প্রাথমিক বৃত্তির সংশোধিত ফলাফল: কারো হাসি তো কারো কান্না

সংগৃহীত ছবি

প্রাথমিক বৃত্তির সংশোধিত ফলাফল: কারো হাসি তো কারো কান্না

অনলাইন ডেস্ক

গত মঙ্গলবার প্রথমবার প্রকাশিত হয় প্রাথমিক বৃত্তির ফলাফল যা পরে স্থগিত করা হয়। এর পরদিন প্রকাশিত হয় সংশোধিত ফলাফল। সংশোধিত ফলাফলে অন্তর্ভুক্তরা খুশিতে ভাসলেও তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অনেকেই।

বাংলা একাডেমির একজন কর্মকর্তা জানান, তাঁর মেয়ে এবার রাজধানীর উত্তরার একটি বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দিয়েছিল।

পরীক্ষাও ভালো হয়েছিল। গত মঙ্গলবার প্রথমবার প্রকাশিত ফল অনুযায়ী তখন তাঁর মেয়ে বৃত্তি পেয়েছিল; কিন্তু পরদিন বুধবার যখন সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে তাঁর মেয়ের নাম নেই। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। বুধবার রাতে কান্নাকাটি করেছে।
কাঁদতে কাঁদতে তার জ্বর চলে এসেছে।

রাজধানীর লালবাগের নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬০ শিক্ষার্থী। স্থগিত করা ফলাফলে বিদ্যালয়টি থেকে পাঁচজন বৃত্তি পেয়েছিল, যাদের সবাই মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুল)। বিদ্যালয়টির এক শিক্ষক জানান, এ নিয়ে তাঁদের মন খারাপ ছিল। তবে সংশোধিত ফলে তাঁদের বিদ্যালয় থেকে ১৭ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে, যাদের মধ্যে ১৬ জন মেধা কোটায়। আর একজন সাধারণ কোটায়। এখন তাঁরা খুশি।

শুধু এ দুটি ঘটনা নয়, সংশোধিত ফলাফলে সারা দেশেই এ রকম অনেক পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। এতে যারা বাদ পড়েছে, তারা হতাশ। আর যারা নতুন করে বৃত্তির তালিকাভুক্ত হয়েছে, তারা খুশি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সার্বিকভাবে এ ঘটনা একটি খারাপ নজির হয়ে থাকল। যা শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তবে সংশোধিত তালিকায় সারা দেশে মোট কতজন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে, সেই সংখ্যা জানাতে পারেননি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

শিক্ষাবিদদের পরামর্শ উপেক্ষা করে গত বছরের শেষ সময়ে আকস্মিকভাবে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর গত মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৃত্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। কিন্তু ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণ দেখিয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় এই ফল স্থগিত করা হয়। পরে বুধবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে স্থগিত করা ফলাফল পুনর্যাচাই করে প্রকাশ করা হয়।

প্রাথমিক বৃত্তির মোট কোটা ৮২ হাজার ৫০০টি। তবে এবার মোট ৮২ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। এর মধ্যে মেধা কোটায় ৩৩ হাজার ও সাধারণ কোটায় ৪৯ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে।

‘শিশুর ক্ষতির দায় নেবে কে’

সংশোধিত তালিকায় কোটা পরিবর্তনের ঘটনাও ঘটেছে। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, তাঁর মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ধানমন্ডি শাখা থেকে স্থগিত তালিকায় মেধা কোটায় বৃত্তি পেয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত তালিকায় তার নাম সাধারণ তালিকায় দেখানো হয়েছে। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন ‘আমাদের ব্যবস্থাপনার ত্রুটির জন্য আমার মেয়েসহ যেসব শিশুর ক্ষতি হলো, এর দায় নেবে কে?’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই ভুলের ঘটনা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) মোছা. নূরজাহান খাতুনের নেতৃত্বে একটি কমিটি তদন্ত করছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রগুলো বলছে, অধিদপ্তরের কারিগরি দলের ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ফলাফল তৈরির সময় একাধিক উপজেলার কোড একই হওয়ায় সমস্যাটি হয়েছে।

news24bd/ARH