আরও ১৫০০ অসহায় পরিবার পেল বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ

লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটেন ৯০ পেরোনো দিপজান বেগম। বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন, ভারি একটা বস্তা। কিন্তু ওটা বহনের শক্তিটুকুও নেই তার। শত শত হাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ তুলে দিতে ব্যস্ত কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সদস্যরা। ওই বৃদ্ধার দিকে হঠাৎ চোখ পড়ল শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামানের। এগিয়ে গেলেন তিনি। বস্তাটা এক হাতে আর অন্যহাতে দিপজানকে ধরে সামনে এগোতে থাকেন রিকশার খোঁজে। কিন্তু দিপজানের বাড়ি যাওয়ায় রাস্তা এতটাই খারাপ যে কেউই যেতে রাজি হলেন না। বস্তাটা টেনে বাড়ি যাওয়া সম্ভব নয় বৃদ্ধার পক্ষে। তাকে তো ছেড়েও দেওয়া যায় না। অগত্যা জাকারিয়া হাঁটতেই থাকলেন। এক হাতে ১৬ কেজি ওজনের বস্তা আরেক হাতে বৃদ্ধাকে ধরে পাড়ি দিলেন এক কিলোমিটার পথ। অবশেষে দিপজানের বাড়ি পৌঁছলেন।  

করোনায় লেখাপড়া স্থবির হয়ে পড়েছে পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া শিল্পী আক্তারের। বাবা আসতে না পারায় ছোট্ট এই মেয়েটিই চলে এসেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপহারসামগ্রী নিতে। তার বস্তাও ভ্যান পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছেন শুভসংঘের এক সদস্য। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় পেয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছে শিল্পী। হাসিমুখে বলেন, আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এটা বাসায় নিয়ে গেলে আম্মু খুশি হবে। আপনাদের জন্য দোয়া করবে।

শুধু দিপজান-শিল্পী নয়, এমন অসংখ্য অসহায়ের কষ্ট লাঘবে বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণসামগ্রী নিয়ে নিরন্তর ছুটে যাচ্ছেন শুভসংঘের সদস্যরা। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় খাবারসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন অসহায় পরিবারের দ্বারে দ্বারে। এরই ধারাবাহিকতায় গাইবান্ধা জেলায় আরো ১৫০০ অসহায় ও অতিদরিদ্র পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। এসময় সকলের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয় এবং করোনা সচেতনামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়।

আজ বুধবার সকালে সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়ন, সাদুল্যাপুর উপজেলা, সাঘাটা উপজেলা ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাসহ গাইবান্ধার ১৫০০ অসহায় পরিবারের মাঝে এসব ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়।

এসময় কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় কালের কন্ঠ শুভসংঘ প্রান্তিক হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা উত্তরবঙ্গের ছয়টি জেলায় ত্রাণসহায়তা দিয়েছি। সামনেও আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আমাদের শুভসংঘের সেচ্ছাসেবীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই কাজগুলো করছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছেন।

এসময় ত্রাণ বিতরণে আরো উপস্থিত ছিলেন কামারজানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির, প্রধান শিক্ষক মো. সবুজ মিয়া, কামারজানীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আসাদ। এরপর গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলায় ৩০০ অসহায় ও অতিদরিদ্র পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে শুভসংঘ। সাদুল্লাপুর খোদেজা মেমোরিয়াল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

এসময় উপস্থিত হয়ে সাদুল্যাপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহরিয়ার খান বিপ্লব বলেন, করোনাকালীন মুহূর্তে খুব সুশৃংখলভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় শুভসংঘের স্বেচ্ছাসেবীরা আমাদের গাইবান্ধা জেলায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন। আমার এই উপজেলায়ও আজ তারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শুধু তাই নয় বসুন্ধরা গ্রুপ করোনা রোগীদের জন্যও মেডিকেল তৈরি করেছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান তার কর্মীদের দিয়ে অসহায় মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। আজকে শুভসংঘের সেচ্ছাসেবীরা আমার উপজেলার যেসকল মানুষ ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার যোগ্য তাদেরকেই খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিয়েছেন, যা অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। তাই আমি শুভসংঘের বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাই এবং তাদের জন্য দোয়া করি।

