৫৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করে রীতিমত হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন বগুড়ার নজরুল ইসলাম ওরফে কালু কসাই। নিয়মিত বাজার দরের চেয়ে কমদামে মাংস কিনতে তার মাংসের দোকানে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতিদিন এখন ৭ থেকে ৮ টি গরু জবাই করে থাকেন।
জানা যায়, বগুড়া শহরে বিভিন্ন বাজারে আগে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও রমজান মাসে এসে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে গাবতলী উপজেলার কদমতলী তিনমাথা সিএনজি স্ট্যান্ড মোড়ে কালু কসাইয়ের মাংসের দোকান। নিয়মিত বাজার দরের চেয়ে ২২০ টাকা কেজিতে কম হওয়ায় স্থানীয়ভাবে এই মাংস ক্রেতা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। দিনদিন ক্রেতা বেড়ে যাওয়ার কারণে মাংসের চাহিদা বেড়ে গেছে।
বগুড়া শহরের রবিউল করিম জানান, লোকেমুখে শোনার পর কালু কসাইয়ের দোকান থেকে ৫ কেজি মাংস ক্রয় করেছেন। ৫ কেজি মাংসের দাম পড়েছে ২৯০০ টাকা। আর এই মাংস যদি শহর থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করা হতো তাহলে দাম পড়তো ৪০০০ হাজার টাকা। গরুর মাংস তো সবখানেই একই। শুধু দামের হেরফের। তিনি আরো জানান কালু কসাইয়ের দোকানে প্রচুর ভিড় থাকে। ভিড়ের মধ্যে কেউ কেউ মাংসই কিনতেই পারেন না।
মাংস ক্রেতা আলমাস মন্ডল জানান, প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি ৭ কেজি মাংস নিয়েছেন। দাম নিয়েছেন ৫৮০ টাকা কেজি করে। তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারে গেলেই এই মাংস আবার ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা অথবা ৮০০ টাকা কেজি কিনতে হতো। একটু অপেক্ষা করে হলেও কেজিতে ১০০ টাকা থেকে ২০০টাকা কমে মাংস পাওয়া গেল।
মাংস ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ওরফে কালু কসাই জানান, তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে গরুর মাংসের ব্যবসা করে আসছেন। নিজ এলাকায় দির্ঘদিন ধরে গরুর মাংস বিক্রি করে আসার এক পর্যায়ে ৩ বছর আগে স্থানীয় বাজারের ইজারাদারের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। একটি গরু জবাই করে বিক্রি করতে হলে ইজারাদারকে দিতে হবে ৪ হাজার টাকা। কালু কসাই এতে রাজি না হয়ে বাজার থেকে কিছু দূরে একটি মাংসের দোকান দেন। বাজার দরের থেকে কম দামে মাংসের দাম রেখে ক্রেতা টানতে থাকেন। শুরুতে ৫৬০ টাকা পরে ৫৫০ টাকা এবং এখন ৫৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। এই কম দামে মাংস বিক্রি করতে গিয়ে এখন তার প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ টি গরু জবাই করে মাংস আকারে বিক্রি করেন। প্রতিটি গরুর ২ থেকে ৩ মণ করে মাংস হয়ে থাকে। গড়ে প্রতিটি গরুর আড়াইমন করে মাংস ধরা হলে ৮টি গরুতে মাংস দাঁড়ায় ২০ মণ। কেজি হিসেবে প্রায় ৮০০ কেজি মাংস প্রতিদিন বিক্রি করে থাকেন। এখন তিনি কাউকে এক টাকাও খাজনা দেন না। ৫ থেকে ৬ জন শ্রমিক আছেন। তাদের দিন হাজিরায় বেতন দিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, একটি গরু জবাই এর পর গরুটির সকল মাংস একত্র করে বিক্রি করা হয়। শুধু মাত্র গরুর ভুড়ি ও পা টা আলাদা বিক্রি হয়। মাথাটা কেটে মাংসের মধ্যে মিশিয়ে বিক্রি করা হয়। যতদিন সুস্থ আছেন ততদিন তিনি কম দামে মাংস বিক্রি করে যাবেন। যেসব এলাকায় হাট-বাজারের টোল কম বা দিতে হয় না সেসব এলাকার কসাইরা ইচ্ছে করলেই কম দামে মাংস বিক্রি করতে পারেন। এতে করে ওইসব এলাকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ গরুর মাংস কিনতে পারবে। গরীব মানুষও মাংস খেতে পারবে। তিনি বলেন, ক্রেতাদের কাছে ভালো মানের গরুর মাংস বিক্রি করতে চান সবসময়। খুব বেশি লাভ করার দরকার নেই। গরু প্রতি কিছু কিছু লাভ হলেই তিনি খুশি। আর তা দিয়েই পরিবার নিয়ে তিনি সুখে থাকবেন।
কালু কসাইয়ের ছেলে কলেজ ছাত্র হোসাইন আল মাহমুদ জানান, এখন দূর দুরান্ত থেকে দোকানে মাংস ক্রেতারা আসছেন। ভিড়ের কারণে তাকে দোকানে বসতে হয়। হিসেব করে টাকা নিতে হয়। ৩০ কেজির বেশি মাংস কাউকে দেওয়া হয় না। কেউ এখান থেকে মাংস নিয়ে আবার খুচরা বিক্রি করবে সে সুযোগও দেওয়া হয় না। মাংসের দোকান শুরুর প্রথম দিকে তেমন সাড়া পাওয়া না গেলেও এখন প্রচুর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, যে ভাবে হাটে গরুর দাম বেড়েছে তাতে কতদিন যে এই দামে বিক্রি করা যাবে সেটা নিয়েই এখন চিন্তিত।