কক্সবাজারে আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ মানুষ

কক্সবাজারে আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ মানুষ

অনলাইন ডেস্ক

সাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল রূপ ধারণ করা ঘূর্ণিঝড় মোখার থাবা থেকে রক্ষা পেতে এবার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রমুখী। কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় কাউকে এবার আশ্রয় কেন্দ্রে জোর-জবরদস্তি করে নিতে দেখা যায়নি। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণার পরপরই ঝুঁকিতে থাকা লোকজন স্বেচ্ছায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। এমনকি শনিবার (১৪ মে) রাত ৮টা পর্যন্ত সময়ে কক্সবাজার উপকুলের ১ লাখ ৯০ হাজার ১০০ জন লোক আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন।

রাতের মধ্যে এ সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, শনিবার সকাল থেকেই জেলার ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পরিবেশ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক উপকূলীয় এলাকা জুড়ে মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আনা অব্যাহত রেখেছে। কক্সবাজারের ৮টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার এসব আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও জেলা শহরের অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেলকে প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

তিনি জানান, কক্সবাজার শহরের বিমান বন্দরের পশ্চিমে সাগর তীরে রয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। তাছাড়া শহরের পাহাড়ি ঝুঁকিতে থাকা বসবাসকারীদের সংখ্যাও লক্ষাধিক। জলোচ্ছ্বাস ও বর্ষণে পাহাড় ধস থেকে রক্ষার জন্য এসব এলাকার বিপুল সংখ্যক লোকজন আশ্রয় নিচ্ছে শহরের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রসহ হোটেলগুলোতে।

কুতুবদিয়া দ্বীপের কৈয়ারবিল ইউনিয়নের আইনার পাড়ার বাসিন্দা মুজিবুল হক শনিবার সন্ধ্যায় জানান, আমার ছোট মুদি দোকানের মালামালসহ এসে গেছি আশ্রয়কেন্দ্রে। বিশেষ করে চালের বস্তাগুলো আগে ভাগেই নিয়ে এসেছি। রাতে খেয়ে দেয়ে আমার পরিবারের লোকজনও এসে যাবে।

মহেশখালী দ্বীপের ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান রাতে কালের কণ্ঠকে জানান, আমার এলাকাটি সাগরের একদম তীরে অবস্থিত। জলোচ্ছ্বাস হলেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত  হবে আমার এলাকার মানুষ। তাই বিপদ সংকেত পেয়ে ইতিমধ্যে ৫-৬ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছে।

তিনি জানান, ধলঘাটা ইউনিয়নের ১৩ টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৬টি ব্যবহার উপযোগী থাকলেও ৫টি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। অপর ২টির মেরামত কাজ চলছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে অন্তত তিন হাজার বাসিন্দা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ইতিমধ্যে টেকনাফের মূল ভূখণ্ডে চলে এসেছেন। গতরাত পর্যন্ত দ্বীপের ৪ হাজারের বেশি মানুষ প্রশাসনের ঘোষিত ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন।

তিনি জানান, রাতের মধ্যে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। দ্বীপের ২টি সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল, আবাসিক প্রতিষ্ঠানসহ ২২টি দ্বিতল ভবন, ১৩টি সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ভবন মিলে মোট ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে দ্বীপবাসী অবস্থান নিয়েছেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া মানুষকে রান্না করা খাবার প্রদান করা হচ্ছে। প্রস্তুত রয়েছে জরুরি মেডিক্যাল টিম। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানও অব্যাহত রেখেছে। টেকনাফের শাহপুরির দ্বীপের ৭টি আশ্রয় কেন্দ্রেও কয়েক হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে।

দক্ষিণ পাড়ার আবদুর রহিম নামের এক ব্যক্তি জানান, রাতের খাবার খেয়ে আরো অনেক লোক আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে জানান, সাগর পাড়ের মানুষ ঝড়-ঝঞ্জার আঘাত খেয়ে এখন বলতে গেলে অনেক সচেতন। এ কারণে আবহাওয়ার বিপদ সংকেত পেয়েই স্বেচ্ছায় আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসেন। তবে গতকাল দুপুরে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত পাবার পর থেকেই লোকজনের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এত বিপুল সংখ্যক লোকের ভিড় জমেছে।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং সরকারের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গণমাধ্যকর্মীদের জানান, সেন্টমার্টিনসহ উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর বিষয়েও ভালো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ব্যাপারে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। তাদের সার্বক্ষণিক কাজে লাগানো হচ্ছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ভূমিধসের মতো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সরানোর কাজেও তাদের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছুদ্দৌজা নয়ন জানান, নড়বড়ে বস্তির রোহিঙ্গাদের কাছাকাছি স্কুল-মাদ্রাসাসহ ক্যাম্পের সরকারি প্রতিষ্ঠানে তাদের আশ্রয় নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রবল বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের মতো পরিস্থিতি হলেও রোহিঙ্গাদের নিরাপদে সরানোরও ব্যবস্থা রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের মুল কেন্দ্র যেহেতু কক্সবাজার, তাই আমরা এখানে প্রাণহানি রোধসহ ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য সচেষ্ট রয়েছি। দুর্যোগ থেকে যেভাবে বাঁচানো সম্ভব তার সবই করা হচ্ছে।

অপরদিকে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসন সহ অন্যান্য সংস্থার সাথে পুলিশ মাঠে রয়েছে। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে না তাদের বুঝিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো নিশ্চিত করবে পুলিশ।

এদিকে, মোখার প্রভাবে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। সকাল থেকে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। উপকূলে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট জোয়ারের পানি বেড়েছে। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে হালকা বাতাস শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হচ্ছে।

news24bd.tv/আইএএম