জনবল সংকটে পঞ্চগড়ের হাসপাতালগুলো

ফাইল ছবি

জনবল সংকটে পঞ্চগড়ের হাসপাতালগুলো

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

দেশের সর্ব উত্তরের এ জেলার নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশী। ভারী শিল্প কল-কারখানা নেই তাই এ জেলার মানুষের একটি বড় অংশ কৃষি নির্ভর। ঢাকা থেকে দূরত্ব প্রায় ৫শ কিলোমিটার। এ জেলা থেকে এক'শো থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে রংপুর মেডিকেল কলেজ।

তাই উপজেলা সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোই সাধারণের একমাত্র ভরসা। কিন্তু এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে রোগীরা চাহিদা অনুযায়ী সেবা পাচ্ছে না। জনবল সংকট এবং অব্যবস্থাপনায় চলছে এসব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র।

সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ায় ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসে প্রায় ৪শ রোগী।

হাসপাতালটিতে আবাসিক সেবা নিতে ভর্তি থাকে ৬০/৬৫ জন। এই হাসপাতালে ২৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও  আছে মাত্র ১১ জন। চতুর্থ শ্রেণীর পদ অর্ধেকের বেশি খালি। অ্যাম্বুলেন্স চালক ইতোমধ্যে মারা গেলেও এখনো চালক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে দুইটি অ্যাম্বুলেন্স অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

দেবীগঞ্জে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে গড়ে ৪০/৪৫ জন রোগী আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে। বহির্বিভাগে গড়ে ৩/৪ শ রোগী সেবা নিতে আসে। যেখানে চিকিৎসকের পদ আছে ২৮টি সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৪ জন  চিকিৎসক। টেকনিশিয়ানের পদ আছে ৫ জন, কর্মরত ২ জন। টেকনিশিয়ান বা রেডিওগ্রাফার নেই। তৃতীয় শ্রেণীর পদ ৬টি, আছে ২ জন। অ্যাম্বুলেন্স আছে তবে চালক নেই।

আটোয়ারী উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিত্র আরো ভয়াবহ। ২৯টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৮ জন। বহির্বিভাগে ৩/৪শ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। আন্তবিভাগে ৫০/৫৫ জন রোগী ভর্তি থাকেন। কোন টেকনিশিয়ান এবং টেকনোলজিস্ট নাই। অন্যান্য পদেও রয়েছে জনবল সংকট।

বোদা উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি থাকে গড়ে ৮০/৯০ জন। এই হাসপাতালে ৩০জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র ১২ জন। গড়ে বহির্বিভাগে প্রায় ৩শ রোগী সেবা নিতে আসে।

এই চারটি উপজেলা হাসপাতালেই আধুনিক অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত আছে। এক্স-রে মেশিন ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু সকল যন্ত্রপাতি এবং অপারেশন থিয়েটারগুলোতে ধুলিকণার স্তুপ জমেছে। পরিত্যাক্ত হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগে প্রায় ৫৫২ জন রোগী সেবা নেন। জরুরী বিভাগে সেবা নেয় গড়ে ৪৬ জন। এক'শ শয্যার এই হাসপাতালে আন্তঃবিভাগ রোগীর চাপে উপচে পড়ে। এই হাসপাতালে ৩৭টি চিকিৎকের পদের বিপরীতে আছে মাত্র ১৭ জন। ৮টি টেকনোলজিস্ট পদের বিপরীতে আছে মাত্র ২ জন। ১২টি টেকনিশিয়ানের পদে একজনও নেই। ৩টি ফার্মাসিস্ট পদের বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র একজন। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে সিজারসহ ছোট-বড় গড়ে প্রতিদিনে ৩২টি অস্ত্রোপচার হয়। সীমিত পরিসরে আধুনিক সদর হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৩টি নরমাল ডেলিভারী হয়।  

উত্তরের এই জনপদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সরকারিভাবে যেসব চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়া হয় তাদের মধ্যে কেউ কেউ যোগদানের পরপরই প্রভাব খাটিয়ে অন্য জেলায় চলে যায়। অনেকে প্রভাব খাটিয়ে যোগদান না করেই বদলি হয়ে যায়।

নার্সদের শুদ্ধাচারের বিষয়টি হতাশাজনক। রোগীদের অভিযোগ নার্সরা তাদের সাথে ভালো আচরণ করেন না। অনেকে বলছেন, অধিকাংশ সময় সিনিয়র নার্সরা স্মার্ট ফোনেই বুদ হয়ে থাকে। কোন হাসপাতালেই মান সম্পন্ন খাবার সরবরাহ করা হচ্ছেনা। ঠিকাদাররা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো কম মূল্যের অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করছেন। প্রত্যেক হাসপাতালেই ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিটিভদের উৎপাত রয়েছে। চোরাই পথে সরকারি ওষুধ বিক্রি করারও অভিযোগ আছে।

সিভিল সার্জন ডা. মো. রফিকুল হাসান বলেন, জনবল ও চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। খুব শিগগির পঞ্চগড় জেলা শহরে নবনির্মিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বহুতল হাসপাতাল ভবনটি উদ্বোধন হবে। আমি গণপূর্ত বিভাগকে দ্রুত হাসপাতাল বুঝে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। আশা করছি পঞ্চগড়বাসির চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত যে চাহিদা রয়েছে তা এই হাসপাতালটি উদ্বোধন হলেই অনেকাংশেই লাঘব হবে।