দূরদেশে চলে গেলেন সাবেক এমপি জজ মিয়া

সংগৃহীত ছবি

দূরদেশে চলে গেলেন সাবেক এমপি জজ মিয়া

অনলাইন ডেস্ক

জনগণের ভোটে দু'বার এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি সংসদে পা রেখেছিলেন। এর আগে ছিলেন সাহসী সেনা কর্মকর্তা। তিনি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের এনামুল হক জজ মিয়া। একসময় প্রভাব আর সম্পদ থাকলেও জীবনের শেষবেলায় ছিলেন রিক্ত।

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরে নিবৃত্তে কাটছিল তাঁর দিবারাত্রি। শেষমেশ সময় ফুরাল। একেবারেই চলে গেলেন দূরদেশে।  

বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে গফরগাঁওয়ের সালটিয়া ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই লড়াকু।

বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বার্ধক্য ও নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। রেখে গেছেন স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়েসহ অনেক গুণগ্রাহী।

একসময় তাঁর হুঙ্কারে গফরগাঁওয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খেত। দাপুটে এমপি ছিলেন, কোনো দিন মানুষকে দিতেন না মিথ্যা আশ্বাস। হাজার হাজার লোককে চাকরি দিয়েছেন। গফরগাঁওয়ের উন্নয়নে কাজ করেছেন। কোনো দিন টাকার লোভ করেননি। অপরাধ করে তাঁর কাছ থেকে পার পায়নি কেউ।

এ সময় ভালোবেসে যাদের নামে জমি-সহায়সম্বল লিখে দিয়েছিলেন, তারাই তাঁকে ছুড়ে ফেলে দেয়। খাট কেনার সামর্থ্য ছিল না, তাই বৃদ্ধ বয়সে থাকতে হয়েছে মাটিতেই। হাত পেতে যা মিলত তা দিয়েই চলত সংসার।

রাজনীতিতে শক্তপোক্ত হলেও তাঁর বক্তিজীবন মোটেও গোছানো ছিল না। একসময় প্রথম স্ত্রী তাঁর কাছ থেকে সম্পত্তি লিখিয়ে নিয়ে এক মেয়েকে নিয়ে চলে যান আমেরিকায়। এর পর দ্বিতীয় স্ত্রী নাছিমা হকের সঙ্গেও হয় তাঁর বিচ্ছেদ। ঢাকার পুরানা পল্টন ও মিরপুর কাজীপাড়ায় তাঁর বিশাল দুটি বাড়ি দ্বিতীয় ঘরের দুই সন্তানকে লিখে দেন। স্থানীয়ভাবে যা ছিল তাও বিক্রি করে দেন।  

সর্বশেষে ১২ শতাংশ জমি একটি মসজিদের নামে লিখে দিয়ে নিঃস্ব হন তিনি। শেষবেলায় তৃতীয় স্ত্রী রুমা ও আট বছরের সন্তান নুরে এলাহীকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটিয়েছেন এরশাদ শাসনামলের দাপুটে এ সংসদ সদস্য।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরির সময় জজ মিয়ার সঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের পরিচয়। সে সময় জজ মিয়ার ব্যবহারে মুগ্ধ হন এরশাদ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এরশাদ তাঁর পালিত মেয়ে নাজমা আক্তারের সঙ্গে জজ মিয়ার বিয়ে দেন। পরে এরশাদ জজ মিয়াকে রাজনীতিতে যুক্ত করেন। জাতীয় পার্টির মনোনয়নে দু'বার গফরগাঁওয়ের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  

রাষ্ট্রপতির কন্যার স্বামী হওয়ায় জজ মিয়া ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাঁর কথাই ছিল গফরগাঁওয়ে আইন। ১৯৮৫ সালে গফরগাঁও সরকারি কলেজ মাঠে রাজনৈতিক সমাবেশে এনামুল হক জজ মিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, খায়হ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং গফরগাঁও কলেজকে সরকারি ঘোষণা করেন।

জজ মিয়ার ভাতিজা রেলওয়ে কর্মকর্তা নাদিম মাহমুদ সায়ের বলেন, 'আমার চাচা গফরগাঁওয়ের সম্পদ বেচে ঢাকায় বাসা করেন এবং তা আমার দ্বিতীয় চাচি ও চাচাতো বোনদের দিয়ে দেন। পরে যা সম্পদ ছিল তা দান করে দেন। আর্থিক কষ্টে শেষ জীবন পার করলেও পরিবারের সদস্যদের তিনি এড়িয়ে চলতেন। '

বুধবার বাদ জোহর পুখুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠে এবং বাদ আসর গফরগাঁও সরকারি কলেজ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে চর শিলাশী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে সাবেক এই এমপির দাফন সম্পন্ন হয়।

তাঁর মৃত্যুতে জাতীয় পার্টি ছাড়াও গফরগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহ্‌মী গোলন্দাজ বাবেল গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

news24bd.tv/কামরুল