মনিপুরে কারফিউ জারি; দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ, বন্ধ ইন্টারনেট সেবা

সংগৃহীত ছবি

মনিপুরে কারফিউ জারি; দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ, বন্ধ ইন্টারনেট সেবা

অনলাইন ডেস্ক

গোষ্ঠী সংঘর্ষ ও বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ চেহারা নিয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুর। মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতি সম্প্রদায়ের তফসিলি জাতিভুক্ত হওয়ার দাবি নিয়ে গত দু সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত রয়েছে মণিপুর। পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই নামাতে হয়েছে সেনা। এর মধ্যেই ১০ জেলায় ট্রাইবাল সলিডারিটি মার্চ এর কারণে বুধবার রাত থেকেই মণিপুরের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় উত্তেজনা দেখা দেয়।

বিভিন্ন জায়গায় যুবকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর পরেই মণিপুরের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্যটির ৮টি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে মনিপুর প্রশাসন। গুজব প্রতিরোধে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয় আগামী পাঁচদিনের জন্য। একইসঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্রই গুলি করার নির্দেশও জারি করেছে মণিপুরের বিজেপি সরকার।

মণিপুরের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মৈতেই সম্প্রদায়ের। মৈতেই সম্প্রদায় বলছে যে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কারণে তারা রাজ্যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। একইসঙ্গে, বিদ্যমান আইনে তাদের রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় বসতি স্থাপনের অনুমতি নেই। সেই কারণে নিজেদেরকে উপজাতি/আদিবাসী ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে মেইটিরা। এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থও হয় তারা।  

গত ১৯শে এপ্রিল মণিপুরের হাইকোর্ট তাদের এসটি তালিকাভুক্ত করার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করার নির্দেশ দেয় মনিপুর রাজ্য সরকারকে। আর এর পরেই মূলত সমস্যার সূত্রপাত। আদালতের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পথে নামে সেখানকার একাধিক আদিবাসী সংগঠনের জোট অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টেস ইউনিয়ন অফ মনিপুর। ফলে গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরেই অচলাবস্থা তৈরি হয় মণিপুরের বিষ্ণুপুর ও চন্দ্রচুড়পুর জেলায় পাহাড়ি এলাকায়।  

মৈতেই সম্প্রদায়ের এই দাবির বিরোধিতায় মণিপুরের ১০ জেলাতেই উপজাতি/আদিবাসী ছাত্র সংগঠন মিছিল করে। আর এই মিছিল ঘিরেই শুরু হয় বিক্ষোভ-অশান্তি। পশ্চিম ইম্ফলের চানচিপুর এবং পূর্ব ইম্ফল জেলার সোইবাম লেইকাই এলাকায় প্রচুর বিক্ষোভকারী জমায়েত করে। চুরাচাঁদপুর জেলার টুরবং অঞ্চলে এই মিছিল পৌঁছতেই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। বিক্ষোভের আগুন নেভাতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে ব়্যাফ, সেনা, আধা সেনা ও অসম রাইফেলসের বাহিনী মোতায়েন করা হয় মণিপুরের বিভিন্ন এলাকায়। তারপরও ১৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অশান্তি বজায় রয়েছে মণিপুরের একাধিক এলাকায়। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে চুড়াচাঁদপুর, টেনুগোপাল, জিরিবাম, থৌবাল, বিষ্ণুপুর সহ আটটি জেলায় কারফিউ জারি করা হয়ছে।

পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে মণিপুরে শান্তি স্থাপনের জন্য অনুরোধ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও।

এর পরেই সর্বদল বৈঠক শেষে মণিপুরের ‘চরম কোন পরিস্থিতে, যখন বোঝানো, সতর্ক করা ও কম ফোর্সে ব্যবহার কাজে আসবে না, তখন ভারতীয় আইন সিআরপিসি, ১৯৭৩-এর আওতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হল৷

সমস্ত জেলার জেলাশাসক, সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট, একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা স্পেশাল একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতেই এই চরম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে সরকারি তরফে জানানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র  মন্ত্রণায়ের সূত্র জানানো হয়েছে মনিপুরে এখনও পর্যন্ত ৫ কলাম সেনা ও অসম রাইফেলের সেনা মণিপুরে মোতায়েন করা হয়েছে৷ ১৪ কলম সেনা আপাতত স্ট্যান্ড বাই রাখা হয়েছে৷ হিংসার কারণে প্রায় নয় হাজার মানুষ গৃহহীন অবস্থায় রয়েছে। তাদের অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জানা গেছে, শান্তি বজায় রাখতে ফ্ল্যাগ মার্চ করছে সেনা।

প্রসঙ্গত বেশ কয়েক দিন ধরেই মণিপুর অশান্ত। দিন দশেক আগে চুরাচাঁদপুরে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং এর সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরাম এর পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মনিপুর। মণিপুরের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ মূলত দুটি, প্রথমত রাজ্যের বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং জলাভূমির উপর বনবাসী জনজাতিদের চিরাচরিত অধিকার কেড়ে নেওয়া। আদিবাসী সম্প্রদায়ের আশঙ্কা, মৈতেই সম্প্রদায়কে আদিবাসী তকমা দেওয়া হলে তারা তাদের জমি ও সম্পদ দখল করে বসতি স্থাপন করবে। দ্বিতীয়ত, রাজ্যের গির্জাগুলির উপর লাগাতার হামলার ঘটনা। পাল্টা রাজ্য সরকারের দাবি, রাজনৈতিক উস্কানির কারণেই এমন অশান্তির ঘটনা ঘটছে। আদিবাসী জনজাতিদের ভুল বোঝানো হচ্ছে।
news24bd.tv/আলী