঢেল টাকা-পয়সা উপার্জন মানুষকে দাম্ভিক ও অহঙ্কারী করে তোলে এবং আল্লাহর হুকুম-আহকাম ভুলিয়ে দেয়। তাই কম-বেশি সম্পদ এখন যাই আছে, তা নিয়েই ইবাদতে মনোনিবেশ করা উচিত। এর পাশাপাশি যদি কেউ সম্পদ বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করে যায়, তা হলে তা নিন্দিত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের যদি দুই উপত্যকা ভর্তি সম্পদ থাকে, তা হলে সে তৃতীয় আরেকটি তালাশ করবে। আদম সন্তানের পেট তো (কবরের) মাটি ছাড়া আর কিছুই ভরিয়ে দিতে পারবে না। ’ (বুখারি : ৬৪৩৬)। তাই আমাদের পার্থিব বিষয়ে অল্পতে তুষ্ট হয়ে আল্লাহর শোকর আদায় করতে হবে। রাসুলে কারিম (সা.) উম্মতদেরকে শোকর আদায়ের পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের চেয়ে যারা গরিব-দুঃখী তাদেরকে দেখ, তোমাদের চেয়ে যারা সুখী-সচ্ছল তাদেরকে নয়। এটা হবে তোমাদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের শোকর গোজারির পক্ষে অধিক সহায়ক ও সম্ভাবনাপূর্ণ। ’ (মুসলিম : ২৯৬৩)

অল্পে তুষ্টির ক্ষেত্র হলো জাগতিক বিষয়সমূহ। কিন্তু‘ দ্বীন-ঈমানের বিষয়ে, ইবাদত, নেক আমল ও আখেরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একে অন্যের প্রতিযোগিতা করতে হবে। ফরজ নামাজ ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার বাইরে নফল ইবাদত বেশি বেশি করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নেক কাজে তোমরা পরস্পর প্রতিযোগিতা কর। ’ (সুরা মায়িদা : ৪৮)। নেক আমলে বিলম্ব করা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাই নেক কাজে এগিয়ে যেতে হবে দ্রুততার সঙ্গে, একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। যখন যতটুকু সম্ভব নেক কাজ করে নিতে হবে।

আজকের সুযোগ আজকেই কাজে লাগাতে হবে। আগামীকালের অপেক্ষায় থেকে এ সুযোগ নষ্ট করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি নিয়ামত এমন, যাতে অনেক মানুষই ধোঁকায় পড়ে আছে সুস্থতা ও অবসর। ’ (বুখারি : ৬৪১২)। অতএব অল্পে তুষ্টিতে সফল হতে হলে প্রয়োজন আল্লাহ তায়ালার প্রতি দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস, পরকালীন জীবনকে প্রাধান্য দেওয়া। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অল্পে তুষ্টির গুণ ও পরকালের পাথেয় অর্জন করার তওফিক দান করুন। আমিন।

news24bd.tv/আলী