পরিচালন স্বচ্ছতার অভাবে অপতথ্যের ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যম

সংগৃহীত ছবি

গবেষণার ফলাফল

পরিচালন স্বচ্ছতার অভাবে অপতথ্যের ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যম

বাবু কামরুজ্জামান

গ্লোবাল ডিজইনফরমেশন ইনডেক্স (জিডিআই)-এর সঙ্গে জোট বেঁধে “ডিজইনফরমেশন রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট: দ্য অনলাইন নিউজ মার্কেট ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডিজিটালি রাইট। দেশের ৩৩টি সংবাদ ওয়েবসাইটের ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যমে অপতথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি সম্পর্কে একটি সার্বিক মূল্যায়ন উঠে এসেছে।

আজ মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় এবং এর ফলাফল তুলে ধরা হয়।

গ্লোবাল ডিসইনফরমেশন ইনডেক্সের (জিডিআই) রিসার্চ ডিরেক্টর টালিয়া হেগার্টি, প্রথম আলোর ইংরেজি বিভাগের প্রধান আয়েশা কবির, চ্যানেল ২৪-এর নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, ঢাকায় এএফপি-র ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিজিটালি রাইটের প্রতিষ্ঠাতা মিরাজ আহমেদ চৌধুরি।

দেশের ৩৩টি নিউজ ওয়েবসাইটের ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদ বাজারে অপতথ্য বিস্তারের ঝুঁকি এবং গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় ও পরিচালনগত সক্ষমতার একটি চিত্র উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ডিজইনফরমেশন রিস্ক স্কোরে বাংলাদেশের সংবাদ সাইটগুলো সার্বিক বিচারে মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্পাদকীয় সক্ষমতায় স্কোর যেখানে ১০০ তে ৮৬, সেখানে পরিচালনগত স্বচ্ছতায় স্কোর হল মাত্র ২৯।

আর পরিচালনগত দুর্বলতার কারণে সার্বিক স্কোর ৫৮তে দাঁড়িয়েছে, যা জিডিআই গবেষণা পদ্ধতিতে মধ্যম পর্যায়ের ঝুঁকি বলে বিবেচিত।

এই মূল্যায়নে দেখা গেছে, ১৬টি সাইটের ক্ষেত্রে অপতথ্যের ঝুঁকি ছিল উঁচুমাত্রার এবং বাকিগুলোর ঝুঁকি ছিল মধ্যমমাত্রার। এর মধ্যে এমন মর্যাদাপূর্ণ সাইটও আছে, যারা তাদের স্বাধীন সংবাদ কাভারেজের জন্য সুপরিচিত। অবশ্য কোনো সাইটই সর্বোচ্চ ঝুঁকি রেটিং পাওয়ার মতো খারাপ করেনি, আবার কোনোটিই নিম্নঝুঁকির তালিকায় আসেনি।

গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশের সংবাদ সাইটগুলোতে অপতথ্য ঝুঁকির প্রধান উৎস হলো পরিচালনগত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব। পক্ষপাতমুক্ত, নিরপেক্ষ ও নির্ভুল সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে সব সাইটই ভালো স্কোর করেছে। কিন্তু ২৮টি সাইটে কোনো ধরনের নির্ভুলতা সংক্রান্ত নীতিমালা পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগ সাইটেই সম্পাদকীয় নীতিমালা ছিল না, যার মধ্যে প্রকাশনা পরবর্তী সংশোধনী, মন্তব্য সম্পাদনা, বাইলাইন তথ্য, তথ্য যাচাই এবং উৎসের ব্যবহার সংক্রান্ত নীতিমালাও রয়েছে। বিনিয়োগ ও মালিকানা কাঠামো সংক্রান্ত বিষয় তথ্য প্রকাশেও সাইটগুলো দুর্বল স্কোর করেছে।  

যেসব সম্পাদকীয় ও পরিচালনগত সীমাবদ্ধতার কারণে গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেগুলো প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়। সাংবাদিকতার বৈশ্বিক উত্তম চর্চাগুলোকে গণমাধ্যমের নিজস্ব পরিচালন ও সম্পাদকীয় কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করার স্বার্থে কয়েকটি সুপারিশও রয়েছে প্রতিবেদনটিতে।  

গবেষণাটি ফলাফল অনুযায়ী, জার্নালিজম ট্রাস্ট ইনিশিয়েটিভের মানদণ্ডে সাংবাদিকতার যে উত্তম চর্চাগুলোর কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশের সংবাদ সাইটগুলো সহজেই সেই বিষয়গুলো তাদের সম্পাদকীয় ও পরিচালন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে বলে এতে জানানো হয়।

প্রতিবেদনটির লক্ষ্যই হল, বাংলাদেশে গণমাধ্যমকে সাহায্য করা যেন তারা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত ও বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে। জিডিআই ও ডিজিটালি রাইট মনে করে, এই ঝুঁকি-নির্ধারণী কাঠামো বাংলাদেশের গণমাধ্যম নীতিনির্ধারকদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করবে, যা অপতথ্যের বিস্তার ঠেকাতে সহায়তা করবে।

news24bd.tv/SHS

সম্পর্কিত খবর