আপন বলতে কেউ নেই রোকেয়া বেগমের। বৃদ্ধ বয়সে নিজের কুড়ে ঘরটাই শেষ সম্বল। এক বেলা না খেয়ে থাকলেও দেখতে আসেন না কেউ। বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসামগ্রী পেয়ে তিনি বলেন, তোমরা দয়া কইরা যা দিলা তাই খামু বাবা। আমার আর কেউ নাই। তোমাদের জন্য হাজার হাজার দোয়া। তোমাদের ভালো হোক, বসুন্ধরার ভালো হোক।

কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন হাছেন আলী। চলতি মৌসুমে কোনো কাজ পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কাম কাইজ করবার পারি না। অনেক ক্ষেত খালি পড়ে থাকে। তাই কেউ কামে ডাকে না। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় পেয়ে তিনি বলেন, এহন খুব কষ্টে আছি। আজকে আপনারা চাল-ডাল-আটা দিলেন। অনেক ধন্যবাদ জানাই। আল্লাহর কাছে হাজার শুকুর। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের ভালো করুক। তারে আরো দেক। আমাদের দেওয়ার মতো আরো সামর্থ্য দেক।

এসময় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নবী নেওয়াজ শেখ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা, সাদুল্লাপুর উপজেলা শুভসংঘের সভাপতি মোরসালিন রহমান মুন্না, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণ সাহাসহ অন্যান্যদের মধ্যে রওশন আলম, জয় সরকার, সজীব সরকার, মোরশেদ আলম, বাধন সাহা, সাব্বির হোসেন, সিজ্জাত হাসান, শফিকুল ইসলাম, সুমন মিয়া, ওমর ফারুক, মেহেদি হাসান, এনামুল হক, আবদুর রহমান প্রমুখ।

ঘুরে ঘুরে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করেন রাজু মিয়া। এতেই ঘোরে তার সংসারের চাকা। পরিবারে আছেন বৃদ্ধ মা, স্ত্রী আর এক মেয়ে। করোনার টালমাটাল পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে তার বিক্রি। ফলে পরিবার নিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। রাজু বলেন, করোনার পর থেকে দিনগুলো খুব কষ্টে যাচ্ছে। এ সময় আপনাদের সাহায্য পেয়ে খুব উপকার হইল। পরিবার নিয়ে কিছুদিন খাইতে পারবো। অনেক ভালো হইলো। আপনাদের জন্য দোয়া করি, সুখে থাকেন।

সবুর মিয়া নামের এক উপকারভোগী বলেন, অটোভ্যান চালাই। লকডাউনে ভ্যান চালাইতে পারি না। টুকটাক যা চালাই তা দিয়েই কোনরকম চলি। যাত্রীদের থেকে ১০-২০ টাকা বেশি চাইয়া নেই। টিভিতে দেখছি বসুন্ধরা গ্রুপ। তারা আজ খাবার দিল। তাদের জন্য দোয়া করি তারা অরো বড় হোক।   

গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলায় কাজী আজহার আলী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়ে সাঘাটার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তুহিন হাসান বলেন, কালের কন্ঠ শুভসংঘের সদস্যরা বেছে বেছে যারা অসহায় তাদের তালিকাই করেছে। এটি আমাদের করতেও হিমশিম খেতে হয়। তাই শুভসংঘকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বসুন্ধরা গ্রুপকেও ধন্যবাদ জানাই প্রান্তিক হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।  

