ঘুমানোর সুন্নত

প্রতীকী ছবি

ঘুমানোর সুন্নত

জাওয়াদ তাহের

পর্যাপ্ত ও আরামদায়ক ঘুম আমাদের সক্রিয় ও সতেজ করে তোলে। আর মুুমিনের শয়ন ও স্বপন সবই ইবাদত বলে গণ্য হবে-যখন তা হবে প্রিয় নবী (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী।

নিম্নে ঘুমানোর সুন্নতগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

পবিত্রতার সঙ্গে ঘুম: প্রিয় নবী (সা.) যখনই ঘুমাতেন অজুর সঙ্গে ঘুমাতেন। মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে মুসলিম ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ও মহান আল্লাহকে স্মরণ করে রাত কাটায় (ঘুমায়) এবং রাতে জেগে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের দোয়া করে, আল্লাহ তাকে তা দান করেন।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪২)

এ ক্ষেত্রে যদি গোসল ফরজ হয়ে থাকে, তাহলেও কমপক্ষে অজু করে ঘুমানো।

ক্ষমা করে ঘুুমানো: ঘুমের আগে সবাইকে ক্ষমা করে ঘুমানো। হাদিসে এমন ব্যক্তিদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ এসেছে। এক সাহাবির ব্যাপারে রাসুল (সা.) তিন দিন জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল যে সে প্রতিদিন ঘুনানোর আগে সবাইকে ক্ষমা করে ঘুমায়। সে অন্তরে কোনো মুসলমানের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করত না। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, এ গুণ আপনাকে এত বড় মর্যাদায় উপনীত করেছে। আর সেটাই আমরা করতে পারি না। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব ৫/১৭৮)

অসিয়ত করে ঘুমানো: যদি কারো কাছে অসিয়তযোগ্য কোনো সম্পদ থেকে থাকে, তাহলে অসিয়ত করে ঘুমানো। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির কিছু অর্থ-সম্পদ আছে, আর সে এ সম্পর্কে অসিয়ত করতে চায়, সে মুসলিম ব্যক্তির উচিত হবে না অসিয়ত লিখে না রেখে দুটি রাতও অতিবাহিত করা। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪০৯৬)

লাইট বন্ধ করে ঘুমানো: জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন ঘুমাবে তখন বাতি নিভিয়ে দেবে, দরজাগুলো বন্ধ করবে, মশকের মুখ বন্ধ করবে, খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যাদি ঢেকে রাখবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় তিনি আরো বলেছেন, কমপক্ষে একটি কাঠ আড়াআড়ি করে পাত্রের ওপর রেখে দেবে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬২৪)

বিছানা ঝেড়ে নেওয়া: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, যদি তোমাদের কোনো ব্যক্তি শয্যা গ্রহণ করতে যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির ভেতর দিক দিয়ে নিজ বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে বিছানার ওপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কি না। তারপর পড়বে, হে আমার রব, আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠব। যদি আপনি এরই মধ্যে আমার জান কবজ করে নেন তাহলে, তার ওপর রহম করবেন। আর যদি তা আমাকে ফিরিয়ে দেন, তবে তাকে এমনভাবে হিফাজত করবেন, যেভাবে আপনি আপনার নেক বান্দাদের হেফাজত করে থাকেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩২০)

ডান দিক হয়ে ঘুমানো: বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাজের অজুর মতো অজু করে নেবে। তারপর ডান পাশে শুয়ে পড়বে...। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৭)

হাদিসে বর্ণিত দোয়া পাঠ করা

প্রতি রাতে নবী (সা.) বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে দুহাত একত্র করে হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব গোটা শরীরে হাত বোলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তাঁর দেহের সম্মুখ ভাগের ওপর হাত বোলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)

উপুড় হয়ে না ঘুমানো: আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জনৈক ব্যক্তিকে পেটের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বললেন, আল্লাহ তাআলা এ রকম শোয়া পছন্দ করেন না। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৭৬৮) এভাবে না ঘুমানোর কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলেছেন যে এভাবে জাহান্নামিরা উপুড় হয়ে পড়ে থাকবে। সে জন্য রাসুল (সা.) এটা থেকে বারণ করেছেন।

এশার আগে না ঘুমানো: আবু বারজা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) এশার আগে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৮)