বিশ্বের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের বেশির ভাগই বাংলাদেশে

সিডরের পর সুন্দরবনের একাংশ

বিশ্বের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের বেশির ভাগই বাংলাদেশে

অনলাইন ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় সাগরে। তাই সাগর তীরবর্তী দেশগুলো এর শিকার হয়। পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। তবে এগুলোর বেশিরভাগই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়।

যেগুলো উপকূল বা স্থলভাগে আঘাত হানে সেগুলো ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইতিহাস বলছে, সমুদ্রতীরবর্তী বহু দেশ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।  

ঘূর্ণিঝড় অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন, চীনে টাইফুন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাইক্লোন।

ইতিহাসে বহু মারাত্মক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় বিভিন্ন দেশে আঘাত হানার তথ্য আছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময় বেশ বড় বড় বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এসব ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এরমধ্যে ১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। নিচে বাংলাদেশ ও বিশ্বের কিছু বড় ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য তুলে ধরা হলো।  

বাকেরগঞ্জের ঘূর্ণিঝড়, ১৮৭৬

বরিশালের বাকেরগঞ্জে ১৮৭৬ সালের অক্টোবরে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। সে সময় ব্রিটিশ শাসনামল চলছিল। ভয়াবহ সেই ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ। বাতাসের তীব্রতা ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার, আর সমুদ্রের পানি বয়ে যাচ্ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২০ ফুট ওপর দিয়ে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে যায়। পরে অনাহার ও দুর্ভিক্ষে মারা যায় অসংখ্য মানুষ।

হাইফোং টাইফুন, ভিয়েতনাম (১৮৮১)

ভিয়েতনামের হাইফোং শহরে ১৮৮১ সালের অক্টোবর মাসে টাইফুন আঘাত হানে। দেশটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি করেছে। সেবার ভিয়েতনামে প্রায় ৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারান টাইফুনে।

ভোলা সাইক্লোন, বাংলাদেশ (১৯৭০)

বিশ্ব ইতিহাসের ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বলা হয় ভোলা সাইক্লোনকে। ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় এই সাইক্লোন। সেই ঝড়ে প্রাণ হারান অন্তত ৫ লাখ মানুষ, যাদের মধ্যে ১ লাখই ছিল জেলে। বেশিরভাগই জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মারা যান।

নিনা টাইফুন, চীন (১৯৭৫)

১৯৭৫ সালে চীনের হেনান প্রদেশে আঘাত হেনেছিল টাইফুন নিনা। যেটির ভয়াবহতায় প্রাণ হারায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ। নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ।

৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়, বাংলাদেশ (১৯৮৮)

১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টি ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়ের ফলে দেশে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বন্যা হিসেবে পরিচিত। ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৫ হাজার ৭০৮ জন মানুষ প্রাণ হারায়। ঝড়ে সেবার প্রায় ৭০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়ে যায়, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টন।

ম্যারিয়েন ঘূর্ণিঝড়, বাংলাদেশ (১৯৯১) 

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে এই ঘূর্ণিঝড়। এর ফলে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। প্রাণ হারান প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। বাস্তুহারা হয়ে পড়েন ১ কোটিরও বেশি মানুষ।

সিডর, বাংলাদেশ (২০০৭)

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে ২৬০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের সঙ্গে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় সিডর। ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার এই ঝড়ে ২ হাজার ২১৭ জন প্রাণ হারান। তীব্র পানির চাপে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ৭০ হাজার ঘরবাড়ি। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয় ৩৭ হাজার একর জমির ফসল।

নার্গিস, মিয়ানমার (২০০৮)

সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি হলো নার্গিস। ২০০৮ সালের মে মাসে মিয়ানমারে আঘাত হানে নার্গিস। এর তাণ্ডবে প্রাণ হারান ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। সাড়ে ৪ লাখ ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

আইলা, বাংলাদেশ ও ভারত (২০০৯)

২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে। ঝড়টির ব্যাস ছিল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, যা ঘূর্ণিঝড় সিডরের চেয়ে ৫০ কিলোমিটার বেশি। সিডরের মতোই আইলা প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি কয়েক লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয় এবং ২ লাখ গবাদিপশু প্রাণ হারায় এই ঝড়ে।

হ্যারিকেন ইরমা, যুক্তরাষ্ট্র (২০১৭)

২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার হ্যারিকেন ইরমা আঘাত হানে। ৩০০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের এই ঝড়ে নিহত হয় ২৮ জন। বারমুডা পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৪ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। বন্যায় প্লাবিত হয় ফ্লোরিডার বিশাল এলাকা।

হ্যারিকেন মাইকেল, যুক্তরাষ্ট্র (২০১৮)

ইরমার প্রায় ১ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলে ১০ অক্টোবর আছড়ে পড়ে হ্যারিকেন মাইকেল। সংশ্লিষ্টরা বলেন, ১শ’ বছরের মধ্যে এটিই সেখানকার সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড়। ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগের বাতাসে ক্যারিবিয়ান সাগরে সৃষ্ট হ্যারিকেনটির তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ফ্লোরিডা। গাছপালা-বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ে, তছনছ হয় অনেক বসতবাড়ি।

টাইফুন জেবি, জাপান (২০১৮)

জাপানের উপকূলে আঘাত হানা টাইফুন জেবিকে সেদেশের ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ঝড়ে প্রাণ হারান ১০ জন। এছাড়াও অন্তত ৩০০ জন আহত হন। ঝড়ের আঘাতে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। দেখা দেয় বন্যা ও ভূমিধস।

টাইফুন মাংখুট, হংকং (২০১৮)

টাইফুন মাংখুট আঘাত হানে চীনের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ গুয়াংডংয়ে। এর আগে তাণ্ডব চালায় ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ঘটে যাওয়া এই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। মাংখুটের আঘাতে ফিলিপাইনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ জন। বেশিরভাগই মারা যায় ভূমিধসে।

আরও পড়ুন...

সংগৃহীত ছবি

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং, আঘাত হানতে পারে মঙ্গলবার ভোরে

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’য়ের অবস্থান দেখুন সরাসরি 

সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ

অবশেষে 'সিত্রাংয়ে' পরিণত গভীর নিম্নচাপটি, ৪ নং সতর্কতা জারি

news24bd.tv/ইস্রাফিল