কঠিন সমীকরণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন 

সংগৃহীত ছবি

কঠিন সমীকরণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন 

অনলাইন ডেস্ক

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই অনুমান করা যাচ্ছিলো দ্বিতীয় দফায় যাবে নির্বাচন। ভোট গণনা শেষে হয়েছেও তাই। কোনো প্রার্থীই এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দফার ভোটে ৪৯ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিকদারগলু পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ ভোট। আর নির্বাচনের তৃতীয় প্রার্থী সিনান ওগান পেয়েছেন ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট। সিনান ওগানের জন্যই বাকি দুই প্রার্থী পৌঁছাতে পারেননি নির্ধারিত ৫০ শতাংশ ভোটে। কারণ তাকে দেশটির ৫ শতাংশেরও বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন।

দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে কে সফল হবেন তা নির্ভর করছে বেশ কয়েকটি সমীকরণের ওপর। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন ৫ শতাংশ কট্টর জাতীয়তাবাদী প্রার্থী সিনান ওগান। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তিনি কোন প্রার্থীকে সমর্থন দিবেন, তার ভোটাররা তার কথা মানবে কি না- এসব বিষয়ের ওপর চূড়ান্ত ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করবে।  

আগামী ২৮ মে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এইসময়ে দুই প্রার্থীর সঙ্গে আলোচনা হবে সিনান ওগানের। সমর্থনের জন্য কি শর্ত দিবেন তিনি আর এরদোয়ান এবং কিলিকদারগলুর মধ্যে কে সেই শর্ত মেনে নেবেন সেটাও দেখার বিষয়। সোমবার সিনান ওগান বলেন, এই মুহুর্তে আমরা কাকে সমর্থন দিবো সেটা নিশ্চিত নই। তবে যারা থেকে দূরে না থাকে তারা যেন আমাদের কাছে না আসে।  

সোমবার (১৫ মে) এক সাক্ষাৎকারে সিনান বলেন, ‘এ মুহূর্তে, আমরা বলছি না এই প্রার্থী বা ওই প্রার্থীকে সমর্থন জানাব। তবে যারা সন্ত্রাসবাদীদের কাছ থেকে দূরত্ব রাখে না তাদের আমাদের কাছে আসা উচিত নয়। ’

সিনান যে ‘সন্ত্রাসীদের সঙ্গে দূরত্বের’ কথা বলছেন এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সিনানের মতো জাতীয়তাবাদীদের চোখে এরদোয়ান এবং কেমাল দুইজনের সঙ্গেই ‘সন্ত্রাসীদের’ সখ্যতা রয়েছে। সন্ত্রাসী বলতে তুরস্কের কুর্দি দলগুলোর কথা বুঝিয়েছেন তিনি

কেমালকে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সমর্থন দিয়েছিল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এইচডিপি)। এই দলটিকে কুর্দিদের দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সহচর হিসেবে ধরা হয় এইচডিপিকে।

তুরস্কের বিরুদ্ধে গত ৩৯ বছর ধরে সশস্ত্র আন্দোলন করে আসছে পিকেকে। এই আন্দোলনে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। তুরস্ক, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবাই পিকেকে সন্ত্রাসী দল হিসেবেই দেখে।

অপরদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে পার্টি) কুর্দি ইসলামিক দল হুদা-পারের সমর্থন পেয়েছে। একে পার্টির ব্যানারে এবার হুদা-পারের তিনজন রাজনীতিবিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

হুদা-পারের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্ক রয়েছে কুর্দি দল হিজবুল্লাহর। যেটি ১৯৯০ সালের দিকে পিকেকে ও তার্কিস পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালাত। (তুরস্কের হিজবুল্লাহর সঙ্গে লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর কোনো সম্পর্ক নেই)।

এরদোয়ান নাকি কেমাল কাকে সমর্থন দেবেন সিনান ওগান?

ওগানের ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) সাবেক পরামর্শক মুরাত ইলদিজ বলেছেন, ওগান প্রথমদিন থেকেই পরিষ্কার করেছেন, যে দল সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে দূরে থাকবে তাকেই তিনি সমর্থন জানাবেন।

তিনি বলেছেন, ‘ওগান কেমাল কিলিকদারোগলুকে বলবেন তাকে কথা দিতে হবে, কিছু বিষয়ে তিনি কুর্দি দল এইচডিপির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখবেন। কিন্তু এরদোয়ানের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি কঠিন হবে। কারণ তিনি ইতোমধ্যে হুদা-পারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ’

ইস্তাম্বুলের সাবাঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক বের্ক এসেন বলেছেন, ‘জাতীয়তাবাদী দল আইই পার্টির কেমালের একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই দূরত্বের কারণে জাতীয়তবাদী তার্কিসরা কেমালকে ভোট দেননি। ’

তিনি আরও বলেছেন, ‘কিছু তার্কিস বিশেষভাবে এরদোয়ানকে পছন্দ করেন না, অপরদিকে তারা আবার কুর্দি বিরোধী। এরদোয়ানকে পছন্দ না করলেও তারা কেমালকে ভোট দেননি কারণ তার সঙ্গে কুর্দিদের সখ্যতা রয়েছে।

এখন দেখার বিষয় ওগান কাকে সমর্থন জানান। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রান-অফ নির্বাচনে ওগানের সমর্থকরা ভোট দেবেন কিনা এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। এছাড়া ওগান তার সমর্থকদের যে নির্দেশনা দেবেন সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তারা ভোট দেবেন কিনা সেটি নিয়েও সংশয় আছে।

news24bd/ARH