ধর্ষণ মামলায় সাবেক এমপি আরজু কারাগারে 

সংগৃহীত ছবি

ধর্ষণ মামলায় সাবেক এমপি আরজু কারাগারে 

অনলাইন ডেস্ক

নিজের নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে তালাকপ্রাপ্ত এক নারীকে বিয়ে ও প্রতারণার ঘটনায় করা ধর্ষণ মামলায় পাবনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওরফে ফারুককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহারের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।  

এর আগে, ১৭ জানুয়ারি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহার আরজুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

২০২২ সালের ২২ এপ্রিল শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী আদালতে এ মামলা করেন।

ট্রাইব্যুনাল বাদীর জবানবন্দির পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের আদেশ দেন। অভিযোগ তদন্তের পর ঢাকা মহানগর উত্তর পিবিআই-এর পুলিশ পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মাদ সেলিম ট্রাইব্যুনালে গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগ সত্য মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ডিসেম্বর ২০০০ সালে বাদীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বাদী তখন নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছিলেন।

তখন বাদীর আত্মীয়-স্বজনেরা তাকে পুনরায় বিবাহ দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এক পর্যায়ে ২০০১ সালের শেষের দিকে বাদীর চাচা মোবারক হোসেন বাবুর মাধ্যমে আসামির সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে আসামি নিয়মিত বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন এবং একপর্যায়ে সফল হন।

আসামি বাদীকে জানান যে, তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন এবং তাঁর প্রথম পক্ষের ছেলে সন্তানকে বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে বাদীকে তার প্রতি দুর্বল করে ফেলে। বাদী সামাজিক নির্ভরতার জন্য এবং একাকীত্বের অবসানসহ নতুন সংসার শুরু করার মাধ্যমে আসামিকে মনে প্রাণে ভালোবেসে ফেলে এবং বিবাদীর বিবাহের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বিবাহ করতে মত দেন।

অতঃপর বিবাদীর ইচ্ছানুযায়ী গত ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আসামি তার পরিচিত কাজী নিয়ে বাদীর বড় মগবাজার ভাড়া বাসায় উপস্থিত হন। সেখানে বাদী তার চাচা মোবারক হোসেন বাবুর উপস্থিতিতে তাদের বিবাহ হয়। এরপর আসামি বাদিনীর সঙ্গে মগবাজারস্থ ভাড়া বাসায় এবং পরে মোহাম্মদপুরস্থ মোহাম্মাদি হাউজিং সোসাইটির ভাড়া বাসায় দাম্পত্যজীবন যাপন শুরু করেন। দাম্পত্যজীবনে বাদিনীর গর্ভে ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সন্তান গর্ভে আসার পর আসামি বিভিন্ন ছলছাতুরীর মাধ্যমে বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করে। কিন্তু বাদী দৃঢ়তার জন্য বাচ্চা নষ্ট করতে পারেনি। বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার পর আসামির আচার-আচরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করে। বাদীর বাসায় আসা কমিয়ে দেয়।

এর মধ্যে বাদীর নামে ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার কথা বলে বাদীর পিতার কাছ হতে নেওয়া ১০ লাখ টাকা এবং বাদীর জমাকৃত আট লাখ টাকা এবং বাদীর ১৫ ভরি ওজনের স্বর্ণলংকার বিক্রি করে, কিন্তু কোনো ফ্ল্যাট কিনে দেয়নি এবং কোনো প্রকার টাকাও ফেরত দেয়নি। একপর্যয়ে সে বাদীর বাসায় আসা বন্ধ করে দেয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন- আসামির প্রথম স্ত্রী জীবিত। সে ঘরে কন্যা সন্তান আছে। বিবাদী প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সংসারে বসবাস করে।

বাদী আরও জানতে পারেন যে, বাদীর কাছে ফারুক হোসেন নাম প্রচার করলেও প্রকৃতপক্ষে খন্দকার আজিজুল হক আরজু। মিথ্যা তথ্য ও পরিচয় দিয়ে বাদীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যই বাদীকে বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন। এরপর আসামি কয়েকবার নিজে এবং ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দ্বারা বাদীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করেন।

মামলার তদন্তে বাদীর কন্যা সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে কন্যা সন্তানটি বাদীর গর্ভজাত সন্তান এবং আসামি আজিজুল হক আরজু তার জৈবিক পিতা মর্মে মতামত এসেছে।

news24bd.tv/ইস্রাফিল