এছাড়া ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনায়েত কবির, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান, সাঘাটা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নওয়াব আলী প্রধান সাজু, কাজী আজহার আলী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিমউদদীন মোল্লা, বোনারপাড়া সরকারি কলেজের প্রভাষক শাহ্ আলম, শুভসংঘের সাঘাটা উপজেলার সভাপতি আরফিন আলম সানি, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ শান্তসহ অন্যান্যদের মধ্যে মোঃ পারভেজ, আশিকুর জামান সোহাগ, দীপ্তি সরকার, নাজমুল মোল্লা, রাজিয়া আক্তার ইতি, মহসীন আলী, মনোয়ার হোসেন, সাইদুর রহমান, রাজিয়া আক্তার রোশনী, ফিরোজ আহমেদ, জসীম উদ্দীন, রায়হান কবির, ফরহাদ সরকার, শুভ সরকার, কামরুল হাসান, মাহমুদুল হাসান, জামিল হোসেন, রাকিবুল হাসান নিরব, নুর আলম, আরিফিন আক্তার, জায়মা জান্নাত, নাজমুল হুদা পলাশ, তাওফিক ওমর, মানিলা নিশা প্রমুখ।

এদিন বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়ও ৩০০ অসহায় ও অতিদরিদ্র পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে শুভসংঘ। উপজেলার লোকনাথ ডেইরি ফার্ম মাঠে এই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে শুভসংঘের সদস্যরা।

বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ সহায়তা পেয়ে উপকারভোগী রাবেয়া বেগম বলেন, আমার দেখার মতো কেউ নাই। দশ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। কোন ছেলে নাই। কেউ সাহায্য করে না। নিজেই টুকটাক কাজ করে খেয়ে বেঁচে আছি। তোমরা আমাকে আজকে খাবার দিলা। আল্লাহ তোমাদের হায়াত দান করুন। তোমরা ভালো থাকো।

আনোয়ারা বেগম বলেন, আমার স্বামী অচল। জমিজমা কিছু নাই। ছেলে মাঝে মধ্যে কিছু দেয় কিন্তু তা দিয়া সংসার চলে না। মেম্বার-চেয়ারম্যান সাহায্য করলেও আমর মতো গরীবরা পায় না। আপনারা আজকে চাল-ডাল দিলেন। আল্লাহ আপনাদের ভালো করবে।

এসময় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল লতিফ প্রধান বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান দেশের সকল জেলার মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন, তাই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা। শুভসংঘের সকল সদস্যকেও ধন্যবাদ জানাই তাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য।  

এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ.কে.এম মেহেদী হাসান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম, শুভসংঘ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শাখার উপদেষ্টা বাবুলাল চৌধুরী, সভাপতি তাহমিদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন আহমেদ বিল্পবসহ অন্যান্যদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান মুন, তাহমীদুর রহমান তাহমীদ, রাশিদ তাকি রাশু, মাহফুজ রহমান মুন, হুমায়ুন আহমেদ বিপ্লব, নেহরিন প্রিয়তী, বাপ্পি কুমার ঘোষ, প্রাপ্তি সরকার, অয়ন সুলতান, তনু রানী রায়, মুরাদ, স্বাধীন, সিয়াম সিদ্দিক, মিলন, জুয়েল, জিহাদ, সাঈদ, মুবিন, তন্ময়, আবিদ সিয়াম, সাদিয়া, স্বর্না, রুদ্র, সিহাব প্রমুখ।

এসময় ত্রাণ বিতরণ সকল কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন, সদস্য শরীফ মাহদী আশরাফ জীবন, গাইবান্ধা জেলার সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস লতা, সামিউল ইসলাম, রওজাতুন্নাহার লাবণ্য, মিনহাজুর রহমান নয়ন, সারাফ সোহাইবা নিহা, উম্মে কুলছুম তালুকদার, দেবী সাহা, রেহানা আক্তার রিসাত, উম্মে সালমা বৃষ্টি, তানহা প্রমুখ।

আরও পড়ুন:

৪ হাজার দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটাল বসুন্ধরা গ্রুপ

গাইবান্ধায় বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ সহায়তা

গাজীপুরে বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধ

ডিম ফুটে একে একে বেরিয়ে এল ২৮ অজগরের বাচ্চা

লকডাউন শিথিলের আগের দিন ঝরল দুই শতাধিক প্রাণ

news24bd.tv / তৌহিদ