মোখার আঘাতে বিবর্ণ সেন্টমার্টিন, চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

সংগৃহীত ছবি

মোখার আঘাতে বিবর্ণ সেন্টমার্টিন, চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

অনলাইন ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় মোখা রোববার উপকূল অতিক্রম করার পর তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য পওয়া যায়নি। তবে আস্তে আস্তে এর আঘাত ক্ষত চোখে পড়ছে। মোখার আঘাতে সেন্টমার্টিনে কয়েকশ’ ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। কাঁচা-আধাপাকা ঘর তছনছ হয়ে গেছে।

এদিক-সেদিকে গাছ-ডালপালা পড়ে আছে।

সেন্টমার্টিন যাত্রী পরিবহন সার্ভিস বোট সমিতির সভাপতি রশিদ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম পাশ দিয়ে মিয়ানমারের দিকে গেছে, এটা আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। না হয় এবার বাতাসের যে ভয়ংকর গতি দেখেছি, তা এর আগে কখনো চোখে পড়েনি। ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় দেখার অভিজ্ঞতাও আমার রয়েছে।

ভাটার টানের কারণে জলোচ্ছ্বাস না হওয়ায় দ্বীপ ও দ্বীপের মানুষ ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। ’

রশিদ আহমেদ বলেন, ‘সাধারণত সেন্ট মার্টিনের মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে যায় না। তবে এবার টিভি এবং সামাজিক মাধ্যমে সেন্ট মার্টিনের জলোচ্ছ্বাস নিয়ে বারবার সতর্ক করার কারণে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে। এ কারণে জলোচ্ছ্বাস না হলেও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানের কারণে ভাঙা গাছ কিংবা উড়ে আসা টিনে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ’ তাঁর ধারণা, দ্বীপের আড়াই হাজার ঘরবাড়ির মধ্যে ৭০০টির মতো পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। বাকিগুলো কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডেইলপাড়া, দক্ষিণ ও পূর্বপাড়া।

পুরো দ্বীপে কড়ই, আম, নারিকেলগাছ উপড়ে ও ভেঙে পড়ার ক্ষতচিহ্ন দৃশ্যমান। মানুষের ঘরবাড়ি কিংবা ভাঙা গাছগুলো পড়ে যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। গাছ কেটে চলার পথ উন্মুক্ত করতে দেখা গেছে অনেক এলাকায়।

ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও সোমবার দুপুর পর্যন্ত প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের সহায়তা মেলেনি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। অবশ্য দুপুর সোয়া ১টায় স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারের স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি স্পিডবোটে করে সেন্ট মার্টিনে যান। পরে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দ্বীপটির প্রায় এক হাজার ৮০০ নারী-পুরুষকে নগদ অর্থ সহায়তা হিসেবে ১০ লাখ টাকা বিতরণ করেন বলে জানান স্থানীয় চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।

সেখানকার একজন মো. রেণু মিয়া (৭০)। তিনি জানান, তিন ছেলে, নাতি-নাতনি মিলে তাঁর ১১ জনের সংসার। দোতলা গাছের ঘরের টিন উড়ে গেছে। তিন দিন ধরে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়ে আছেন। কবে মেরামত করে নিজের ঘরে ফিরবেন সেটা জানেন না। প্রশাসন থেকেও ঘর মেরামতে আর্থিক সহায়তার কোনো আশ্বাস মেলেনি।

জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি আব্দুর রহমান বদি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ক্ষতিগ্রস্তদের তাত্ক্ষণিক সহায়তা হিসেবে নগদ অর্থ দিতে এসেছি। এর পর প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নেবে। ’ তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিনে ৩০০ থেকে ৩৫০টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। বাকিগুলো কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে ৮ নম্বর ওয়ার্ড কোনারপার এলাকায় সেন্টমার্টিন ক্রিড প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের সেমিপাকা স্কুলঘরটির টিনের ছাদ উড়িয়ে নিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। স্কুল কমিটির সভাপতি মো. ইসহাক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্কুলটিতে প্রায় আড়াইশ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। সামনে বর্ষাকাল। তার আগেই স্কুলের ছাদ মেরামত করা না গেলে ক্লাস শুরু করা যাবে না। ’

ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

সেন্ট মার্টিনের পরে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে শাহপরীর দ্বীপে। সেখানকার জালিয়াপাড়ার বেড়িবাঁধের বাইরে নাফ নদের তীরে বসবাসরত পরিবারগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া শাহপরীর দ্বীপের অন্য এলাকায় ১০টির মতো ঘর ভেঙেছে। সব মিলিয়ে এই দ্বীপে শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙেছে। অনেক গাছপালা ভেঙে গেছে।

শাহপরীর দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ভাঙা বেড়া মেরামতসহ উপড়ে পড়া গাছপালা কাটতে শুরু করেছে। অর্থাভাবে অনেকে ধারদেনা করে কাজগুলো সেরে নিচ্ছে। নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষ এখনো এসবে হাত দিতে পারেনি।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য মাস্টার জাহেদ হোসেন বলেন, এখানকার প্রতিটি বাড়িঘরে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়নি এমন কোনো পরিবার নেই। যেকোনো পরিবারে ক্ষতির পরিমাণ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার কম না। কোনো কোনো পরিবারে ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশি। দ্রুতগতিতে এসব মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছানো দরকার।

শাহপরীর দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন জানান, সরকারের ত্রাণের আশায় বসে থাকলে অনেক পরিবারকে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে, রান্নাবান্না করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া ঘেরাবেড়াও এভাবে ফেলে রাখা যাচ্ছে না। তাই তারা টাকা না থাকলেও ধারকর্জ করে হলেও দ্রুত এসব মেরামত করে নিচ্ছে। তারা পরবর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারি সাহায্য বরাদ্দ দিলে নগদ অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান।

শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘নিজের কাছে কোনো টাকা পয়সা নেই। এক আত্মীয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে বাঁশ-টিন কিনে আগে নিজের মাথা গোঁজার জায়গাটুকু প্রস্তুত করছি। আমাদের জন্য সাহায্য দিলে যেন নগদ টাকাই দেওয়া হয়, অন্তত দেনা শোধ করতে পারব। ’

news24bd.tv/আইএএম