নাটোরের সেই শিমুল বৃক্ষ অস্তিত্ব সঙ্কটে

নাটোরের গুরুদাসপুরের খুবজীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর বাজার সংলগ্ন প্রায় আড়াইশত বছরের ঐতিহাসিক শিমুল গাছটি বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। অন্যান্য গাছের তুলনায় ওই শিমুল গাছটির অবয়ব গঠিত হয়েছে এক আশ্চর্য্য আঙ্গিকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- মাটির ওপরে কক্ষ আকৃতির পাঁচ থেকে ছয়টি ছোটবড় শেকর রয়েছে। বর্তমানে বর্ষিয়ান ওই গাছটি অযত্ন অবহেলায় জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে। যেন অশ্রু ভেজা শরীরে সিক্ত করছে তার ছাঁয়াতল। গাছটিতে আর লাগে না সৌন্দর্যের ছোঁয়া।

বয়সের ভাড়ে তারুণ্যের বাহক ওই গাছটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। শিমুলের রক্তলাল ফুলের বাসন্তিক আগমন গেছে হারিয়ে। তবে এখনও যে তারুণ্যের হাওয়ায় শিমুল গাছটির অতৃপ্ত বাসনাকে পরিপূর্ণ করা সম্ভব, সে চিন্তা চেতনা যেন কারো নেই।

জানা যায়, আশির দশকে ওই শিমুল গাছ নিয়ে প্রায় তিনশতক সরকারি জমির ওপর গড়ে ওঠে এক শ্রেণির মারফত ভক্তদের আস্তানা। সেখানে শুরু হয় স্থানীয় ও বহিরাগত মারফত ভক্তদের আনাগোনা। আফাজ উদ্দিন নামে ওই এলাকার এক মোক্ষম সাধক ভক্তদের নৈমিত্তিক সেবা দিতেন। তখন শিমুল বৃক্ষের ছাঁয়াতল ওইসব ভক্তদের পদভাড়ে মুখোরিত হয়ে উঠতো।

এ প্রসঙ্গে খুবজীপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. আত্হার হোসেন জানান, স্থানীয় প্রয়াত অধ্যক্ষ সরদার আব্দুল হামিদ নব্বইয়ের দশকে ওই শিমুল গাছটিকে এক ঐতিহাসিক রুপ দিয়েছিলেন। এসময় মারফত গুরু আফাজ উদ্দিন ওই শিমুল গাছটি দেখাশোনা করতেন।

সেই সঙ্গে বছরের দুটো দিন সেখানে তিনি ভক্তদের নিয়ে ঔরস মোবারক পালন করতেন। এখনও মাহে রমজানের প্রথম দিনে আর আশ্বিনের এগারো তারিখে সেখানে ওরস মোবারক ও ভক্তদের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রায় ২৩ বছর আগে বর্ষিয়ান শিমুল গাছটি রেখে আফাজ উদ্দিনের জাগতিক পর্দায় সমাপ্তি নেমে আসে।  

এরপর এলাকার শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবি অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদও চলে যান না ফেরার দেশে। ফলে ওই শিমুল গাছটির ঐতিহ্যকে ইতিহাসের রাস্তা করে দেওয়া হয়। সেখানে গড়ে ওঠে আফাজ উদ্দিনের মাজার।

আফাজ উদ্দিনের সেবাদাসি শতবছর বয়সী গৈরবজান বলেন, আফাজ গুরুর স্ত্রী পিয়ারজান দুই বছর আগে কবরবাসী হন। ফলে শিমুল গাছটির পাশে নির্মিত আফাজ গুরুর মাজার দেখভালের দায়িত্ব পড়েছে আমার ওপর। তাই মেয়ে সুফিয়া বেগমকে সঙ্গে নিয়ে আফাজ গুরুর মাজার পরিচর্যার পাশাপাশি ওই আড়াইশত বছর বয়সী শিমুল গাছটি দেখভাল করছেন। তাদের সহযোগিতা করছেন পাশের বাড়ির গৃহবধু তিন সন্তানের জননী রেজেনা বেগম।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/নাসিম/তৌহিদ)